অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বিচারপতিকে অসম্মান: ফেনীর সাবেক জেলা জজকে জরিমানা

0
.

আদালত অবমাননার দায়ে ফেনীর সাবেক জেলা জজ মো. ফিরোজ আলমকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছে হাইকোর্ট। জরিমানার অর্থ ১৫ দিনের মধ্যে জমা না দিলে তাকে সাত দিনের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

বুধবার এ বিষয়ে জারি করা রুলে চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।

এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ভ্রমণ ও পরিদর্শনের ক্ষেত্রে প্রটোকল ব্যবস্থা নিয়ে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। এসব নির্দেশনা সার্কুলার আকারে জারি করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও আইন সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আদালতে ফিরোজ আলমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফয়সাল এইচ খান ও মইন উদ্দিন টিপু। অন্যদিকে ফেনী জেলা জজ আদালতের দুই কর্মচারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও মিনহাজুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাফি আহমেদ।

আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আদালত অবমাননার দায়ে তৎকালীন জেলা জজ ফিরোজ আলমকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে আদালত। ১৫ দিনের মধ্যে তাকে জরিমানার এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। অনাদায়ে সাতদিনের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সফরে প্রটোকল দেয়ার বিষয়ে জেলা জজ শিপ ও জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারদের কয়েক দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে রায়ে। যেগুলো সার্কুলার আকারে জারি করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও আইন সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

নির্দেশনা জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাফি আহমেদ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের কীভাবে প্রটোকল দিতে হবে, সে বিষয়ে আদালত চার দফা নির্দেশনা দিয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ২০ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলামের সফরসূচি জানিয়ে ফেনী জজ আদালতে চিঠি দেয়া হয়। রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পাঠানো চিঠি পরদিন জজ আদালত গ্রহণ করে। ২২ অক্টোবর বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম ট্রেনে ফেনীতে পৌঁছান। দুপুরে স্টেশনে নেমে জেলা জজ আদালতের কোনো প্রতিনিধি না পেয়ে ফোন করেন। তখন জেলা জজ আদালতের এক কর্মচারী ফোন ধরে বলেন, জেলা জজ এজলাসে আছেন, এজলাস থেকে নামলে বিষয়টি তিনি জেলা জজকে জানাবেন। এর কতক্ষণ পর আবার তিনি ফোন করেন। তখনও বিচারপতি আমিরুল ইসলামের ফোন ধরে আদালতের ওই কর্মচারী একই কথা বলেন।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিকেল সাড়ে ৪টায় বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম তার ছেলেকে জেলা আদালতে পাঠান। কিন্তু সেখানে জেলা জজ বা কোনো কর্মকর্তা তার সঙ্গে কথা বলেননি। পরে জেলা প্রশাসক ওই বিচারপতির প্রটোকলের ব্যবস্থা করে।

সফর শেষে বিচারপতি ঢাকায় ফেরার পর ওই বছরের ২৯ অক্টোবর ফেনীর জেলা জজ মো. ফিরোজ আলমসহ তিনজনের প্রতি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার রুল জারি করে হাইকোর্ট।

জেলা জজ ফিরোজ আলম ছাড়া অন্য দুজন হলেন, ফেনী জেলা আদালতের নাজির ইয়ার আহমেদ ও নায়েবে নাজির আলতাফ হোসেন।

আদালত অবমাননার নোটিশ পেয়ে ওই বছরের ১২ নভেম্বর হাইকোর্টে হাজির হয়ে তিনজনই মৌখিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। হাইকোর্টে তাদের লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা দাখিল করতে বলে ১৭ নভেম্বর আদেশের জন্য রাখে।

কিন্তু নির্ধারিত তারিখের আগেই জেলা জজ ফিরোজ আলম আপিল বিভাগে আবেদন করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে।

পরবর্তীতে ২০১১ সালের ৩১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ ফিরোজ আলমের আবেদনটি খারিজ করে রুল শুনানির আদেশ দেয়।

সেই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার চূড়ান্ত রুল শুনানি শেষে এ রায় দিল হাইকোর্ট।