অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

অ্যালেক্সা র‌্যাংকিং কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

2
.

বিভিন্ন ওয়েব সাইটের র‌্যাংকিং নির্ণয় ও প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালেক্সার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী অ্যালেক্সা বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে শুরু করেছে গত বছর থেকে। যে হাওয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইট জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইয়াহুর ওপরে চলে গেলে অ্যালেক্সা র‌্যাংকিংয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে বিভিন্ন মহল থেকে।

এছাড়া উইকিপিডিয়ার অবস্থান দৈনিক কালের কণ্ঠের নিচে চলে যাওয়া এবং বিডি২৪লাইভ, বিডিজবস, টেলিটকের নিচে বিডিনিউজের অবস্থানকে অনেকেই ভুতুড়ে হিসেবে দেখছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অ্যালেক্সা কৌশলের পাশাপাশি কিছু ‘অপকৌশল’ গ্রহণ করায় এমনটা হচ্ছে। এই ভাবনার পেছনে যথেষ্ট কারণও খুঁজে পেয়েছেন সমালোচকরা।

অ্যালেক্সা সাধারণ পদ্ধতির পাশাপাশি চালু রেখেছে অ্যালেক্সা বুস্টিং। ফেসবুক বুস্টিং-এর মতো অর্থ দিয়ে যে কোনও সাইটেরও অ্যালেক্সার র‌্যাংকিং এগিয়ে আনা যায়। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হোস্টিং হেল্প২৪-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউসুফ আহমেদ তুহিন  বলেন, ‘অ্যালেক্সা র‌্যাংকিং বিশ্বাসযোগ্য কিনা, তা নিয়ে বরাবরই আমাদের সংশয় ছিল। গত বছর থেকে অ্যালেক্সার জনপ্রিয়তায় ধ্বস নেমেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অ্যালেক্সায় সাইট বুস্টও করা যায়। এজন্য আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ঠিকানা প্রয়োজন। অনলাইনে আইপি কিনতে পাওয়া যায়। যারা এসব কাজ করে (অ্যালেক্সা বুস্টিং), তারা এসব আইপি ব্যবহার করে অথবা বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কিংবা গুগল দেখতে চাইলে অ্যালেক্সা বুস্টাররা ওই আইপিগুলো দেখিয়ে বলে এসব আইপি থেকে হিট আসে।’

ইউসুফ আহমেদ তুহিন বলেন, ‘অ্যালেক্সাতে বুস্ট করলে দেখা যাবে কোনও সাইট হঠাৎ করে ৭ লাখ থেকে ১ লাখের মধ্যে চলে এসেছে। এরপরে হয়তো আরও দ্রুত র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে আসে।’ র‌্যাংকিংয়ে কোনও সাইট হঠাৎই পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘কোনও সাইটে ভিজিটর অপরিবর্তিত থাকার পরও র‌্যাংকিংয়ে সাইটের অবনতি হলে সন্দেহ তৈরি হয়। অ্যালেক্সার কিছু বিজনেস পলিসি আছে,

সেসব অ্যাপ্লাইয়ের জন্যও কৌশলে অনেক সময় বিভিন্ন সাইটের র‌্যাংকিং পিছিয়ে দিতে পারে।’

নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রযুক্তিকর্মী বাংলা বলেন, ‘‘অনেকে ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) দিয়ে ভুয়া হিট জেনারেট করতে একধরনের এক্সটেনশন ব্যবহার করেন। এতে সাইটে ‘ম্যানুয়ালি’ হিট বাড়ানো সম্ভব। ধরা যাক, কেউ একটা পিসিতে এক্সটেনশন ব্যবহার করে ১০ সেকেন্ডের অটো-রিলোড দিয়ে রাখলো। এখন প্রতি ১০ সেকেন্ড পর পর এক্সটেনশনটি অটো-রিলোড নেবে। এর ফলে প্রতি মিনিটে ওই পিসি ৬টি করে নতুন হিট ‘জেনারেট’ করবে। এ রকম পিসির সংখ্যা বেশি হলে হিটও বাড়বে।’’

বাংলাদেশে বেশ কিছু ক্লিক ফার্ম রয়েছে বলে জানা গেছে। ফার্মগুলো অর্থের বিনিময়ে এসব কাজ করে। গোপনে কাজ করে বলে তাদের সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে তাদের নেটওয়ার্কে ঢুকতে পারলে দেখা যায় ওই অদেখা জগৎটা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটর্স গ্রুপের (বিডিনগ) ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘কিছু ডাটা, কিছু অনুমান। এই দুইয়ের মিলিত পরিসংখ্যান হলো অ্যালেক্সার র‌্যাংকিং। একেক প্রতিষ্ঠানের একেক ধরনের বিজনেস মডেল থাকে। কিছু তারা প্রকাশ করে, কিছু করে না। তবে তাদের তালিকা বা ফল মেনে নেব কিনা, সেটা ভেবে দেখতে হবে।’

অনলাইনে চাকরি খোঁজার সাইট বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর অ্যালেক্সা র‌্যাংকিং সম্পর্কে বলেন, ‘‘আগে র‌্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক বেশি ‘ম্যানিপুলেশন’ হতো। এখন আরও বেশি হয়।’ একই ধরনের মন্তব্য করলেন তথ্যপ্রযুক্তির গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রেনিউর ল্যাবের প্রধান নির্বাহী আরিফ নেজামি। তার মতে, ‘র‌্যাংকিংটা ভুয়া। অ্যালেক্সাকে বিশ্বের কোথাও সিরিয়াসলি নেওয়া হয় কিনা, সন্দেহ আছে।’

