অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ফটিকছড়িতে কাজ না করেই সরকারী ২৩ প্রকল্পের ৩৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

0
1437048022
.

কাজ না করেই সরকারী ২৩ প্রকল্পের ৩৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ফটিকছড়ির দাঁতমারা ইউপি চেয়ারম্যনের বিরুদ্ধে। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার যোগসাজসে ভূয়া মাস্টার রুল তৈরি করে এসব টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগে জানা যায়।

এনিয়ে স্থানীয় খোদ সরকারী দলের নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জনসেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত একজন জন প্রতিনিধির এ ধরনের কর্মকান্ড রীতিমত হতবাক করেছে স্থানীয় জনসাধারনকে।

এ নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন উক্ত ইউপির বর্তমান দুই নির্বাচিত সদস্য। তাঁরা এ বিষয়ে সুষ্ট তদন্ত দাবী করেছেন প্রশাসনের কাছে। অভিযোগের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসকসহ সরকারী ১৪টি দপ্তরে।

ইউনিয়নের ২ ও ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য যথাক্রমে সুব্রত দে ও আনোয়ার হোসেনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষনাবেক্ষন(টিআর) কর্মসুচীর আওতায় ফটিকছড়ি উপজেলায় ৬৯টি প্রকল্পের জন্য ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৪ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে ৪৬টি প্রকল্পই দাঁতমারা ইউনিয়নে দেয়া হয় ।

এ ছাড়া উক্ত ৪৬ প্রকল্পের ২৩টি হচ্ছে ইউনিয়নে বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প। ইউনিয়নের ২৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প বাবদ ৭৯ হাজার ৭৮২টাকা করে প্রত্যেকটির জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

এ ছাড়া বাকী প্রকল্প গুলোতে কোনটি ফোরকানিয়া মাদরাসার উন্নয়ন আবার কোনটি রাস্তা ব্রিজ বা কবরস্থানের উন্নয়ন প্রকল্প নামে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে গত ২২ জুন ফটিকছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম উপজেলার প্রশাসনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক আইডিতে একটি গনবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।

যাতে উপরোক্ত প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করে প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগনের তদারকি করণ এবং কোন ধরনের অসঙ্গতি দেখলে তা সরাসরি বা যে কোন মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়।

এ জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর ও ইমেইল আইডিও দেয়া হয়। বিপত্তি দেখা দেয় এখানেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এ ঘোষনা পাওয়ার পরই সচেতন হয় এলাকার লোকজন।

এদিকে সরকারী এ প্রকল্প বরাদ্দ পাওয়ার পর চেয়ারম্যান জানে আলম তাঁর সাবেক সচিব এমরান ও উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার যোগসাজসে কোন কাজ না করেই প্রকল্পের সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

প্রকল্প জায়েজ করতে তিনি গত ১৭ আগষ্ট ইউনিয়নের ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ইউপি কার্যালয়ে ডেকে প্রত্যেক স্কুলকে মাত্র ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করেন। ইউনিয়নের এসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগন প্রকল্পের বিষয়ে অবহিত হওয়ার পর কেউ কেউ চেয়ারম্যানের কাছে প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেন প্রকল্পের টাকা গুলো বড় কর্মকর্তারা কেটে রেখে দিয়েছেন।

এদিকে ২৩টি স্কুলের কোনটিতেই সরকারী বরাদ্দকৃত ৭৯ হাজার টাকার কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। সরেজমিন বেশ কয়েকটি স্কুল পরিদর্শনকালে এ ধরনের কোন প্রকল্পের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়নি। এ ছাড়া বাকী প্রকল্প গুলোর ও একই অবস্থা।

ইউনিয়নের নিচিন্তা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুব্রত দে বলেন, ৭৯ হাজার টাকার সরকারী কোন টিআর প্রকল্প উক্ত বিদ্যালয়ে বাস্তবায়িত হয়নি। চেয়ারম্যান মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। একই কথা বলেছেন ধূলিয়াছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মুজিবুল হক মজুমদার।

এছাড়া দাঁতমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তালেব বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব আমাদেরকে ডেকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছেন যা তিনি স্কুল পরিচালনা কমিটিকে অবহিত করে প্রাক প্রাথমিক শ্রেনী কক্ষের মেরামত কাজ করিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চেয়ারম্যান জানে আলমের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।