অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মোকাবেলায় চট্টগ্রামে সর্বাত্মক প্রস্তুতি

0

fuld_86চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে চট্টগ্রামের সরকারি ও আধাসরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব রকমের ছুটি আপাততে বাতিল করা হয়েছে। এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভায় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব রকমের ছুটি বাতিলের কথা জানান কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।

এদিকে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সংকেত বাড়লে সেক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণে রাতে বৈঠক করেছেন বন্দর উপদেষ্টা কমিটি।

রাত ৮টায় জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভায় জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় নেয়া হয়েছে সম্ভাব্য সবধরনের প্রস্তুতি। এর অংশ হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে উপকূলীয় উপজেলার সকল স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলো। ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা পর্যায়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার পাশাপাশি সকল উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। জেলা কন্ট্রোলরুমের নম্বর হচ্ছে ৬১১৫৪৫।

CTG PIC DC-1
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জনাব মেজবাহ উদ্দিন। ছবিঃ সংগৃহীত

তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে, বাংলাদেশ বেতারে সতর্কতা সংকেত বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে স্বেচ্ছাসেবকরা ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার কাজের জন্য ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে অবস্থান করছে। জেলা প্রশাসনের ভা-ারে পর্যাপ্ত ত্রান মজুদ রয়েছে এছাড়া উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে।

সভায় ফায়ার সার্ভিস, আনসার ভিডিপি, রেড ক্রিসেন্ট, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বিদ্যুৎ, পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তরসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।তারা ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় তাদের সব ধরণের প্রস্তুুতির কথা জানান।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’তে রূপ নেয়ায় এর আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। রাতে অনুষ্ঠিত জরুরী বৈঠকে করণীয় নির্ধারণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার পণ্য ওঠা-নামার কাজ চলছে।

বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো.জাফর আলম জানান, চার নম্বর সংকেত হলে যেসব প্রস্তুতি নিতে হয় তা আমরা সম্পন্ন করেছি। সংকেত বাড়লে নিয়ম অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্তকতা সংকেত চার নম্বরে থাকা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, আজ শুক্রবার বন্দরে ৬টি জাহাজ জেটিতে প্রবেশ করবে। আটটি জাহাজ জেটি ত্যাগ করবে।

সংকেত বাড়তে থাকলে পণ্য ওঠা-নামার কাজ বন্ধ করে যন্ত্রপাতী ঢেকে দেওয়া হবে, লাইটগুলো খুলে নামানো হবে। এছাড়া বন্দরের অন্যান্য সম্পদ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গাস্থ আবহাওয়া অফিস জানায়, বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি গভীর নিন্মচাপ অবস্থান করছে। নিম্নচাপটি আরো শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’তে রূপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।

এটি বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

ঘূর্ণিঝড়টি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে চট্টগ্রামের বৃহস্পতিবার ভোর হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের পতোঙ্গা আবহাওয়া অফিসে ২০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত ধারণ করা হয়েছে।