অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ

0
.

অবশেষে হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় মা মাছ। শুক্রবার (২১ এপ্রিল) রাতে ‘নমুনা ডিম’ ছাড়ার পর মধ্যরাতে বহুল প্রত্যাশিত ডিমের দেখা পান সংগ্রহকারীরা।

এক বছর বিরতি দিয়ে ডিম ছাড়ায় আজ শনিবার সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ মাছের ডিম সংগ্রহের উৎসবে মেতে ওঠেন সংগ্রহকারীরা। হালদা বিশেষজ্ঞ চগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনজুরুল কিবরীয়া খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, রাতে নাপিতের ঘোনা এলাকায় প্রথমে মা-মাছের ডিম দেখতে পান বিশেষ ধরনের জাল, বালতি, নৌকা, সার্চ লাইট নিয়ে অপেক্ষমাণ ডিম সংগ্রহকারীরা। এরপর ক্রমে খলিফার ঘোনা, রামদাশ মুন্সির হাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেন তারা। ডিম ছাড়ার খবর পেয়ে ভোর রাতেই হালদায় ছুটে যান বলে জানান তিনি।

.

প্রতিটি নৌকা গড়ে এক বালতি (১৬ কেজি) করে ডিম আহরণ করতে পেরেছে। ড. মনজুরুল কিবরীয়া জানান, ডিম সংগ্রহকারীরা বংশ পরম্পরায় শিখে আসা কৌশলে মাটির গর্তে পানি দিয়ে ডিমগুলো থেকে রেণু তৈরি করবে চার দিনে। এরপর সেই রেণু ছোট ছোট পুকুরে ছেড়ে দিয়ে পোনা তৈরি হবে। ওই সময় বোঝা যাবে কোনটি কোন মাছের পোনা।

গতবছর দুই শতাধিক নৌকা মাছের ডিম সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করেছিল দিনের পর দিন। ডিম না পেয়ে অনেকে হতাশ হয়ে পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।

অতীতের মতো যাতে কেউ মা-মাছ শিকার করতে না পারে সে জন্য হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে হালদা নদীতে টহল দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় পুলিশকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য- এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদী। এ নদী পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড় তানার বদনাতলী পাহাড় থেকে সৃষ্ট হয়ে ফটিকছড়ির রা্উজান, হাটহাজারীর কালুরঘাট স্থান অতিক্রম করে কর্ণফুলী নদীতে মিশে গেছে।

.

নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৫ কিলোমিটার। এর পানির উৎস মানিকছড়ি, ধুরং, বারমাসিয়া, মন্দাকিনী, লেলাং, বোয়ালিয়া, চানখালী, সর্ত্তা, কাগতিয়া, সোনাইখাল, পারাখালী, খাটাখালীসহ বেশকিছু ছোট ছোট ছড়া। নদীটির গভীরতা স্থান বিশেষ ২৫ থেকে ৫০ ফুট। হালদা নদী থেকে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ প্রভৃতি কার্প জাতীয় মাছের সরাসরি ডিম সংগ্রহ করা হয়।

গত শতকের পঞ্চাশ দশকে দেশের মোট মৎস চাহিদার ৭০ ভাগ পুরন করতো হালদা নদীর পোনা। কিন্তু রাষ্ট্রের সুষ্ঠ পরিকল্পনা ও সঠিক পদক্ষেপের অভাব, মা-মাছ শিকার, নদীর বাঁক কাটাসহ বিভিন্ন কারণে হালদা নদীর ঐতিহ্য আজ ধ্বংসপ্রায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হালদা নদীর ৪টি বাঁক কেটে ফেলা, অপরিকল্পিতভাবে সুইচগেট নির্মাণ, মা-মাছ নিধন, হালদা সংলগ্ন এলাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠাই এ নদীতে মাছের প্রজনন কমে যাচ্ছে।

১৯৪৬ সালের হিসাব অনুযায়ী হালদা নদী ৪ হাজার কেজি ডিম দেয়। এখান থেকে ডিম আহরণ করা হয়েছে ১৯৯৭ সালে ৩শ কেজি, ২০০৫ সালে ১শ ৫০ কেজি, ২০০৭ সালে এর পরিমাণ বেড়ে ৩শ পঞ্চাশ কেজিতে উন্নতি হয়।

মৎস বিশেষজ্ঞরা মনে করেন প্রতিটি ডিম প্রদানের উপযোগী মাছের ওজন পাঁচ কেজি থেকে এক মণ পর্যন্ত। হালদা নদীতে মাছের রেণু সংগ্রহ করার প্রধান মৌসুম হল বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসের অমাবশ্যা এবং পূর্ণিমার প্রবল বর্ষণ এবং মেঘের গর্জন মুহূর্তে। এ সময় মা-মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে।