অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ভিশন-২০৩০ঃ বেগম জিয়ার পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য

0
.

ভিশন ২০৩০
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া
ঢাকা, ১০ মে ২০১৭
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ,
বিএনপি সহ ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ,
এবং সুধীমন্ডলী,
আসসালামু আলাইকুম।
আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে যারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ‘ভিশন-২০৩০’ (ভিশন টুয়েন্টি-থার্টি) উপস্থাপন অনুষ্ঠানে শত ব্যস্ততার মধ্যেও যোগ দিয়েছেন তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আজ শুভ বৌদ্ধ পূর্ণিমা। এই শুভ দিনে আমি দেশের বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী সকল নারী-পুরুষ ও শিশুকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
যেকোন দেশের জনগণ বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ছাড়া এগুতে পারে না। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ স্বপ্ন দেখে একটি সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের। পরিকল্পনা দ্বারা জাতি পায় কর্মস্পৃহা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রচনা করতে পারে একটি সুখ ও শান্তির নীড়। রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হ’ল জনগণের আশা-আকাঙ্খাকে ধারণ করে ভবিষ্যতের দিনগুলোতে জাতিকে উন্নত সোপানের পথে পরিচালিত করা। এ পথ বাধা-বিঘœ মুক্ত নয়। এই বাস্তবতা উপলদ্ধি করেও উন্নত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
১৯ মার্চ, ২০১৬ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কাউন্সিল অধিবেশনে আমি যে সভাপতির ভাষণ দিয়েছিলাম- তাতে বিএনপির ভিশন টুয়েন্টি-থার্টি এর একটি সংক্ষিপ্ত রুপ-রেখা তুলে ধরেছিলাম।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশেষজ্ঞ ও দলীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এর একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ আমরা প্রস্তুত করেছি। আপনাদের মতামত ও পরামর্শ সাপেক্ষে এটিকে আরও পরিশীলিত করার সুযোগ রয়েছে। আপনাদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় এই সব লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার অর্থ্যাৎ একটি যথার্থই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে আমাদের এই ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়ন করা হবে ইনশা-আল্লাহ।
মহান সৃষ্টিকর্তার অপরিসীম দয়া ও ইচ্ছায় এই ভিশন বাস্তবায়ন সম্ভব হলে আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশ হয়ে উঠবে সুখী, সমৃদ্ধশালী, শোষণ ও নিপীড়ণমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও কল্যাণমূলক আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র। এমন একটি রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে আমরা গর্ব বোধ করব।
বিএনপি বিশ্বাস করে জনগণই হবে সকল উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। যে সব বাধা জনগণের মেধা, শ্রম, উদ্যোগ এবং উৎসাহকে দমিয়ে দেয় সেগুলোকে দূর করে বিএনপি বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, আধুনিক ও আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে ভিশন- ২০৩০ প্রণয়ন করেছে।
আমাদের ভিশন-২০৩০ আপনাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আমি এখন এর সার-সংক্ষেপ আপনাদের নিকট উপস্থাপন করছি।
গণতন্ত্র
১. বিএনপি মনে করে বাংলাদেশের জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল আজ সে রাষ্ট্রের মালিকানা তাদের হাতে নেই। তাই দেশের জনগনের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চায় বিএনপি।
২. বিএনপি এমন এক উদার গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাস করে যেখানে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত হবে। যত সংখ্যালঘিষ্ঠই হউক না কেন, কোন মত ও বিশ্বাসকে অমর্যাদা না করার নীতিতে বিএনপি বিশ্বাস করে।
৩. আমরা ‘ওয়ান ডে ডেমোক্রেসিতে’ বিশ্বাসী নই। জনগণের ক্ষমতাকে কেবল নির্বাচনের দিন বা ভোট দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়না বিএনপি। নিত্যদিনের জন-আকাক্সক্ষাকে মর্যাদা দিয়ে তাদেরকে স¤পৃক্ত করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করবো আমরা।
৪. সুধি সমাজ, গণমাধ্যম, জনমত জরিপ, জনগণের দৈনন্দিন চাওয়া-পাওয়া, বিশেষজ্ঞ মতামত ও অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ পরিচালনা করা বিএনপি’র লক্ষ্য।
কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং ‘গণতন্ত্রের চাইতে উন্নয়ন শ্রেয়’এ অজুহাতে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি প্রতিহত করবে।
৫. বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোয় প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা এককভাবে প্রধানমন্ত্রীর উপর ন্যস্ত। এরূপ ব্যবস্থা সংসদীয় সরকার পদ্ধতির স্বীকৃত রীতির পরিপন্থী। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় দেশবাসী গভীরভাবে উপলব্ধি করছে যে, প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। বিদ্যমান অবস্থার অবসানকল্পে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে।
