অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সম্পর্কের সমীকরণ পালটে দেয় সন্তানের আগমণ

1

মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ সন্তান-সন্ততি। নারীর পূর্ণতা ও পারিবারিক পরিমণ্ডলে মায়া-মমতার কোমল পরশ নিয়ে একটি শিশু জানান দেয় তার আগমনীবার্তা। নবজাতকের প্রত্যাশায় পারিবারিক আবহে দোলা দিয়ে যায় অপেক্ষার প্রহর- সবার মনে থাকে একটি সুস্থ-সুন্দর শিশুর আকাঙ্ক্ষা।

হবু বাবা-মা প্রথম যেদিন জানতে পারেন, অচিরেই তাদের জীবনে একজন নতুন মানুষ আসতে চলেছে – তখন তো খুশি ধরে রাখা দায়! সেই খুশি তারা সমাজ, সংসারকে চিৎকার করে জানাতে চায়। বাবা-মা হওয়ার সাথে সাথেই সব সম্পর্কের সমীকরণ পালটে যায়।

পরিবারে আসবে নতুন সদস্য। যেকোনো মা-বাবার কাছে এটা বড় ঘটনা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ জন্য আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির ঘাটতিই বেশি দেখা যায়। সন্তান জন্মের প্রায় পুরোটা ধকল ও দায়িত্ব মাকেই নিতে হয়।

মা’ ডাক শোনার স্বপ্ন প্রতিটি নারীর আর একজন নারী হয়ত পূর্ণতা পান মাতৃত্বেই। কিন্তু মা হতে যে দশ মাসের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়! এটি একটি মাত্র শব্দ, যার সাথে মিশে আছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। সন্তানের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা না করেই সন্তানকে মা পরম যত্নে বড় করে তোলেন, সেই গর্ভাবস্থা থেকেই। পৃথিবীতে একমাত্র মা-ই জানেন সন্তানকে গর্ভে ধারণ করার কষ্ট, ধৈর্য আর আনন্দের অনুভূতিটুকু।

প্রতিটি নারীর জীবনে এক অনন্য সময় গর্ভাবস্থা। এই সময়ে শারীরিক এবং মানসিক বিরাট পরিবর্তন আসে। এর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে অপেক্ষা করতে হয় সন্তানের আগমনের। তবে গর্ভাবস্থা কিন্তু একা নারীরই সামলানোর বিষয় নয়। গর্ভাবস্থায় বাবাদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এসময় স্বামী এবং পরিবারের লোকদের সহযোগিতা দরকার।

একটি পরিকল্পিত সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের অন্তত তিন মাস আগে থেকেই শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক প্রস্তুতি নেওয়া চাই বাবা-মায়ের। একটু একটু করে সঞ্চয় করা উচিৎ। প্রসব ও প্রসব-পরবর্তী খরচের প্রস্তুতি নেয়া, রক্তদাতার নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর, হাসপাতালে যাতায়াত-ব্যবস্থা, অফিস থেকে ছুটি, স্বজনদের সহায়তা—সবই মাথায় রাখতে হয়।

গর্ভবতী মায়েদের শরীরে হরমন পরিবর্তনের কারণে এ সময়ে তাদের অনেকেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে। আর এ কথাটি স্বামীসহ পরিবারের সকলকেই মনে রাখতে হবে। তাকে খুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে, কারণ এতে পরিবারের অনাগত সদস্যটিরই মঙ্গল। শারীরিক এবং মানসিকভাবে মা সুস্থ থাকলে তার প্রভাব যে পড়ে শিশুটির ওপরও।

গর্ভাবস্থায় বিষণ্ণতা
বিষণ্ণতা একধরনের আচরণগত সমস্যা যার ফলে মানুষের মন খারাপ থাকে বা নিজেকে অকর্মণ্য মনে হতে থাকে। মাঝে মাঝে এ ধরনের অনুভুতি সব মানুষেরই হয় তবে বিষণ্ণতার ক্ষেত্রে এসব অনুভুতি অনেকদিন ধরে এমনকি সপ্তাহ বা মাস ধরেও থাকতে পারে। বিষণ্ণতা মানুষের দৈনন্দিন সব কাজের উপরই প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন- আপনার চিন্তাভাবনা, কাজকর্ম, খাওয়া, ঘুম ইত্যাদি।

