অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

প্রেসিডেন্ট পদক (পিপিএম) পেয়ে খুশি চট্টগ্রামের কনস্টেবল শের আলী

3
.

অবশেষে প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) পেলেন চট্টগ্রামের পুলিশ কনস্টেবল শের আলী। আজ সোমবার (২৩ জানুয়ারী) দুপুরে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শের আলীকে প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক পড়িয়ে দেন।

পুলিশ বিভাগের গৌরবময় এ সন্মানে ভুষিত হয়ে অত্যান্ত আনন্দিত কনেস্টেবল শের আলী।

গত ১১ ডিসেম্বর (রবিবার) দুপুরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের রামু উপজেলার পানিরছড়া এলাকায় শের আলীর বাড়ির কাছাকাছি বাস উল্টে নিহত হন চারজন। একই দুর্ঘটনায় আহত হন কমপক্ষে ২৩ জন। এসময় ছুটিতে গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের পানিরছড়া গ্রামে গিয়েছিলেন শের আলী।

শের আলী।

শের আলী বাঁচার জন্য আর্তনাদরত একটি পাঁচ বছরের শিশুকে বাসের ভেতর থেকে বের করে দ্রুত হাসপাতালে নেন। এসময় শিশুটিকে কোলে নিয়ে তার কান্নার ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক সহ বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে। সারা দেশে ব্যাপক আলোচিত হয় শের আলীর এ ভূমিকা । দেশী বিদেশী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে স্থান করে নেন শের আলীর ছবিটি।

দুর্ঘটনাকবলিত শিশুকে বাঁচানোর আকুতি নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়া পুলিশ কনস্টেবল শের আলীর জন্য প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকের (পিপিএম) জন্য সুপারিশ করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো.ইকবাল বাহার।

পুলিশ কনস্টেবল শের আলী (নম্বর ২৫৪৬) চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের উত্তর-দক্ষিণ বিভাগের বোমা নিস্ক্রিয়করণ ইউনিটে কর্মরত আছেন।

শের আলি এক ছেলে এক মেয়ের জনক। কনস্টেবল হিসেবে পুলিশের চাকুরীতে যোগদান করেন ১৯৯৮ সালে। প্রশিক্ষন শেষে সিএমপিতেই কর্মরত আছেন দীর্ঘদিন থেকে। এর আগে র‌্যাবে ছিলেন আড়াই বছর । ২০০৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে।

.

সেখানে মুলত একজন নার্স হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। তখন থেকে মানুষের সেবা করাকে আনন্দের সাথে গ্রহন করেছেন। যে কোন মানুষের সেবা করতে পারলে আত্মতৃপ্তি অনুভব করেন শের আলী। কারো বিপদেও কথা শুনলে দৌড়ে যান তিনি।

তার বাড়ী কক্সবাজার জেলা রামুতে।

সে দিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে শের আলী বলেন, ছুটিতে বাড়ীতে গিয়েছিলাম। এর পর একটা সড়ক দুর্ঘটনার খবর শুনে ছুটে যাই ঘটনাস্থলে। যাওয়ার পর দেখি এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। এরপর শাবল খুন্তি যার কাছে যা ছিল তা দিয়ে গাড়ীটির বিভিন্ন অংশ কেটে যাকে যে ভাবে পারছি বের করেছি। দুটি লোককে ধরতে পারতেছিনা টেনেও আনতে পারছিলাম না। আর একটা লোক আর্তনাদ করতেছিল। তবুও বাসের বডি কেটে কয়েকজনকে বের করে আনতে পেরেছিলাম।

এর পর সেনাবাহিনীর রেকার দিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ীটি উপরে উঠিয়ে লোকজনকে বের করে আনি। গাড়ীটি একটু উপরে উঠানোর পর ভিতরে প্রবেশ করে দেখি একজন অজ্ঞাত নামা মহিলার নিথর দেহ পড়ে আছে। তার পাশেই একটি রেকের নীচে চাপা পড়েছিল উম্মে হাবিবা নামের ৬ বছরের একটি কন্যা শিশু।

