অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ঝিনাইদহে পুলিশের হয়রানীতে অতিষ্ঠ যুবকের আত্মহত্যা!

0
toriqul-photo-jhenidah
নিহত নিরাপরাধ কিশোর তরিকুল।

ঝিনাইদহ (খুলনা) প্রতিনিধিঃ
কোন মামলা মোকদ্দমা ছিল না এতিম ঝিনাইদহের তরিকুল ইসলামের নামে। তারপরও বাড়িতে পুলিশের উৎপাত। একের পর এক পুলিশের তাড়া খেয়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে তরিকুল। শেষ পর্যন্ত অস্ত্র মামলা ও ক্রসফায়ারের ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেচে নেয় সে। মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদরক ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খড়েমান্দারতলা গ্রামে।

পরিবারের অভিযোগ গত ১৭ অক্টোবর দুপুরে বাড়িতে ভাত খেতে বসে তরিকুল। এ সময় বাড়িতে পুলিশ আসে। পুলিশের তাড়া খেয়ে ওই দিনই সে আত্বহত্যার পথ বঁচে নেয়। এলাকার মেম্বর আনিচুর রহমানসহ প্রায় দুই শতাধিক মানুষ্বিএর বিচার চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

আত্মহননকারী তরিকুল ইসলামের চাচা দুদু খন্দকার জানান, তরিকুলের বয়স যখন তিন বছর তার তার বাবা শুকুর আলী মারা যান। আর ৮ বছর বয়সে মারা যান মা সুফিয়া খাতুন। তিনিই বড় করে তুলেছেন ভাতিজা তরিকুলকে।

দুদু খন্দকার জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাদের গ্রামের মৃত সামছুল হক দেওয়ানের ছেলে জাকির হোসেন দেওয়ানকে তারই ভাই কামাল হোসেন দেওয়ান ও ভাতিজা মিজানুর রহমান মারপিট করে।

এ সময় তরিকুল ইসলামসহ গ্রামের বেশ কয়েকজন তাদের মারামারি ঠেকাতে যায়। কামাল হোসেন দেওয়ান গ্রামবাসীর বাঁধায় আপন ভাইকে ঠিকমতো মারতে না পেরে ক্ষিপ্ত হন। পরে তিনি তরিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনের নামে মহেশপুর থানায় অভিযোগ করেন।

এই অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না হলেও পুলিশ বেশ কয়েকবার তরিকুল ইসলামকে আটকের জন্য বাড়িতে হানা দেয়। এরপর তরিকুল পালিয়ে থাকতে শুরু করে।

পুলিশ তরিকুল ইসলামকে ধরতে একের পর এক অভিযান চালায়। গত ১৭ অক্টোবর দুপুরে তরিকুল ইসলাম নিজ বাড়িতে খাবার খেতে বসেছিল। তখন মহেশপুর থানা থেকে কয়েকজন পুলিশ এসে তাকে ধরতে তাড়া করে। সে ভাত ফেলে রেখে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পুলিশের এই তাড়ার ২ ঘন্টা পর অতিষ্ট তরিকুল ইসলাম কীটনাশক পান করে আত্বহত্যা করে।

দুদু খন্দকার জানান, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ বার পুলিশ আসে তরিকুল ইসলামের বাড়িতে। গ্রামের ওই দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির চাপে পুলিশ একের পর এক এই হানা দেয়। যে কারনে তার এতিম ভাতিজা আত্বহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রভাবশালী কামাল হোসেন দেওয়ানের ছেলে মিজানুর রহমান জানান, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা। তাদের সঙ্গে তরিকুল ইসলামের যে সামান্য গোলমাল হয়েছিল তা নিয়ে তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিল।

থানা থেকে এক এসআই এসে বিষয়টি গ্রামে বসে মিটিয়ে নেবার জন্য বলেন। তারা সেটাই মেনে নিয়েছিলেন। তাদের বিষয় নিয়ে তরিকুল আত্বহত্যা করেনি। একাধিকবার তরিকুলের বাড়িতে পুলিশ যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, খবির উদ্দিন এসআই তাদের বলেছিল ওর নামে অন্য দুইটি সন্ত্রাসী মামলা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, গ্রামের আরেক মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমানও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল। মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান জানান, তাকে লাঞ্চিত করেছিল তরিকুল।

যে কারনে তিনি অভিযোগ দিয়েছিলেন। তার বিষয়টিও গ্রামে মিটিয়ে নেওয়ার পর্যায়ে ছিল। এরপরও কেন আত্বহত্যা করলো সে প্রসঙ্গে বলেন, পুলিশ তরিকুলের বাড়িতে গেলে তারই চাচা দুদু খন্দকার তার ঘর দেখিয়ে দেন। এতে মনের কষ্টে সে আত্বহত্যা করে।

বিষয়টি নিয়ে মহেশপুর থানার এসআই খবির উদ্দিন জানান, তরিকুল ইসলামের নামে কোনো মামলা হয়নি। তিনি একটি অভিযোগ পেয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। গ্রামে গিয়ে বিষয়টি স্থানিয়ভাবে মিটিয়ে নিতে বলেন।

ঘটনার দিন যাওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। স্থানিয় নাটিমা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ জানান, ঘটনাটি খুবই দূঃখজনক। একের পর এক পুলিশের তাড়া খেয়ে একটি এতিম কিশোর আত্বহত্যা করতে বাধ্য হলো এটা ভাবাই যায় না। একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম জানান, এভাবে পুলিশ দিয়ে মানুষ তাড়িয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া খুবই দূঃখজনক।