অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

দুই পুলিশের দেয়া রক্তে বেঁচে যাবে রাঙামাটির সেই গলাকাটা শিশু!

0
.

আলমগীর মানিক, রাঙামাটিঃ
রাঙামাটিতে সৎ মায়ের ধারালো ছুরির আঘাতে ছয় ইঞ্চির মতো গলা কাটা শিশু ফারজানের জ্ঞান ফিরেছে।রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়া ছোট্ট শিশুর রক্তশূণ্যতার কারণে তাৎক্ষনিকভাবে অপারেশন করতে পারছিলোনা রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

 চারবছরের শিশুটি যখন আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়েই কর্তব্যরত দুইজন পুলিশ সদস্যের দেওয়া দুই ব্যাগ রক্তদানের ফলে নিস্তেজ ফারজান আবারো সতেজ হয়ে উঠেছে।

এর পরই কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার কেটে ফেলা গলা ঘন্টাব্যাপী চেষ্ঠা চালিয়ে চামড়া জোড়া লাগিয়ে প্রাণে বাঁচিয়ে তুলেছেন।

তথ্যানুসারে জানাগেছে, রবিবার দুপুরে রাঙ্গামাটিতে সাড়ে চার বছর বয়সী এক শিশুকে গলা কেটে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে শিশুটির সৎ মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় গুরুতর আহত ওই শিশুটির জীবন বাঁচাতে রক্ত দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের দুই সদস্য।

১২ জানুয়ারি রবিবার দুপুরে শহরের কোতোয়ালি থানাধীন কোর্ট বিল্ডিংস্থ সোনালীবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

গ্রেফতার হওয়া সৎ মা।

সেখানে শিশুটির জীবন বাঁচাতে দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে রক্তের প্রয়োজন পড়ে। তখন এগিয়ে আসেন রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের দুই সদস্য কনস্টেবল মোঃ শাকিল(নং-২১২০) ও কনস্টেবল আল মাসুদ রাজু(৩০৯৪)। শিশুটির জীবন রক্ষার্থে দুই ব্যাগ রক্ত দান করেন তারা।

আহত ওই শিশুটির মা ফারজানা আক্তারের ভাষ্য, তার স্বামীর প্রথম স্ত্রী কাউসার ফেরদৌস দুই সন্তান নিয়ে তার বাবার বাড়িতে থাকেন।

রবিবার দুপুরে তার মেয়ে ফারজান আহম্মেদকে ঘরে ছবি আঁকতে দিয়ে কাপড় শুকাতে দেওয়ার জন্য বাসায় ছাদে যান। একপর্যায়ে তিনি তার ঘরের টয়লেট থেকে গোঙরানির শব্দ পান। তখন ঘরে এসে দেখেন, তার সতীন কাউসার ফেরদৌসের হাতে ফল কাটার ছুরি এবং সেটি দিয়ে আঘাত করতে তার দিকে তেড়ে আসছেন। এসময় তিনি চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এসে তার সতীনকে আটক করে। তখন টয়লেট থেকে গলাকাটা অবস্থায় গুরুতর আহত শিশু ফারজানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

শিশু ফারজিনের আপন মা।

এদিকে হাসপাতালের সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির গলার বেশ কিছু অংশ কেটে গেছে। অস্ত্রোপচারের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পরই অভিযুক্ত কাউসার ফেরদৌসকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ শওকত আকবর খান জানিয়েছেন, শিশুটিকে হাসপাতালে আনার আগেই তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এখানে আনার পর সে অনেকটা নিস্তেজ হয়ে যায়। বিষয়টি বুঝতে পেরে আমরা তাড়াতাড়ি রক্ত খুঁজতে বললাম স্বজনদের। হাতে সময় বেশি ছিলোনা দেখে আমরা উৎকন্ঠিত ছিলাম। বিষয়টি বুঝতে পেরে এবং ঘটনার আকস্মিকতায় আমাদের এখানে দায়িত্ব পালন করা দুইজন পুলিশ সদস্য এগিয়ে এসে জানালেন তাদের রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ এবং তারা রক্ত দিবেন। তাৎক্ষনিকভাবে আমরা রক্ত সংগ্রহ করে শিশুটির শরীরে দিই। সাথে সাথে বেশ বড় আকারের কাটা অংশটি সেলাই করতে থাকি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আল্লাহর রহমতে শিশুটির অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। পরবতীতে শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্যে আমরা তাকে চট্টগ্রাম রেফার্ড করেছি।

শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ শওকত জানান, দুইজন পুলিশ ভাই যদি তাৎক্ষনিকভাবে রক্ত দিতে এগিয়ে না আসতেন তাহলে হয়তো শিশুটির পরিস্থিতি অন্যরকম দুঃখজনকও হতে পারতো। নিঃসন্দেহে এটি একটি মহৎ কাজই করেছে দুই পুলিশ সদস্য।

সর্বশেষ তথ্যানুসারে জানাগেছে, শিশু ফারজান চট্টগ্রাম মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছে। রাত আটটার দিকে তার জ্ঞান ফিরেছে বলে নিশ্চিত করেছেন তার পিতা ফারুক আহাম্মেদ তালুকদার। তার অবস্থা আগের চেয়ে সামান্য উন্নত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।