এদিকে মাই ব্লগারট্রিকস ডটকমেরএক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, গত বছর অ্যালেক্সা র‌্যাংকিং দ্রুতগতিতে পড়ে গেছে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসে র‌্যাংকিং নিচের দিকে নামতে থাকে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, যেকোনও ওয়েবসাইটের অ্যালেক্সা র‍্যাংকিং শুধু ট্রাফিকের ওপর নির্ভর করে না। এর সঙ্গে অন্যান্য ওয়েবসাইটের নানা বিষয়ও জড়িত থাকে। যেমন: একটি ওয়েবসাইটের ট্রাফিক আগে যা ছিল, তা থাকার পরও র‍্যাংকিং নিচে নেমে যেতে পারে, যদি অন্য কোনও ওয়েবসাইটের র‍্যাংক পরিবর্তিত হয়। এ নিয়ে অ্যালেক্সার কোনও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই।

প্রযুক্তিকর্মীরা জানান, ইন্টারনেট ব্রাউজারে অ্যালেক্সা টুলবার না থাকলেও ওয়েবসাইটের পয়েন্ট কমে যায়। ব্রাউজারে এ টুলবার না থাকলে ওয়েবসাইট ভিজিট গণনায় ধরা হয় না। এটাও অ্যালেক্সার একটি বড় দুর্বলতা। অনেক ওয়েবসাইট বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভুয়া হিট তৈরি করে। এতে ওয়েবসাইটে অনেক বেশি হিট হয়ে যায়। কিন্তু অ্যালেক্সা এ বিষয়গুলো নজরে রাখতে ব্যর্থ। ফলে ভুয়া হিট নিয়ে অনেক ওয়েবসাইট ওপরে উঠে যায়। অ্যালেক্সা ওয়েবসাইটের সঠিক ট্রাফিক হিসাব করতে ব্যর্থ।

অ্যালেক্সাতে ম্যাশেবলের পতন শুরু হয় ২০১৬ সালের মার্চ থেকে। উত্থান-পতনের মধ্যে এ ওয়েবাসাইটের পতনই বেশি লক্ষ করা যায়। তখন সাইটটি ৪৬ পয়েন্ট হারায়। টেক ক্রাঞ্চের পতন শুরু হয় ২০১৬ সালের গোড়ার দিক থেকে। যা ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। তখন এটা ১৭৮ পয়েন্ট হারায়। ফেসবুক সে সময়টায় অ্যালেক্সায় দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। ফেসবুককে তিনে নামিয়ে দিয়ে দুই নম্বরে উঠে আসে ইউটিউব। বর্তমানে র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে অবস্থান করছে গুগল।

জানা গেছে, ট্রাফিক এক্সচেঞ্জ হলো ভুয়া হিটের একটি বড় মাধ্যম। এ রকম অসংখ্য সাইট রয়েছে অনলাইনে। ভেসে বেড়াচ্ছে ফেসবুকে। লোভনীয় অফার দিয়ে আকৃষ্ট করতে চাইছে সেবাপ্রার্থীকে। অনলাইনে রয়েছে অ্যালেক্সা হিট জেনারেটর সফটওয়্যারের ঠিকানা। সেই ঠিকানায় গেলে দেখা যায়, সেখানে রয়েছে সুপার অ্যালেক্সা বুস্টার। এটা দিয়ে দ্রুত র‌্যাংকিং ও ট্রাফিকও বাড়ানোসহ বুস্ট করা যায়। সার্চ ইঞ্জিন র‌্যাংকিংও ‘বিল্ডআপ’ করা যায়। ‘ইম্প্রুভ অ্যালেক্সা র‌্যাংকিং’ নামের একটি সাইট রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে নিরাপদে ও দ্রুত গোপনে আমাদের প্রযুক্তির মাধ্যমে অ্যালেক্সা র‌্যাংকিংয়ের কাজ করি। সেখানে বিভিন্ন প্যাকেজের কথা দামসহ উল্লেখ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রযুক্তকর্মী বলেন, অ্যালেক্সা নিজস্ব টুলবার থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। এই টুলবার যে কম্পিউটারে ইনস্টল করা থাকে, সেই কম্পিউটার থেকে কোন কোন সাইট দেখা হয়, তার একটি তালিকা টুলবার অ্যালেক্সার সার্ভারে পাঠিয়ে দেয়। অ্যালেক্সা আরও একটি পদ্ধতিতে ডাটা সংগ্রহ করে। ওই পদ্ধতির নাম হলো ডিমজ ডিরেক্টরি। এতে যুক্ত হলে অ্যালেক্সা সাইটটিকে সুনজরে দেখতে শুরু করে। আগে ডিমজে তালিকাভুক্ত হওয়াকে বেশ কাজের বলা হলেও দিনে দিনে এর সমালোচনা বেড়েছে। বেড়েছে স্বচ্ছতারও অভাব। টাকার বিনিময়ে সাইট যুক্ত করারও অভিযোগও আছে ডিমজের বিরুদ্ধে।

 

২ মন্তব্য
  1. Ayaar Muhammad বলেছেন

    আমার পক্ষে বললে ১০১%ই বিশ্বাসযোগ্য!?!!

  2. Md Syful Islam বলেছেন

    এলেক্সা ফালতো