৬. সংবিধানের এক-কেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুন্ন রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে পরিক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।
৭. আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোট ব্যবস্থা বাতিল, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, সংসদ বহাল রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান প্রবর্তন, সংবিধানের কিছু বিষয় সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ এবং সংবিধানের কতিপয় ধারা-উপধারা সংশোধনের অযোগ্য করার বিধান প্রবর্তন, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের উপর ন্যস্তকরণের বিধানসহ কয়েকটি অগণতান্ত্রিক বিধান প্রণয়ন করেছে।
বিএনপি এসব বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক বিধানাবলী পর্যালোচনা ও পুন:পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার করবে।
৮. বিএনপি সংবিধানে ‘‘গণ-ভোট’’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃস্থাপন করবে।
৯. জাতীয় সংসদকে সকল জাতীয় কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হবে। জাতীয় স্বার্থ স¤পর্কিত বিষয়ে বিরোধী দলসমূহের সাথে আলোচনা করা হবে। পাবলিক একাউন্টস কমিটি এবং পাবলিক আন্ডারটেকিংস কমিটির সভাপতিত্ব বিরোধী দলের সদস্যদের উপর অর্পণ করা হবে।
১০. বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র “বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে জাতিকে পৌঁছাতে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ।
এজন্য সুনীতি, সুশাসন এবং সু-সরকারের (৩এ) সমন্বয় ঘটাবে বিএনপি।
জাতি গঠন
১১. বিএনপি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটাতে চায়।
১২. সকল জনগণের বৃহত্তর সম্মিলনের মাধ্যমে ‘ইনক্লুসিভ সোসাইটি’ গড়ে তোলার মহৎ লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়াই বিএনপি’র নীতি।
১৩. প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। এজন্য নতুন এক সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে বিএনপি সচেষ্ট হবে।
সুশাসন
১৪. গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো স্বার্থপরতা ও দলীয়তার কালিমা মুক্ত করে এগুলোর দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য আইনি ও প্রক্রিয়াগত পদক্ষেপ নেবে বিএনপি।
১৫. বিগত দিনগুলোতে সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। এ কারণেই ব্যক্তির বিশ্বাস-অবিশ্বাস এবং দলীয় আনুগত্যকে বিবেচনায় না নিয়ে কেবলমাত্র সততা, দক্ষতা, মেধা, যোগ্যতা, দেশ-প্রেম ও বিচার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে রাষ্ট্রের প্রশাসন-যন্ত্র, পুলিশ এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকারিতা নিশ্চিত করবে বিএনপি।
১৬. প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা, সততা, মেধার উৎকর্ষ এবং সৃজনশীলতাকে বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনে যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করা হবে। দলীয় ও সকল প্রকার আইনবহির্ভূত হস্তক্ষেপের অবসান ঘটিয়ে বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর আইনানুগভাবে কতর্ব্য পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে।
১৭. বিএনপি দুর্নীতির সাথে কোন আপস করবে না। সমাজের সর্বস্তরে দুষ্টক্ষতের মত ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির রাশ টেনে ধরার জন্য পদ্ধতিগত ও আইনের সংস্কারের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
১৮. প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ এর অফিস কার্য্যকর করা হবে।
১৯. দেশে আশংকাজনকভাবে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। সে লক্ষ্যে জনপ্রশাসন, বিচার, পুলিশ ও কারাগার এ চার প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছ, দক্ষ, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।
২০. বিএনপি মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদায় বিশ্বাসী; আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। আইনের শাসনের নামে কোন প্রকার কালা-কানুনের শাসন গ্রহণযোগ্য হবে না। সকল প্রকার কালা-কানুন বাতিল করা হবে। সকল প্রকার নিষ্ঠুর আচরণ থেকে মানুষকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম, খুন এবং অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে।
২১. বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বাতিল করা হবে।
২২. মানবাধিকার স¤পর্কিত জাতিসংঘের সর্বজনীন ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হবে।
২৩. দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নীতিবোধ, দেশপ্রেম, বিচার-বোধ ও সুনামের কঠোর মানদ-ে যাচাই করে সকল আদালতের বিচারক নিয়োগ করা হবে। যোগ্যতা, মেধা ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংবিধানের আলোকে বিচারপতি নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদন্ড সম্বলিত আইন প্রণয়ন করে বাছাই কমিটি ও সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। নিয়োগের জন্য বাছাইকৃত/সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য ও সম্পদ বিবরণী জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
