অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত

0

পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ আরো কিছুটা উত্তর পূর্বে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেঁয়ে আসছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। তাই দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে বিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত, কক্সবাজারে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত, মংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। এর আগে সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর ৪ নং সতর্কতা সংকেত বহাল রাখার কথা বলা হয়েছিল বিজ্ঞপ্তি দিয়ে।এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষ বহিনোঙ্গরে অবস্থানরত ছোট বড় সকল জাহাজকে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান করার জন্য বলা হয়েছে।

শুক্রবার সকাল ৬টার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছিলেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ শুক্রবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১ হাজার ১১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে অবস্থানরত মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে ৩৪ দশমিক ৪ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে দু’দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। শুক্রবার সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে নগরবাসী কিছুটা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শেখ হাসানুর রশিদ বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের কাছ থেকে কিছুটা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে সরে এসে সাগরের পশ্চিম মধ্য ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। তবে এর গতি অনেকটাই কম। বর্তমান গতি অব্যহত থাকলে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলে আসতে আরো দু’দিন লাগবে।’

বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে হবে।

বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনও আসেনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান জানান, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এটি কখন, কোথায় আঘাত হানতে পারে- তা নিয়ে আগাম কিছু বলা যাচ্ছে না।

“ঘূর্ণিঝড়টি ভারত-বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার শঙ্কা যেমন রয়েছে, তেমন প্রচুর বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এ নিয়ে চূড়ান্ত পূর্বাভাসের আগে আরও কিছু সময় পর্যবেক্ষণ করতে হবে।”

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলের তালিকা অনুযায়ী এ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রোয়ানু’। মালদ্বীপ এ নামটি প্রস্তাব করেছিল।

এদিকে চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সরকারি ও আধা সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব রকমের ছুটি আপাততে বাতিল করা হয়েছে। এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় নেয়া হয়েছে সম্ভাব্য সবধরনের প্রস্তুতি। এর অংশ হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে উপকূলীয় উপজেলার সকল স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলো। ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা পর্যায়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার পাশাপাশি সকল উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। জেলা কন্ট্রোলরুমের নম্বর হচ্ছে ৬১১৫৪৫।