অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

অনলাইন এমপিও নিয়ে হয়রানী: জেলা শিক্ষা অফিসারকে শোকজ

0
.

বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনলাইন ভিত্তিক এমপিও (মাসিক পে অর্ডার) মত সহজ একটি পদ্ধতিকে কঠিন করে আবেদনকারীদের ভোগান্তিতে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বেশ কিছু জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে। এমন একটি সুনিদিষ্ট  অভিযোগে গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারী) প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসারকে মাউশির পক্ষ হতে শোকজ দেয়া হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ  শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক উপ-পরিচালক মো: আজিজ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এ শোকজে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার হোসনে আরা বেগমকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।

জানা যায়, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও’ তে দূর্নীতি ও হয়রানীর অভিযোগ থাকায় সরকার গত ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইন এম পি ও চালু করে।

এটি আরো সহজ করার লক্ষ্যে ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের ৯ উপ-পরিচালকের তত্বাবধানে দিয়ে দেয় পুরো কার্যক্রমটি। ফলে নতুন এ পদ্ধতিতে এম পিও প্রত্যাশীদের এখন ফাইল নিয়ে আর ঢাকায় দৌঁড়াদোড়ি করতে হয়না, আবেনকারীরা নিজ প্রতিষ্ঠানে বসেই সমস্ত কার্যক্রম শেষ করার সুযোগ রয়েছে। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও আইসিটি শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতি প্রতিষ্ঠানে একটি করে গোপন পাশওয়ার্ড দেয়া হয়েছে। সেই পাশওয়ার্ড ব্যবহার করেই মাউশির ওয়েভ সাইটে ঢুকে প্রতিষ্ঠান প্রধান তাঁর প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক/ কর্মচারীর আবেদনটির প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদী আপলোডসহ প্রতিজোড় মাসের ১-১০ তারিখের ভেতর উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর,উপজেলা শিক্ষা অফিসার ১১-১৭ তারিখের ভেতর তা জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার ১৮-২৫ তারিখের ভেতর তা আঞ্চলিক উপ-পরিচালক বরাবর ফরোয়ার্ড করবেন।

সব ঠিকঠাক থাকলে ওই মাসেই আবেদনকারী এম পিও পেয়ে যাবেন। ই এম আই এস সেল-এ যাওয়া আবেদনগুলোর সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী শিক্ষক বা কর্মচারি পরবর্তী ১ তারিখের মধ্যে তাঁর বেতন-ভাতাদি উত্তোলন করতে পারবেন। আবেদনের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে এমপিওভুক্তি প্রক্রিয়া নিষ্পন্ন করার বিধান রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে সরকারের এমন একটি সহজ ও সুন্দর  পদ্ধতিকে জটিল করে অবৈধ সুযোগ- সুবিধা আদায়ে লিপ্ত রয়েছে একটি চক্র। ফলে আবারো বাড়ছে এম পি ও’তে ভোগান্তি।

অভিযোগ এর ব্যাপরে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান বুঝেন না আবার বুঝলেও অনেকেই নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন না। ফলে বাধ্য হয়ে আবেদনকারীরা দারস্হ হন, বাজারের কম্পিউটার দোকানগুলোতে অথবা উপজেলা শিক্ষা অফিসগুলোতে।

এতে একদিকে প্রতিষ্ঠানের গোপনীয়তা ফাঁস হচ্ছে অন্যদিকে অজ্ঞাতার কারণে ভুলে ভরা ফাইল ফরোয়ার্ড করে অসাধুব্যক্তিদের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হচ্ছে। এসব বেড়াজালে আটকে শুধুমাত্র গত জানুয়ারী এক মাসেই চট্টগ্রামে ২৮৫ আবেদনকারী শিক্ষক- কর্মচারী তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারকে এ শোকজ প্রদান করেন বলে জানান মাউশি চট্টগ্রামের  আঞ্চলিক উপ-পরিচালক মো. আজিজ উদ্দিন।

এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- শিক্ষক সমাজকে আর্থিক এবং শারীরিক ভোগান্তির হাত থেকে মুক্তি দিতেই এমপিওভুক্তি কার্যক্রম অনলাইনে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন- এক সময় তিন সেট হার্ড কপি জমা দেওয়ার বিধানের ফলে দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হতেন আবেদনকারীরা। এ নিয়ে বিশেষ করে উপজেলা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও তাঁদের কার্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল অহরহ। ফলে দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধে অনলাইনে আবেদন পদ্ধতি চালু করা হলেও তাতে ঘাটতি রয়ে যায়। অর্থাৎ নিজেদের অজ্ঞতার কারণে দুর্নীতি ও হয়রানি শতভাগ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। অথচ নতুন এ নিয়মের  ফলে কোন আবেদনকারীকে আর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে যেতে হয় না। কারো সাথে যোগাযোগও করতে হয় না। প্রতিষ্ঠান প্রধান অনলাইনে যথাযথভাবে আবেদনটি আপলোড করলেই হলো। আর আবেদনটি কোন পর্যায়ে আছে তা মাউশির পক্ষ থেকে তদারকি করা হয় জানিয়ে এ উপ-পরিচালক বলেন, ড্যাশ বোর্ডে আবেদনটি কোন পর্যায়ে রয়েছে তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তদারকির সুযোগ রয়েছে।

ফলে ইচ্ছে করলেই কোন উপজেলা বা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবেদনটি ধরে রাখতে পারবেন না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (কাগজ-পত্র ঠিক থাকলে) তাঁকে আবেদনটি ফরোয়ার্ড করতেই হবে। নয়তো (কাগজ-পত্রের ঘাটতি থাকলে) রিজেক্ট করে প্রতিষ্ঠানে ফেরত পাঠাতে হবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ফেরত পাঠানোর যৌক্তিক কারণ মন্তব্য কলামে উল্লেখ করতে হবে। কোনভাবেই কোন আবেদন ফেলে রাখার সুযোগ নেই। এই প্রক্রিয়ায় এমপিওভুক্তির জন্য কোনভাবেই কোন ধরনের তদবির বা লেন-দেনের প্রয়োজন নেই বলেও তিনি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন- প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র ঠিক-ঠাক দিয়ে অনলাইনে যথাযথ ভাবে আবেদনটি সম্পন্ন করাটাই মূল কাজ। আর কারো সাথে যোগাযোগ করার কোন প্রয়োজন নেই। তদবিরেরও প্রয়োজন নেই। কাগজ-পত্র ঠিক-ঠাক থাকলে এমপিও না হওয়ার কোন কারণ নেই। অবশ্য, অনলাইনে আবেদন আপলোডের সময় প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সতর্ক থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব বেশি বলেও জানান তিনি।