অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ভালোবাসি ভালবাসা: আজ ভালবাসা দিবস

2
.

আজ বিশ্ব ভালবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘আমার জীবনে তুমি বাঁচো ওগো বাঁচো/ তোমার কামনা আমার চিত্ত দিয়ে যাঁচো অথবা ‘তোমরা যে বল ভালবাসা ভালবাসা/ সখী ভালবাসা কারে কয়।

কবির বাঁচা মরার এবং চিত্র দিয়ে ভালবাসা বোঝাবুঝির চিরন্তন বোধ আজ হয়তো একটু বেশিই অনুভূত হবে গোলাপ বিনিময়ে ও শরীরী ভাষায়। বসন্ত বাতাসে হৃদয়ের মিথস্ক্রিয়ায় সারা বিশ্বের প্রেমপিয়াসী যুগলরা বছরের এ দিনটিকেই বেছে নেবে মনের গহিনের কতকথার কলি ফোটাতে। চন্ডিদাসের অনাদিকালের সেই সুর-‘দুহঁ করে দুহঁ কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া/ আধতিল না দেখিলে যায় যে মরিয়া/ সখী কেমনে বাধিঁব হিয়া। এ আবেদনও বাজবে কারও কারও হৃদয়ে।

শুধু কি প্রেমিক প্রেমিকা..ভালোবাসা বিনিময় হতে পারে মা-সন্তান, ভাই-বোন বন্ধু-বান্ধব এবং প্রতিবেশীদের মধ্যেও। এ দিনেই প্রেমদেব কিউপিড প্রেমশর বাগিয়ে হৃদয়ে কন্দরে ঘুরে বেড়াবেন। সে অনুরাগেই প্রেমপাগল প্রেমিক-প্রেমিকারা পরাণ তাড়িত হয়ে বিদ্ধ হবে দেবতার বাঁকা ইশারায়। তাঁদের মনে লাগবে দোলা, ভালবাসার রঙে রাঙাবে হৃদয়। ভালবাসা উৎসবে মুখর হবে জনপদ। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে দিবসটি। প্রযুক্তির কল্যাণে হাইটেক ডিজিটালের যুগে মুঠোফোনের ক্ষুদ্র বার্তা, ই-মেইল অথবা ফেসবুকে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেমকথার কিশলয় পল্লবিত হচ্ছে রাত ১২টার পর থেকেই।

আজ দিনভর বন্দর নগরীর পতেঙ্গা সি বীচ, ফয়’স লেক ওয়ার সেমেন্ট্রি, পারকি বীচসহ সহ সারাদেশের পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো সরব হচ্ছে প্রেমিক-প্রেমিকাদের পদচারণায়। হয়তো কবির ভাষায় একে অন্যকে বলবে- ‘তোমাকে ভালবাসি আমি। ভালবেসে সখী নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে’।

.

পশ্চিমা দুনিয়ায় ভ্যালেন্টাইন ডে বা প্রেম উৎসব তারুণ্যের মাঝে এক অদেখা ভুবনের উত্তেজনা ছড়ায়। এদিনে চকোলেট, পার্ফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, ই- মেইল, মোবাইলের এসএমএসে প্রেমবার্তা, হিরার আংটি, প্রিয় পোশাক, খেলনা, বইয়ের ভেতরে রাখা গোলাপের পাপঁড়ির ইশারা বিনিময়, আর জড়াজড়ি করা হয়ে উঠবে তরুণ-তরুণীদের প্রথম অনুসঙ্গ।

হয়তো আরও থাকবে নীল খামে হালকা লিপস্টিকের দাগ, একটি গোলাপ ফুল, ছোট্ট কোন উপহার, আর ছোট্ট একটি চিরকুট। তাতে দু’ছত্র গদ্য বা পদ্যে প্রেমের ঊর্মি-‘ইউ স্টেপ ইনটু মাই হার্ট, টার্নিং ইট ফ্রম স্টোন’ অথবা ‘তুমি আমার সবটুকু গান/ ঝড়ের পরে একটু চুমু/ তাতে আছে সবটুকু প্রাণ’।

আমাদের দেশে ১৯৯৪ সাল থেকে দিবসটি বেশ ঘটা করে পালিত হয়ে আসছে। এদিন শুধু প্রেম বিনিময় নয়, প্রেমিক প্রেমিকাদের মধ্যে গোপণে বিয়ের হিড়িকও পড়েছে। রাজধানীর উদ্যান, বইমেলা, কফিশপ, ফাস্টফুড শপ, লং ড্রাইভ, অথবা নির্জন গৃহকোণে একান্ত নিভৃতে কাটান প্রেমকাতুর তরুণ-তরুণীরা।

দিনটি যে শুধু তরুণ-তরুণীদের তা নয়, পিতামাতা-সন্তনদের ভালবাসাও বড়মাত্রায় উদ্ভাসিত করে। যাঁরা একটু বিজ্ঞ তাঁরা বলেন, প্রেমের কোন দিন থাকে না, ভালবাসলেই ভ্যালেন্টাইন, সেলিব্রেট করলেই ভ্যালেন্টাইন ডে। ভালবাসার এই দিনটির ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে অনেক ধরণের কাহিনীর কথা জানা গেছে। প্রধান যে কাহিনী প্রচলিত আছে-তা এক রোমান ক্যাথলিক পাদ্রি বা সন্তের কাহিনী।

তাঁর নাম সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। তিনি ছিলেন একজন চিকিৎসক ও পাদ্রি। তখন রোমানদের দেবদেবীর পূজোর বিষয়টি ছিল মূখ্য। তাঁরা বিশ্বাসী ছিলেন না খ্রিস্টান ধর্মে। কিন্তু খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের অপরাধে ২০৭ খ্রিষ্টাব্দে সাধু ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের আদেশে। তবে তিনি যখন জেলে বন্দী, তখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ভালবাসার কথা জানিয়ে জেলের জানালা দিয়ে তাঁকে ছুড়ে দিত চিরকুট। বন্দী অবস্থাতেই তিনি চিকিৎসার মাধ্যমে জেলারের অন্ধ মেয়েকে ফিরিয়ে দেন দৃষ্টিশক্তি। অনুমান করা হয় মেয়েটির সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। মৃত্যুর আগে মেয়েটিকে একটি চিঠি লেখেন, সেখানে তিনি উল্লেখ করেন “ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন” বলে।

অনেকের মতে এই সাধু ভ্যলেন্টাইনের নামানুসারে পোপ প্রথম জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়াারিকে ভ্যালেন্টাইন ডে হিসাবে ঘোষণা করেন। আরও একটি ভ্যলেন্টাইনের নাম পাওয়া যায় ইতিহাসে। যুদ্ধের জন্য সৈন্য সংগ্রহে ছেলেদের বিয়ে করতে নিষিদ্ধ করেন রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস। কিন্তু যুবক ভ্যালেন্টাইন সেই নিষেধ অমান্য করে বিয়ে করেন। ফলে তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তাঁর নামানুসারেও এই দিনটি চালু হতে পারে এমনও ধারণা রয়েছে।

২ মন্তব্য
  1. সহিদুল ইসলাম বলেছেন

    বাবুন্ন্যার লেখা কই???

  2. Saiful Islam Shilpi বলেছেন

    ছাপা হয়েছে তো..