গর্ভাবস্থায় বিষণ্নতায় বাচ্চার ক্ষতিগর্ভাবস্থায় মা বিষণ্নতায় ভুগলে সেটা সন্তানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। মা বিষণ্নতায় ভুগলে পরবর্তী সময়ে সন্তান জন্মলাভের পর ওই সন্তানের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং একপর্যায়ে সেও বিষণ্নতার শিকার হতে পারে। ফলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এছাড়াও গর্ভাবস্থায় বিষণ্নতার শিকার মায়েদের সন্তানের মস্তিষ্ক বিকাশ সঠিকরূপে হতে পারে না। বিষণ্ণতা গর্ভের শিশুর মস্তিস্ক বিকাশে বাধা প্রদান করে।

সন্তানকে প্রথম স্পর্শ, সেই অনুভূতিতে মিশে থাকে আবেগ, গর্ববোধ। বাবা হওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সন্তানপালনের দায়িত্ব। সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে তাকে সব সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়াটাও একজন বাবার কর্তব্য।

সন্তান শুধু জন্ম দিলেই হয় না, তাকে পরিপূর্ণভাবে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বও বাবা-মায়ের। প্রতিটি সন্তানেরই প্রথম শিক্ষা শুরু হয় তার পরিবার থেকে। তাই সন্তানকে সুন্দরভাবে বড় করে তোলার জন্য হতে হবে ভালো বাবা-মা।

পরিবারের নতুন সদস্যের আগমন পৃথিবীতে, তাকে যে কেবল স্থান ছেড়ে দিতে হবে তাই নয়, তার জন্য তৈরি করতে হবে উপযুক্ত পরিবেশ। সেই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে গর্ভবতী মায়েরও। আর তাই এই ক্ষেত্রে হবু বাব-মায়ের রয়েছে কিছু করণীয়।

অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য প্রস্তুত থাকুন
প্রথমেই মেনে নিতে হবে যে, সব কিছু আপনার পরিকল্পনামাফিক হবে না। কাজেই এমন কিছু ঘটলে ঘাবড়ে যাবেন না। বাবা-মা হওয়ার সাথে সাথেই সব সম্পর্কের সমীকরণ পালটে যায়। আপনার সঙ্গীর সাথে সম্পর্কটাও কিন্তু তখন আগের মতো থাকবে না। দুশ্চিন্তা না করে যাই ঘটুক না কেন সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবেলা করুন।

কেমন বাবা-মা হতে চান?
সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন নিশ্চয়ই! এর সাথে সাথে ভেবে দেখুন তো আপনারা কেমন বাবা-মা হতে চান? সঙ্গীর সাথে বিষয়টি আলোচনা করুন। সুখী পরিবার গড়ার ছকটা তৈরি করে রাখুন আগে থেকেই। সন্তান জন্মানোর পর তাকে যেমন বাবা-মা দুজনেরই সময় দেয়া দরকার, তেমনি নিজেদের জন্যও সময় বের করতে হবে।

সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকুক অটুট
আপনারা প্রথমবারের মতো বাবা-মা হন বা তৃতীয়বারের মতো, সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে যেন ভাটা না পড়ে। প্রতিদিনই পরস্পরকে সময় দেয়ার চেষ্টা করুন। শিশুর জন্মের পর বাড়িতে সবকিছুই গোলমেলে হয়ে যায়, তার মানে এই নয় যে সঙ্গীর খোঁজ নেবেন না। কিছুটা সময় বের করে নিন নিজেদের জন্য।

নিজেকে ভুললেও চলবেনা
এত হট্টগোলের মাঝে নতুন মায়ের নিজেকে হারিয়ে ফেললে হবে না। মনে রাখতে হবে যে আপনি ভালো থাকলেই ভাল থাকবে আপনার সন্তান। আপনার যদি অভ্যাস থাকে দৌড়ানোর, সাইকেল চালানোর, যোগব্যায়ামের বা অন্য কোনো নিজস্ব কাজের, তাহলে তার জন্য সময় বের করুন। সে সময় সন্তানকে রেখে যান আপনার সঙ্গীর কাছে। প্রতিদিনের হাজারো কাজের মধ্যে ঘণ্টা খানেকের এই বিরতি আপনাকে মানসিক শক্তি যোগাবে। তাই কে কি ভাবলো তার তোয়াক্কা না করে নিজের কথাও ভাবুন।

কেউ সাহায্য করতে চাইলে না নয়
সব কাজ নিজে করার চেষ্টা করবেন না। কেউ যদি সাহায্য করতে চায় আপনার রান্নায়, কাপড় ধোঁয়ায় কিংবা শিশুর দেখভালে – তাহলে সেই সুযোগ গ্রহন করুন। যদি বিষন্ন বোধ করেন, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাহায্য নিন।

সব উপদেশ কানে নেবেন না
গর্ভাবস্থায় বা নতুন মায়েদের ক্ষেত্রে, আশেপাশের মানুষের উপদেশের শেষ থাকে না। কি করতে হবে, কি করা যাবে না থেকে শুরু করে ‘এটা এভাবে করছো কেন’, ‘আমরাও বাচ্চা মানুষ করেছি’ – এমন অনেক কথাই শুনতে হয়। সব কথাই কানে তুলতে হবে তা নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে যায়। আর বাবা-মা হওয়ার অভিজ্ঞতা প্রত্যেকের জন্যই নতুন। কাজেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়বেন না। আপনার কোনো কিছু নিয়ে দ্বিধা থাকলে জিজ্ঞেস করুন আপনার চিকিৎসককে।

শিশুর জন্ম আনন্দের সঙ্গে অনেক দায়িত্ব বয়ে আনবে এটা মেনে নিন আর সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন। আপনার সঙ্গীর সাথে আলোচনা করুন খোলাখুলিভাবে। আর সব ঝামেলার জন্য নিজেকে দোষ না দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় সমাধানের চেষ্টা করুন। সাহায্যের দরকার হলে সেটা চাইতে একদমই দ্বিধা করবেন না।

একজন ভালো বাবা হতে মাথায় রাখতে হবে এই বিষয়গুলি –

আর্থিক বিষয়গুলির সুপরিকল্পনা করা জরুরি
সন্তানের জন্ম থেকে শুরু করে ডাক্তার, ওষুধ, সবমিলিয়ে খরচ প্রচুর। বাজারের জিনিসপত্রের দাম এখন আগুণ। কিন্তুতা বলে তো আর সন্তানের সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে কোনওরকম আপোস করা যায় না। তাই সন্তানকে সুরক্ষিত জীবন দিতেআর্থিক বিষয়গুলি পূর্বপরিকল্পনা করা জরুরি।

হেলদি লাইফস্টাইল বজায় রাখুন
মায়ের গর্ভে জন্ম নিলেও, সন্তানের উপর বাবার সমান প্রভাব থাকে। সন্তানের সুস্বাস্থ্য নির্ভর করে বাবার শারীরিক সুস্থতার উপর। তাই হেলদি লাইফস্টাইল বজায় রাখুন। নিয়মিত শরীরচর্চা, হেলদি খাওয়াদাওয়া এবং সময়ে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
মদ্যপান বা ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন

মদ্যপান বা সিগারেট খাওয়ার মতো ক্ষতিকারক অভ্যাস সন্তানের শরীরেও ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। তাই এই অভ্যাসগুলো আগে পরিত্যাগ করুন, তারপরই ফ্যামিলি প্ল্যানিং করুন। নিজের সন্তানকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন উপহার দিন।
ব্যবহার সংযত রাখুন

সন্তানের উপর যাতে কোনওরকম খারাপ প্রভাব না পড়ে, সে খেয়াল বাবা-মাকেই রাখতে হয়। তাই সন্তানের সামনে উগ্র ব্যবহার বা রেগে গেলে তা সন্তানের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকী, সন্তানের মনে আপনার সম্পর্কে খারাপ ধারণা গড়ে উঠতে পারে।

সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে, আগে নিজে সন্তানের কাছে আদর্শ হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। সন্তানের উপর বাবার প্রভাব অনেক বেশি।

১ টি মন্তব্য
  1. অশা বলেছেন

    ভাইয়া প্লিজ একটা ইনফরমেশন দিবেন!???