অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ঢাকার ২ সিটির ভোট: বিজয়ী প্রার্থীর হার দেখিয়েছে ইসি!

0
.

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের ফলাফল জালিয়াতি করে একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীকে পরাজিত করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেন, এই অনিয়মে নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত। তারা বলেছেন, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার কোনো স্বচ্ছতা ছিল না। অর্থের বিনিময়ে পরাজিত প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে আর বিজয়ী প্রার্থীকে পরাজিত দেখানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ফল জালিয়াতির বিষয় প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা দক্ষিণের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ফলাফল স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

ফল জালিয়াতি করে ভোটে হারিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগসমর্থিত প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ আলমগীর।

তিনি বলেন, একটি কেন্দ্রে তার প্রাপ্ত ৪৪৯টি ভোট যোগ না করে বরং সেই ভোট তৃতীয় অন্য এক প্রার্থীর হিসেবে যোগ করে তাকে পরাজিত দেখানো হয়েছে। প্রথম দিকে তার অভিযোগ আমলে না নিলেও দ্বিতীয় দফায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ভোটের ফলাফল স্থগিত করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন।

তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে পরবর্তীকালে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। গত ২ ফেব্রুয়ারি রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা অনুসারে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ফলাফল ঘোষণা অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পোলিং এজেন্টদের কাছ থেকে পাওয়া হিসাবে আওয়ামী লীগসমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী জিতেছেন ২৭ ভোটে। কিন্তু রাতে প্রকাশিত বেসরকারি ফলাফলে টিফিন ক্যারিয়ার মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী জুবায়েদ আদেলকে জয়ী দেখানো হয় ২১০ ভোটে। শনিবার রাতেই তিনি রিটার্নিং অফিসে গিয়ে ধরনা দেন মোহাম্মদ আলমগীর। কিন্তু কেউ-ই তখন তার অভিযোগ কানে তোলেননি। পরে তিনি ইভিএমের কপি জোগাড় করে নিশ্চিত হলেন তিনিই বিজয়ী হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত (ঝুড়ি মার্কা) প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, সব যোগ-বিয়োগ করার পর, আমি জিতেছি। আমি রাতে সেগুনবাগিচায় গিয়ে জানতে পারি ফেল করেছি। কিন্তু ইভিএমের প্রিন্টেড কপির হিসেবে দক্ষিণ সিটির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়-২ পুরুষ কেন্দ্রে তিনি পান ৪৪৯ ভোট। কিন্তু ফলাফলে দেখানো হয়েছে তিনি পেয়েছেন ২০২ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী ইরোজ আহমেদের ঘুড়ি মার্কায় পড়েছে ৪৪৯ ভোট। আর ঘোষণাকৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী জুবায়েদ আদেলের টিফিন ক্যারিয়ার মার্কায় পড়ে ২২৬ ভোট। তার দাবি, তার প্রাপ্ত ৪৪৯ ভোট ঘুড়ি মার্কার প্রার্থীকে দেখানোর ফলে তিনি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, গড়ে সব সেন্টার মিলিয়ে টিফিন ক্যারিয়ারে দেখাচ্ছে ২৪৪৫ ভোট আর আমাকে দেখাচ্ছে ২২৩৫ ভোট। ঐ কেন্দ্রের ফল ঠিকমতো যোগ না করায় ২০০ এর বেশি ভোটের ব্যবধানে হেরেছি। তখন আমি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাকে বললাম যে এটা আপনি কি করলেন, এই ৪৪৯ ভোট তো আমার, এটা তো আপনারা মিসিং করছেন। রবিবার রিটার্নিং অফিসে গিয়ে কাগজপত্র নিয়ে আবারও বিষয়টি জানান রিটার্নিং কর্মকর্তাকে। পরে সন্ধ্যায় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ফলাফল স্থগিত করেন দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা। ইভিএম হওয়ার পরও কীভাবে এটি ঘটল তা খতিয়ে দেখতে কমিশনকে অনুরোধ করেছেন আলমগীর। একইভাবে দক্ষিণের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সঠিক ফলাফল ঘোষণা এবং ভোট পুনঃগননার জন্য রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন করেন ঠেলাগাড়ি প্রতীকের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী মো. বিল্লাল শাহ।

তিনিও অভিযোগ করেন, সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা না করে মৌখিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন, নির্বাচনের ফল জালিয়াতি আর গরমিলে ভরপুর।

অর্থের বিনিময়ে ফলাফল পালটানোর অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত মো. সালাউদ্দিন রবিন (টিফিন ক্যারিয়ার মার্কা)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগে রবিন উল্লেখ করেন, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর ভোট গণনার সময় আমার এজেন্টদের মৌখিকভাবে আমাকে বিজয়ী বলে কেন্দ্র থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। রিটার্নিং অফিসের বরাতে বিভিন্ন টেলিভিশন এবং অনলাইনে সালাউদ্দিন রবিনকে বিজয়ী করে সংবাদ পরিবেশন হয়। কিন্তু রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে আমার নাম পরিবর্তন করে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পিকে বিজয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভয়ংকর জালিয়াতি। তিনি ইভিএমের অরজিনাল কপি সরবরাহ করে ফলাফল পুনঃগণনার মাধ্যমে তাকে বিজয়ী ঘোষণার অনুরোধ করেন।

সালাউদ্দিন রবিন জানান, দ্বিগুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলুদ্বী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ এবং পল্লবী মাজেদুল ইসলাম মডেল হাইস্কুল কেন্দ্রে তার এজেন্টের কাছে ফলাফল ঘোষণার লিখিত কপি সরবরাহ করা হয়নি। তিনি বলেন, এই তিন কেন্দ্রের ফলাফল পরিবর্তন করে আমাকে হারানো হয়েছে। ইসির সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করেন সালাউদ্দিন রবিন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর রিটার্নিং অফিসার মো. আবুল কাশেম বলেন, মৌখিক ফলাফলকে চূড়ান্ত বলে গণ্য করার সুযোগ নেই। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার যে ফলাফল পাঠিয়েছেন তার ভিত্তিতেই ফল ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে কোনো ত্রুটি থাকলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কমিশন অথবা ট্রাইব্যুনালে যেতে পারেন। তবে ফলাফল ঘোষণার পর ইভিএম লক করা হয়েছে। এটি একমাত্র ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে পুনঃগণনা সম্ভব বলে মত দেন তিনি।

৯ মেয়র প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত : সদ্য শেষ হওয়া ঢাকার দুই সিটির জাতীয় পার্টি-জাপার প্রার্থীসহ ৯ জন মেয়র প্রার্থীই তাদের জামানত হারিয়েছেন। নির্বাচনে ৯টি রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থী ছিল ১৩ জন। নিয়ম অনুযায়ী, প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগ ভোট না পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী ছাড়া সবারই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী নৌকায় পেয়েছেন ৫৯ দশমিক ১০ শতাংশ ভোট। আর ধানের শীষের দুই প্রার্থী পেয়েছেন ৩৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট।

সূত্র- ইত্তেফাককে