অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

করোনা উপসর্গ নিয়ে ৪ জেলায় শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু

0
.

যশোর, শেরপুর, কুষ্টিয়া ও দিনাজপুরে জ্বর-সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্ট থাকায় ‘করোনা সন্দেহে’ শিশুসহ অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার সকালে ৩ জনের ও রোববার রাতে এক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

যশোর: যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের জন্য নির্মিত আইসোলেশন ওয়ার্ডের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসাধীন এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

আজ সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়। ১২ বছর বয়সী কন্যাশিশুটিকে তার অভিভাবকরা রোববার বিকেল সাড়ে ৪ টায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরিফ আহমেদ জানান, ভর্তির সময় তার শারীরিক অবস্থার উপসর্গ দেখে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।

আজ সোমবার সকালে আইইডিসিআরের স্থানীয় প্রতিনিধিদের তার নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল।

এদিকে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর আইইডিসিআরের প্রতিনিধিরা উপসর্গ শুনে বলেছেন সে করোনো আক্রান্ত ছিল না। তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

যশোর করোনা ভাইরাস বিষয়ক চিকিৎসক কমিটির প্রধান গৌতম আচার্য বলেন, তাকে করোনা সন্দেহে ভর্তি নেওয়া হয়েছিল এবং যেহেতু করোনা সন্দেহ ছিল সে কারণে আইইডিসিআরের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, আইইডিসিআর ওই শিশুর লক্ষণ শুনে বলেছে সে করোনা আক্রান্ত ছিল না। তারা লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে বলেছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আজ সোমবার সকাল ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম সকাল সাড়ে ৯টায় গণমাধ্যমকে বলেন, ওই ব্যক্তি তিন দিন ধরে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি করানো ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) নিয়ম মেনে লাশ দাফন করা হবে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, আজ সকাল ৭টার দিকে ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এ সময় চিকিৎসকেরা দেখতে পান, হাসপাতালে পৌঁছার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসকদের জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি (৪০) পেশায় ইজিবাইকচালক ছিলেন। শহরের চৌড়হাস এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত শুক্রবার তাঁর সর্দি দেখা দেয়। এরপর কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। আজ সকালে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যায়। একপর্যায়ে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আরএমও তাপস কুমার সরকার বলেন, ইজিবাইকচালকের পরিবারে কোনো বিদেশি নেই বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। কিন্তু ইজিবাইক চালানোর সময় করোনা ভাইরাসের বাহক কারও সংস্পর্শে যেতে পারেন। এ জন্য নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে। এরপর লাশ সিভিল সার্জনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কয়েকজনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ওই ব্যক্তির গ্রামের বাড়িতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরীকে পুলিশসহ পাঠানো হয়েছে। নমুনার প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত বাড়িটি লকডাউন করা থাকবে।

দিনাজপুর: দিনাজপুরের বিরামপুরে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে মো. ফরহাদ হোসেন (৪০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

আজ সোমবার ভোরে উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নের তপসী গ্রামে তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় মৃত ব্যক্তির বাড়ির চার সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কার্যালয়। মৃত ফরহাদ হোসেন তপসী গ্রামের মৃত হানিফ উদ্দিনের ছেলে।

জোতবানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক জানান, ফরহাদ হোসেন কুমিল্লায় কৃষি শ্রমিকের কাজ করতেন। তিনি কুমিল্লায় যে বাড়িতে কাজ করতেন সেই বাড়ির মালিক সৌদি প্রবাসী।
সম্প্রতি বাড়ির মালিক সৌদি থেকে দেশে আসেন। এরপর কুমিল্লার প্রশাসন সৌদি প্রবাসীর ওই বাড়ির সকলকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেন।

এ সময় গত ১০/১২ দিন আগে ফরহাদ হোসেন জ্বর সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লা থেকে পালিয়ে নিজ বাড়িতে আসেন।
এছাড়া ফরহাদ হোসেন জন্ডিসেও আক্রান্ত হন। কিন্তু ফরহাদ হোসেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না গিয়ে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করাতে থাকেন।

সোমবার ভোরে ফরহাদ হোসেন মারা যান। ফরহাদ হোসেন মারা যাবার পর ওই পাড়ায় যাতে কোনো লোক ঢুকতে বা বের হতে না পারে সে জন্য গ্রাম পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে।

বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. সোলায়মান হোসেন মেহেদী জানান, মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাড়ির সকলকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

শেরপুর: শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ পলাশীকুড়া গ্রামে জ্বর এবং শ্বাসকষ্টে তিন দিন ভোগার পর মারা গেছেন এক ব্যক্তি। রোববার (২৯ মার্চ) দিবাগত রাতে তার মৃত্যু হয়।

তিনি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে ওই বাড়িসহ আশেপাশের ১০ বাড়ি ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
এছাড়া ওই ব্যক্তির করোনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আজ সোমবার নমুনা সংগ্রহের পর ওই ব্যক্তির দাফন ও জানাজা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম আনওয়ারুর রউফ।

ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গত তিন দিন আগে ওই ব্যক্তি জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে নালিতাবাড়ীর গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও আরিফুর রহমান। ভালুকায় তিনি নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা যায়।