শের আলী বলেন, তখন তাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে কোনমতে বাইরে বেরিয়ে আসি। রাস্তায় সুর্যের আলোতে আসার পর মেয়েটির জ্ঞান ফিরে আসল। তখন মেয়েটি বলল “আব্বু পানি খাব”। তার বয়সী আমার নিজের একটা মেয়ে আছে তার কথা মনে পড়ে গেল। তখন আমার আবেগ এসে গেল আমি নিজের অজান্তে কেঁদে কেঁদে মেয়েটিকে নিয়ে দৌড়ালাম যে দিকে এ্যাম্বুলেন্স বা হাসপাতাল আছে সে দিকে। তখন যে আমি কেঁদেছিলাম তাও আমার মনে নেই।

তিনি বলেন, পরে সংবাদ মাধ্যমে আমার সেই কান্নার ছবি দেখে একটু লজ্জাও পেয়েছি। এরপর মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসার পর সে মোটামুটি সুস্থ হয়। রাতে আমি হাসপাতালে তাকে দেখতে যাই । সে সময় ডাক্তার আমাকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলনা। পরে আমি পরিচয় দিই যে আমি তার অপরিচিত বাবা। এর পর ডাক্তার ফারজানা আমাকে হাসপাতালের ওয়ার্ডেও ভিতরে নিয়ে যায়।

হাসপাতালে মেয়েটির জন্য নগদ ২ হাজার টাকা এবং কিছু কাপড় চোপড় কিনে দেই । সে এখন আমার সাথে সব সময় মোবাইলে কথা বলে আমাকে তাদের বাড়ীতে বেড়াতে যেতে বলে। আমাকে এখন আংকেল ডাকে। শের আলী জানান, তবে এখন আমি আনন্দিত যে মেয়েটি হাসছে, সুস্থ আছে  এবং তার মা বাবার কোলে ফিরে গেছে। আমি মেয়েটির পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ। তার কারণে আজকে আমি সারা দেশে আলোচিত হয়েছি।

মেয়েটি তার বাবা মাদরাসা শিক্ষক আবুল হোসেনের সাথে চট্টগ্রাম শহর থেকে টেকনাফ গ্রামের বাড়ীতে যাচ্ছিল বলে জানান শের আলী।

আবুল হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ভবিষ্যত জীবনে আর কোন গাড়ীতে চড়ে কোথাও যাবনা। মেয়েকে নিয়ে বাড়ীতেই থাকবো। শের আলীর কারণে আমার মেয়েকে ফিরে পেয়েছি।

এদিকে সিএমপি’র পক্ষ থেকে পিপিএম পদকের জন্য সুপারিশের পর সকালে পিপিএম পদক পেয়ে এ প্রতিবেদককে মুটোফোনে নিজের খুশির কথা জানান শের আলী। এসময় তিনি বলেন সকলের দোয়ায় পিপিএম পদক পেয়ে ভাল লাগছে। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

৩ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট। বড় ভাই প্রবাসী । শের আলীর যখন ২ বছর বয়স তখনই তাঁর মমতাময়ী মা তাদেরকে ছেড়ে দুনিয়ে থেকে বিদায় নেন। এর পর সৎ মায়ের কাছেই বড় হয়েছেন।

এদিকে চট্টগ্রাম কক্সবাজারসহ সারা দেশে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠায় সিএমপির কমিশনারসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বৈঠকে বসে গত ১৪ ডিসেম্বর তাকে প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক দেওয়ার জন্য সুপারিশ সম্বলিত চিঠিটি ঢাকায় প্রেরন করেন।

৩ মন্তব্য
  1. Mehadi Zakirul বলেছেন

    শের আলী রা এ দেশের আদর্শ হওয়া উচিৎ।

  2. Saiful Islam Shilpi বলেছেন

    ঘুনে ধরা এ সমাজ পরিবর্তনে আরো বেশি শের আলীদের প্রয়োজন।

  3. Solaiman Mohammad বলেছেন

    এটা শের আলী ব্যক্তিগত সাফল্য, পুলিশের নয়।।