২৪. বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করে জনগণের জন্য ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা হবে। অধস্তন আদালতকে নির্বাহী বিভাগের আওতামুক্ত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় স্থাপন করা হবে।
২৫. প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে মামলার জট কমিয়ে আনা হবে।
২৬. নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, দ্রুত ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে সমাজে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা সম্মানীয়, নীতিবান, যোগ্য ও আদর্শ মানুষদের দিয়ে পাইলট ভিত্তিতে ‘জুরি’ ব্যবস্থার পুনঃ প্রবর্তন করা হবে।
২৭. আদালতে মামলার বোঝা কমানো এবং স্থানীয় বিচার ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি উৎসাহিত করার লক্ষ্যে গ্রাম-আদালতকে উপযুক্ত সংস্কারের মাধ্যমে কার্যকর আদালত হিসাবে রূপান্তর করা হবে। বর্তমানে বিদ্যমান ইউনিয়ন কাউন্সিল ব্যবস্থায় গ্রাম-আদালতের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী অনানুষ্ঠানিক সালিশী আদালত পুনঃপ্রবর্তন করা যায় কিনা তা’ পরীক্ষা করে দেখা হবে।
২৮. বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করা হবে।
২৯. বর্তমানে থানায় গেলে অনেক সময় পুলিশ মামলা নেয় না। এটা ডিনায়েল অব জাস্টিস। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য দেশব্যাপী থানাগুলোতে অন-লাইন পদ্ধতি ও মোবাইল টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযোগ দায়েরের সুযোগ সৃষ্টি করে ফৌজদারী বিচার প্রার্থীদের আইনের নিরাপত্তা পাওয়ার সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
৩০. পুলিশ বাহিনীকে একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। জনগণের সেবক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পুলিশের মোটিভেশন, ট্রেইনিং ও নৈতিক উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সিআরপিসি, পিআরবি, পুলিশ আইন এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি অনুযায়ী পুলিশের উপর বিচার বিভাগীয় তদারকি নিশ্চিত করে জবাবদিহি ও কল্যাণমূলক জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে।
৩১. দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সঙ্গতি রেখে পুলিশ বাহিনীকে দক্ষতাসম্পন্ন যুগোপযোগী সুসজ্জিত বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। জনগণের জান-মাল ও সম্ভ্রম রক্ষা এবং সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরপেক্ষভাবে পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত একটি চৌকষ, দক্ষ, নিরপেক্ষ, জনকল্যাণমুখী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর অনাকাঙ্খিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে।
৩২. পুলিশের কনস্টবল/ট্রাফিক পুলিশ এবং এএসআই পর্যন্ত নি¤œপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে একটানা ৮ ঘন্টার বেশি দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা হবে না। ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য ঝুঁকিভাতা এবং ৮ ঘন্টার অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কর্মঘন্টা হারে যুক্তিসংগত ওভার-টাইম ভাতা প্রদান করা হবে। এএসআই থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত পুলিশের আবাসন সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৩৩. দ্রব্যমূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে।
৩৪. একটি দক্ষ, স্বচ্ছ, গতিশীল, মেধাবী, জবাবদিহিমূলক যুগোপযোগী ও গণমুখী জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে। মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যথাযথ সংস্কার করা হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নারী ও প্রান্তিক নৃ-গোষ্ঠী কোটা ব্যতিরেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হবে। গতিশীল বিশ্বায়নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংবিধানের আলোকে একটি যথোপযুক্ত সিভিল সার্ভিস আইন প্রণয়ন করা হবে। সকল পর্যায়ে ই-গভার্ন্যান্স চালু করা হবে। জনপ্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশে বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রতিরক্ষা
৩৫. একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অখন্ডতা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত, যুগোপযোগী এবং সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে। গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী সামরিক-বেসামরিক সম্পর্কের ভিত্তি ও বিন্যাস প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হবে। জাতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা হবে।
পররাষ্ট্রনীতি
৩৬. বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে বিএনপি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিএনপি অন্য কোন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং অন্য কোন রাষ্ট্রের জন্য নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি করবে না। একইভাবে বিএনপি দৃঢ় অঙ্গীকার করছে যে অন্য কোন রাষ্ট্রও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করলে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বিএনপি বিশ্বাস করে, আমাদের সীমান্তের বাইরে বাংলাদেশের বন্ধু রয়েছে, কোন প্রভু নেই। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। মুসলিম উম্মাহ ও প্রতিবেশি দেশসমূহের সাথে বিশেষ স¤পর্ক গড়ে তোলা হবে।
নৈতিকতার শক্তি পুনরুদ্ধার
৩৭. বাংলাদেশে নৈতিক মূল্যবোধের ভয়াবহ অবক্ষয় ঘটেছে। এর ফলে সমাজে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
বিএনপি গণমাধ্যম, একাডেমিক-কারিক্যুলাম, সঠিক ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা এবং ইতিবাচক সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রতিরোধে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
পরিষেবা
৩৮. দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলা, জনগণের প্রতি সংবেদনশীলতার অভাব, সামাজিক বৈষম্য, জবাবদিহিতার অভাব, জনসচেতনতার অভাব এবং সর্বোপরি পরিষেবা উৎপাদন ও বিতরণে জনগণের অংশগ্রহণ না থাকার ফলে পরিষেবাগুলোর সুফল জনগণ পায় না।
বিদ্যুৎ সরবরাহ, পানীয় জলের সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাষন, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, পুলিশী সেবা, বিচারিক সেবা, স্বাস্থ্য সেবা, প্রশাসনিক সেবাসহ সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসমূহের সেবার মান ক্রমান্বয়ে উন্নত করা হবে।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী
৩৯. দারিদ্র্য নিরসন না হওয়া পর্যন্ত ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে সুবিধাবঞ্চিত হত-দরিদ্র মানুষদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত করা হবে, যাতে করে একটি দরিদ্র দুঃস্থ মানুষও নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে না থাকে। মূল্যস্ফীতির নিরিখে এর মাথাপিছু পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে। অতিস্বল্প আয়ের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারী রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে।
৪০. সকল দুঃস্থ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা এবং অসহায় বয়স্কদের ভাতার পরিমাণ মূল্যস্ফীতির নিরিখে বৃদ্ধি করা হবে। এই বিশেষ ভাতা ব্যবস্থাকে দুর্নীতি ও ত্রুটিমুক্ত করা হবে।
৪১. বেসরকারি খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য বার্ধ্যক্যের দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে আইন প্রনয়ণের মাধ্যমে একটি “পেনশন ফান্ড” গঠন করা হবে। প্রবীণদের শেষ বয়সের দিনগুলোতে দুঃখ-কষ্ট লাঘবের জন্য তাদের প্রতি মাসে পেনশন দেওয়া হবে। বেসরকারি খাতে নিয়োজিত প্রত্যেকের আয়ের নির্দিষ্ট অংশ এই ফান্ডে জমার ভিত্তিতে পেনশন ফান্ডটি গড়ে তোলা হবে এবং এর জন্য ন্যায্য হারে মুনাফা প্রদান করা হবে। এ ফান্ডের অর্থ উন্নয়ন অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য বিনিয়োগ করা যাবে।
৪২. বাংলাদেশের দারিদ্র্য-পীড়িত, দুঃস্থ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং অবকাঠামোগত সুযোগ বঞ্চিত এলাকাগুলোর হত-দরিদ্র মানুষগুলোকে স্বল্পমেয়াদী বৈষয়িক সাহায্য দিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেয়া হবে। মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে এসব এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভৌত অবকাঠামোগত সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে যাতে তাদেরকে ভবিষ্যতে খয়রাতি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল থাকতে না হয়। বার্ধক্য, প্রতিবন্ধীত্ব এবং রোজগারকারী না থাকার ফলে যারা দুঃস্থ অবস্থায় আছেন তাদেরকে অব্যহতভাবে নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসা হবে।
৪৩. বাস-ট্রেনে-লঞ্চে বিনা ভাড়ায় প্রতিবন্ধীদের যাতায়াতের বিধান করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা
৪৪. বিএনপি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবে।
৪৫. বিএনপি সকল মুক্তিযোদ্ধাদের “রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক” হিসাবে ঘোষণা করবে।
৪৬. মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের নামে দুর্নীতির অবসান ঘটানো হবে। বিএনপি একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করবে।
৪৭. মূল্যস্ফীতির সাথে সঙ্গতি রেখে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বৃদ্ধি করা হবে এবং এই ভাতা ব্যবস্থাপনাকে দুর্নীতি ও ত্রুটিমুক্ত করা হবে।
৪৮. আগ্রহী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হবে এবং সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় যোগ্য ও দক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
৪৯. দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা, ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গনকবর চিহ্নিত করে সে সব স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।
৫০. রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়- দুঃখের বিষয়, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়না। বিএনপি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরীপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়ন করবে এবং তাদের যথাযথ মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করবে। মূল্যস্ফীতির নিরিখে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা বৃদ্ধি করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের বাস-ট্রেনে-লঞ্চে যাতায়াতে নির্ধারিত ভাড়ার অর্ধেক মূল্যে যাতায়াতের বিধান করা হবে।
সন্ত্রাসবাদ
৫১. বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ জাতির জন্য একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। গনতন্ত্রের অনুপস্থিতি, আইনের শাসনের অভাব ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এদেশে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ বিস্তারে অন্যতম কারন। এই সমস্যার সমাধান না করতে পারলে জাতীয় উন্নয়নে সকল প্রয়াসই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। জাতি এক ভয়াবহ অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়বে। এই জন্য বিএনপি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৫২. সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ সকল রাষ্ট্রের জন্যই হুমকির কারণ। এ কারণে বিএনপি বাংলাদেশের ভূখন্ডের মধ্যে কোনরকম সন্ত্রাসবাদী তৎপরতাকে বরদাশত করবে না এবং সন্ত্রাসবাদীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। জঙ্গীবাদ, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং জনগণের অংশগ্রহণে এসব গনবিরোধী চক্র নির্মূল করা হবে।
৫৩. জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস বিরোধী কর্মকৌশল হিসাবে দারিদ্র্য দূরীকরণ, বেকার সমস্যার সমাধান, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি ও সম্প্রীতির মূল্যবোধ শক্তিশালী করা এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপকে উৎসাহিত করা হবে।
অর্থনীতি
৫৪. বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বিএনপি দরিদ্রবান্ধব ও সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বাসী। প্রবৃদ্ধির হারকে বৃদ্ধি করে এবং এর সুফলের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে বিএনপি ধনী দরিদ্রের বৈষম্যের সমস্যাকে মোকাবেলা করবে।
৫৫. আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চাই। এসময়ের মধ্যে মাথাপিছু আয় ৫০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হবে। এর জন্য বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ডবল ডিজিটে উন্নীত করার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৫৬. বাংলাদেশে ভূমির অর্থনৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করে শিল্প স্থাপন করার এবং ভূমির সীমিত ব্যবহার ভিত্তিক আধুনিক সেবাখাত যেমন- ব্যাংক, ইন্সিওরেন্স ও ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, আইটি ইন্ডাস্ট্রি, বিনোদন শিল্প, পর্যটন শিল্প, পরিবহন, টেলিকমিউনিকেশন, দূর-শিক্ষণ, এয়ার-হাব, ওয়াটার হাব, সিকিউরিটি সার্ভিস, বন্দর ও জাহাজ, টেলি-মেডিসিন ইত্যাদি সমৃদ্ধ করার উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করা হবে।
৫৭. দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্ত্বশাসন, ক্ষমতা ও তদারকি নিবিড় ও শক্তিশালী করা হবে। শেয়ারমার্কেট এবং ব্যাংক লুটের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে ভবিষ্যতে যাতে কেউ এমন দুর্নীতি-অনাচার করতে না পারে সেই লক্ষ্যে সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং রাষ্ট্রায়ত্ব¡ ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডে যোগ্য, সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হবে। ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। অর্থমন্ত্রনালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকসমূহ পরিচালনা ও তদারকির ভার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ন্যস্ত করা হবে।
গবেষণা ও উন্নয়ন (জ্উ)
৫৮. যে কোন আধুনিক ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন (জবংবধৎপয ্ উবাবষড়ঢ়সবহঃ -জ্উ) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জ্উ’র জন্য প্রয়োজন দক্ষ প্রকৌশলি, শিল্পবিজ্ঞানী এবং গবেষক। জ্উ খাতে বিনিয়োগ অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। জ্উ খাতে ব্যক্তি-খাত সহায়ক বাজেট বরাদ্দ রাখা হবে। একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবী জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির জগতে প্রবেশ করেছে। বৈশ্বিক এই উন্ন্য়নের ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বিএনপি জ্উ খাতের বিকাশ ও পরিবর্ধন করবে।
জনমিতিক লভ্যাংশ
৫৯. বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৩.২৫ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী কর্মক্ষম বয়সের মধ্যে পড়ে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর বিশাল তাৎপর্য রয়েছে। এই সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
৬০. বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায় বাংলাদেশে প্রতি বছর ২২ লক্ষ মানুষ কর্ম-বাজারে প্রবেশ করবে।

*‘প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে’