অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রামের আলোচিত গণহত্যা মামলার রায়ে ৫ পুলিশের ফাঁসির আদেশ

1
.

চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত গণহত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। নগরীর লালদীঘির মাঠে ৩২ বছর আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা (চট্টগ্রাম গণহত্যা) মামলার রায়ে আদালত ৫ জনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন।

আদালত সুত্রে জানাগেছে, দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া দণ্ডবিধির ৩২৬ ধারায় প্রত্যেকের আরও দশ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

.

রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ আজ সোমবার (২০ জানুয়ারী) চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় স্পেশাল জজ মো. ইসমাঈল হোসেনের আদালত এই রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জে সি মণ্ডল, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, শাহ মো. আবদুল্লাহ ও মমতাজ উদ্দিন। আসামিরা সবাই পুলিশ সদস্য।

মোট ৮ জন আসামীর মধ্যে মামলা চলাবস্থায় ৩ জনের মৃত্যুর কারণে তাদের নাম বাদ পড়েছে। একজন পলাতক রয়েছে।

.

গতকাল রবিবার যুক্তিতর্ক সম্পন্ন শেষে মামলার আসামি পুলিশ বাহিনীর তৎকালীন সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, শাহ মো. আবদুল্লাহ ও মমতাজ উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানো হয়। আজ রায় ঘোষণাকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আদালত আজ রায় ঘোষণা করেছেন।

.

তিনি বলেন, সেদিনের শেখ হাসিনার সমাবেশের আগে তৎকালীন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা’র অফিসে গোপন সভা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় শেখ হাসিনাসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের হত্যা করার। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে ঘটনার দিন পেট্রোল ইনস্পেক্টর গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল ও জামিন বাতিল হওয়া চার পুলিশ সদস্য পাঁচ রাউন্ড করে গুলি চালান। তৎকালীন সিএমপি’র দায়িত্বশীল ৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা জামিন বাতিলকৃত চার আসামিকে শনাক্ত করেছেন এবং আদালতে তাদের সাক্ষ্য প্রদানে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এমপিসহ ৫৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রসঙ্গত: ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুযারি সংঘটিত গণহত্যায় ২৪ জন নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেন, অসংখ্য আহত হন। সেদিন চট্টগ্রাম নগরের লালদিঘি ময়দানে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ ছিল। সমাবেশে যোগ দিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার গাড়িবহর নিউমার্কেট মোড় অতিক্রম করে জিপিওর সামনে আসে। তখন আচমকা গর্জে উঠে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের রাইফেল। এলোপাথাড়ি গুলিতে একে একে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মো. হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, এথলেবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন কুমার বিশ্বাস, স্বপন চৌধুরী, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দু মিয়া, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, শাহাদাত, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া ও মো. কাসেম। পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণের সময় মানববেষ্টনী তৈরি করে শেখ হাসিনাকে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।

নৃশংস এ হত্যার ঘটনায় ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা বাদি হয়ে চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। (পরে বাদী মারা যান)

এর আগে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আমলে এ ঘটনায় কেউ মামলা করার সাহস করেননি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। আদালতের আদেশে সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি প্রথম এবং অধিকতর তদন্তশেষে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় অভিযোগপত্র দাখিল করে।অভিযোগপত্রে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাসহ আট পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়।

মামলার অপরাপর আসামিরা হলেন : ইনস্পেক্টর গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল, কনস্টেবল মুশফিকুর রহমান, বশির উদ্দিন, আব্দুস সালাম, প্রদীপ বড়ুয়া, মমতাজ উদ্দিন ও মো. আবদুল্লাহ। গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল ছিলেন কোতোয়ালী অঞ্চলের পেট্রোল ইন্সপেক্টর। ঘটনার পর থেকেই তার কোন হদিস নেই। ২০০০ সালের ৯ মে এই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

এ মামলার বাদি আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা, প্রধান আসামি তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা, তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি আব্দুল কাদের এবং মামলার এক আসামি পুলিশ কনস্টেবল বশির উদ্দিন ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেন।