অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

পটিয়ার পিটিআই’ এ যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৪ শিক্ষক প্রত্যাহার

0
.

চট্টগ্রামের পটিয়া প্রাইমারী ট্রেইনিং ইনষ্টিটিউট (পিটিআই) এর প্রশিক্ষনার্থীরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করেছে।

দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পেয়ে সোমবার থেকে তারা পরীক্ষায় অংশ নেবে। রবিবার বিকালে পটিয়ায় পিটিআই ক্যাম্পাসে আসেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক সোলতান মিয়া, সহকারী পরিচালক রাশেদা বেগম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম। পরে পিটিআইয়ে সুপারিন্টেন্ড এবং প্রশিক্ষকদরে সঙ্গে বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেয়।

এদিকে চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে যৌন হয়রানীর অভিযোগ এসেছে তাদেরকে আগামী রবিবারের মধ্যে পটিয়ার পিটিআই থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক সোলতান মিয়া জানান, ‘আন্দোলনকারীদের দাবী মেনে নেওয়া হয়েছে। চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে যৌন হয়রানীর অভিযোগ এসেছে তাদেরকে আগামী রবিবারের মধ্যে পটিয়ার পিটিআই থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। প্রত্যাহারের জন্য মন্ত্রনালয়ে সুপারিশ করা হবে। এরমধ্যে চার শিক্ষককে ক্লাস থেকে বিরত রাখা হবে।’

এদিকে, পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আন্দোলরত ২৮০ জন প্রশিক্ষনার্থী স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

এসময় আন্দোলরত প্রশিক্ষনার্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাইদ হোসেন, রাজেশ চৌধুরী, অসীম ঘোষ, সুষ্মিা চৌধুরী, সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিত পটিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা জাহান উপমা জানিয়ে ছেন, ‘প্রশিক্ষনার্থী চার প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর অভিযোগে লিখিত পাওয়া গেছে। সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পটিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটি তদন্ত করে আগামী পাচ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই তদন্ত কমিটির মাধ্যমে যাচাই বাচাই করে যারা দোষী কিংবা ঘটনায় জড়িত আছেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

প্রশাসনিকভাবে সর্বোচ্চ শাস্তি যতটুকু তাদের দেয়ার সুযোগ রয়েছে আমরা নীতিমালানুযায়ী সে শাস্তিটা নিশ্চিত করব। কারন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানীর কোন সুযোগ নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব ঘটনা কোন অবস্থায় কাম্য নয়। প্রশিক্ষনার্থীরাও শিক্ষক প্রশিক্ষকরাও শিক্ষক। শিক্ষকরা যা শেখাবেন আমরা তাই শিখি। সমাজটাতো তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এসব বিষয় যদি তারা এখানে চর্চা করে তাহলে শিক্ষকরা বাচ্চাদের কি শেখাবে? এটা কোনভাবে প্রশ্রয় দেয়ার সুযোগ নেই।’

আন্দোলনকারী প্রশিক্ষনার্থী সাইদ হোসেন জানায়, ‘যৌন কেলেঙ্কাকারীর অভিযোগ আসা চার শিক্ষককে প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবী মেনে নেওয়ার প্রেক্ষিতে আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছি। সোমবার থেকে আমরা ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নেব। আন্দোলনকারী এই শিক্ষার্থী আরও জানায়, ‘আমাদের কোনও নির্দোষ প্রশিক্ষনার্থী যাতে এই ঘটনায় হেনস্থা না হয় আমরা সেটা চাই। ঘটনার একটি সুষ্ঠু তদন্ত চাই। দোষীরা যাতে বিচারের মুখোমুখি হয়।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার ভোরে চট্টগ্রাম নগরের কালামিয়া বাজারের ভাড়া বাসায় চট্টগ্রামের পটিয়া পিটিআইয়ে চার প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে ও তার প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস এবং আত্মহত্যার চেষ্টা চালান পিটিআইয়ের প্রশিক্ষক (আইটি) দেবব্রত বড়ুয়া দেবু। তিনি ৩০টি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। পরিবারের লোকজন টের পেয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম নগরের রয়েল হাসপাতালে আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা।

প্রশিক্ষক দেবব্রত বড়ুয়া ফেসবুকে স্ট্যাটাস হিসেবে দেওয়া খোলা চিঠিতে অভিযোগ করেন, ‘পটিয়া পিটিআইর চারজন প্রশিক্ষক ভয়ংকর দুর্নীতিবাজ। তারা পরিক্ষায় পাস ফেল করার ফাঁদে ফেলে অনেক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। এ ধর্ষক চক্রের হাত থেকে পিটিআইর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রশিক্ষণার্থীদের একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই রক্ষা করতে পারেন।’ স্ট্যাটাসে যে চার প্রশিক্ষককে অভিযুক্ত করা হয়, তারা হলেন- ফারুক হোসেন (শারীরিক শিক্ষা), জসিম উদ্দীন (সাধারণ), রবিউল ইসলাম (আইসিটি) এবং সবুজ কান্তি আচার্য্য (চারু ও কারুকলা)।

এ ঘটনার পর থেকে গত শনিবার সকাল থেকে প্রশিক্ষনার্থীরা ক্লাস বর্জন করে টানা দুইদিন বিক্ষোভ করতে থাকে।