অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

কক্সবাজার আবাসিক হোটেলে গলাকাটা বাণিজ্য

0
.

চলছে শীতকালীন অবকাশ। ইংরেজি নববর্ষকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণসহ জমকালো বীচ কার্নিভালকে সামনে রেখে কক্সবাজার পর্যটন শহর এখন পর্যটকে টইটুম্বুর। থার্টি ফাস্টনাইটে ৩ লাখ পর্যটক আগমন ঘটবে এমনটাই আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটন নগরীর হোটেল-মোটেল ও গেষ্ট হাউসগুলো রুম ভাড়ার মুল্য তালিকা টাঙ্গানোর নির্দেশনা জেলা প্রশাসন দিলেও মালিকপক্ষ তা পদে পদে লঙ্গন করছে। এখানে যে যার মতো পর্যটকদের নিয়ে গলাকাটা বাণিজ্য করে যাচ্ছেন।

পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিষ্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করলেও গলাকাটা বাণিজ্য থামাতে পারছেন না জেলা প্রশাসন। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। পর্যটন এলাকার ছোট-বড় চারশতাধিক আবাসিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজের কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে যাওয়ার অজুহাতে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী এখনকার সুনাম ক্ষুন্ন করছে প্রতিনিয়ত। ৫‘শ টাকার রুম ভাবে নিচ্ছে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা। যা পর্যটন শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য হোটেল মালিকরা দাবী করছেন আট মাস ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় তা চার মাসে তুলতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া দোষের কিছু নেই।

.

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৫’শ হোটেল ও রেস্তোঁরা রয়েছে। এসব খাবারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে পঁচা-বাশি খাবার। পর্যটনের ভরা মৌসুমে খাবার হোটেলগুলোতেও চরম নৈরাজ্যকর পরিবেশ বিরাজ করায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে পর্যটকরা। এছাড়াও অসাধু গাড়ী চালক ও মালিকরা সুযোগ বুঝে মাইক্রোবাস, নোয়া, টমটম, রিক্সা ও সিএনজিসহ সাধারণ যাত্রী পরিবহণ সমূহে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। যাত্রীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে দ্বিগুন তিনগুন ভাড়ার টাকা। এ কারণেও দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে কক্সবাজারের মান ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি ক্ষুব্ধও হচ্ছেন তারা। পর্যটক আগমণ যেন কক্সবাজারবাসীর জন্য ‘অভিশাপ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হোটেল, রেস্তোঁরা ও পরিবহনসহ প্রায় জায়গায় পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

কয়েকজন পর্যটক জানান, পর্যটন মৌসুমে হোটেল মোটেল ও রেস্তোঁরায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় প্রকাশ্যে চলছে। বিশেষ করে কলাতলী কেন্দ্রীক হোটেল ও রেস্তোঁরাগুলোতে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চালানো হচ্ছে গলাকাট বাণিজ্য।

.

তারা জানান, অফ সিজনে যেসব কটেজে সাধারণত ২’শ টাকা রুম ভাড়া নেয়া হয় সে সব কটেজে ২ হাজার থেকে চার হাজার টাকারও উপরে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অধিকাংশ রেস্তোঁরায় বিরানীর নামে পঁচা-দূর্গন্ধযুক্ত খাবার বিক্রি করে পর্যটকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। তবে এ জন্য প্রশাসনের দূর্বলতাকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগী পর্যটকরা।

ফেনী হতে বেড়াতে আসা আমানত উল্লাহ অভিযোগ করেন, রবিবার রাতে আমরা কক্সবাজারে পৌঁছি। এরপর ‘আরমান কটেজ’ নামে একটি বাসায় বাধ্য হয়ে ২৫০০ টাকায় রুম ভাড়া নিই। রুমটিতে ঢুকে দেখি একটি ছোট চৌকি ছাড়া আর কিছুই নাই। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে রাত যাপনের পরিবেশ না থাকলেও কোন রকম রাত কাটিয়ে দিই।’

.

কুমিল্লা থেকে আসা আব্দুল বাসেত নামে আরেক পর্যটক জানান, ‘এলাকার নামে রেস্তোঁরা দেখে ঢাকা রেস্তোরা থেকে আমরা দুই জনের জন্য দুইটি বিরানির প্যাকেট ৩০০ টাকায় কিনে নিই। কিন্তু পঁচা ও বাশি গন্ধের কারণে ‘স্বাদের বিরানী’ খাওয়া সম্ভব হয়নি।

একই কথা জানালেন ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কৌশিক। তিনি বলেন, ‘এবারে কক্সবাজার বেড়াতে এসে মহাঝামেলায় পড়ে গেলাম। টাকা এনেছি সীমিত, খরচের হিসাব দ্বিগুন। রুম ভাড়া নিতে গিয়ে প্রথমে ‘রুম খালি নাই’ জবাব দিলেও পরে টাকা বাড়িয়ে দিলে হোটেল ম্যানেজার রুম বরাদ্ধ দিল। বেড়ানোর জন্য সিএনজি-টমটমে উঠতে গিয়ে ’রিজার্ভ ভাড়া’ না দিলে গাড়ীওয়ালা চাকা ঘুরায়না। এ যেন মহা বিপদ। কক্সবাজারে বেড়াতে এসে এরকম যন্ত্রণায় আর কোন সময় পড়িনি।’

কলাতলি সৈকতপাড়া এলাকার সোহাগ গেষ্ট হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বজল আহম্মদ বলেন, পর্যটন শহরে কোন হোটেল মোটেল গেষ্ট হাউসে রুম ভাড়ার কোন মুল্য তালিকা টাঙ্গানো হয় না। কারণ পর্যটন এলাকায় ব্যবসা চলে মাত্র ৪ মাস। আর বাকী ৮ মাস ব্যবসায়িরা লোকসানগুনেন। তাই পুরো বছরের ক্ষতির টাকা তুলতে ৪ মাস যারন যেমন ইচ্ছে রুম ভাড়া আদায় করেন।

রুম ভাড়ার মুল্য তালিকা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেটরা আনসিজনে অভিযান চালান না। কিভাবে হোটেল ব্যবসায়িরা চলছে তাও খবর রাখেন না।

.

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি ওমর সোলতানের মতে, শহরের আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও সরকারী রেস্ট হাউসে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। পুরো ডিসেম্বর মাস জুড়েই আবাসিক হোটেল গুলোতে শতকরা ৭০ ভাগ কক্ষ ভরপুর ছিল। বড়দিন মিলে টানা তিনদিনের জন্য প্রায় সব হোটেলের কক্ষই অগ্রিম বুক হয় আরও কয়েকমাস আগেই। এ অবস্থায় বছরের শেষ দিনগুলোতে এবং নতুন বছরের শুরুতে লাখো পর্যটকে মুখর থাকবে কক্সবাজার।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এইচ এম রায়হান কাজেমী বলেন, আবাসিক হোটেলসমূহ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নেয়া হচ্ছে। অনেক হোটেলে সিসি ক্যামরা লাগানো হয়েছে। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম। রয়েছে সাদা পোশাকধারী টহল দল।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেনের বলেন, পর্যটকদের হয়রানি বন্ধে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরায় মূল্য তালিকা টাঙ্গানোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। এসব তদারকিতে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তার পরেও ব্যবসায়ীরা অনেক সময় এগুলো মানতে চায় না। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।