অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

নিউইয়র্কে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ: লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা

0
.

নিউইয়র্ক থেকে শুভাশীষ বড়ুয়া:

মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। আমেরিকার শুধু একটি শহর নিউইয়র্কেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখের অনেক বেশি। আর এই লাখো আক্রান্তদের অনেকের আশেপাশে, খুব কাছাকাছি কিংবা একই ছাদের নিচে আমাদের বসবাস। ভাবতেই যেন কেমন লাগছে। একটু অসতর্ক হলেই যেন অনিবার্য সর্বনাশ। স্বজাতি, স্বদেশি, সহ বহু পরিচিত জনের অসুস্হতার খবর আসছে প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ। দেশ জুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৭৪ হাজার। মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ১৩৭ জনের।

সারি লাশের গাড়ী। আজ শনিবার ভোরে নিউইর্য়ক সিটি।

শুধু নিউইয়র্কেই ১ লাখ ৩ হাজার আক্রান্ত। ইতিমধ্যে নিউইয়র্কেই মৃত্যু বরন করেছেন ২ হাজার ৯শত ৯৫ জন। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।

মৃত্যুর কাতারে হতভাগ্য বাংলাদেশিদের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১৯ জন সহ আজ পর্যন্ত ৬১ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে শুধু এই ভাইরাসের কারনে।

নিউইয়র্কে নিহতদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন-সাহারা বেগম, মোস্তাক আহমদ, জিল্লুর রহমান, মো. ওয়াজিল্লাহ, মালেকুজ্জামান, আবদুল মালেক খান, আফজাল আহমদ, মো. মহসিন, রাশেদা আক্তার, শিপন মিয়া, আইয়ুব খান, সৈয়দা খাতুন, বদরুল হক, মহিকুজ্জামান, রহমান স্বপন, আবদুর রউফ, বিএনপির নেতা তানভীর হাসান, মুনিম চৌধুরী, নুসরাত মজুমদার ও সুরুজ খান, আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, নিশাত চৌধুরী , মুক্তিযোদ্ধা মো. ইব্রাহীম, জ্যামাইকার বাসিন্দা খালেদ হাসমত, আলোকচিত্রী স্বপন হাই, কায়কোবাদ, শফিকুর রহমান মজুমদার, আজিজুর রহমান, মির্জা হুদা, বিজিত কুমার সাহা, মো. শিপন হোসাইন, জায়েদ আলম, মুতাব্বির চৌধুরী, ইসমত ও মোশাররফ হোসেন।

দেশের বিভিন্ন স্টেট থেকে ১ শত এর বেশি এ্যাম্বুলেন্স এনে রাখা হয়েছে নিউইয়র্ক এর Bronx Zoo এর পার্কিং লটে।

এমন সংকটময় দিনে যদিও কারো মন ভাল থাকার কথা নয়, তবে মন্দের ভাল হচ্ছে গতকাল নিউইয়র্ক এর হাসপাতাল গুলোতে রোগী ভর্তি এবং মৃত্যুর হার কিছুটা কমেছে ।

এদিকে অজানা আশংকায় ম্যানহাটন সেন্ট্রাল পার্কে , ফ্লাসিং টেনিস স্টেডিয়ামে , জেকব জাবেত কনভেনশন সেন্টারে অস্হায়ী হসপিটাল নির্মাণ এবং ইউএস নৌবাহিনীর সিপ হসপিটাল কমফোর্টকে রেডি রাখা হয়েছে ।ভীতিকর এই পরিস্হিতিতে পুরো নিউইয়র্ক এখন ভুতুড়ে নগরীরতে পরিনত হয়েছে। পুলিশ কিংবা প্রশাসনের তেমন কড়াকড়ি না থাকলেও একেবারে অনন্যেপায় না হলে কেউ ঘর থেকেই বের হচ্ছেননা।

.

গৃহবন্দী বাংলাদেশিরা প্রতিদিন ফোন করে পরিচিত জন , বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এমনকি সামনের দরজার অনেক পরিচিত স্বদেশি প্রতিবেশির খোঁজও নিচ্ছেন কেবল ফোন করে।একটু সর্দি , জ্বর কাশি হলেই অজানা আতংক ভর করছে সকলের মনে।

এদিকে খুশির সংবাদ হচ্ছে খুবই ঘনিষ্ঠ পরিচিতদের অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৮/১০ দিন হাসপাতালে থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। অনেকে আবার ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে উঠছেন।হাসপাতালে ডাক্তার নার্সরা সাধ্যমত চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।এখনো প্রতিদিন করোনা টেস্ট করানোর জন্য হাসপাতালের সামনে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন শত শত মানুষ ।

উল্লেখ্য, মার্চ এর ১ তারিখে নিউইয়র্ক শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ১ জন। এক মাসের ব্যাবধানে তা আজ এক লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে।

শুভাশীষ বড়ুয়া ।
নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক।