বগুড়া থেকে বঙ্গভবনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান
লায়ন আনোয়ার হোসাইন উজ্জ্বল :
বগুড়ার সন্তান জিয়াউর রহমান , জন্মস্থান বগুড়া হলেও স্বীয় কর্মদক্ষতা, মেধা, প্রজ্ঞা, নেতৃত্বের গুণ সর্বোপরি দেশপ্রেমের আদর্শে বলীয়ান জিয়াউর রহমান নামটি আজও ইসলামী মূল্যবোধ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী দেশ প্রেমিক জনগণের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার প্রতীক হিসেবে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। একজন জিয়াউর রহমান নামটির সাথে বাংলাদেশের মানুষের প্রথম পরিচয় ঘটে ১৯৭১ সালে। পাক সামরিক বাহিনীর চালানো ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ” অপারেশন সার্চলাইট ” এ হাজারো নিরস্ত্র বাঙালীর নিথর দেহ রেখে তৎকালীন নেতৃবৃন্দ যখন জাতিকে অন্ধকারে রেখে সীমান্তের ওপারে পাড়ি দিয়েছিল ঠিক তখনই সেই বিখ্যাত ” ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ” এর মত আলোকবর্তিকা নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হয়েছিলেন শহীদ প্রসিডেন্ট জিয়াউর রহমান । বীর চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক কালুরঘাটের রেডিও স্টেশন থেকে তার বজ্র কণ্ঠে ধ্বনিত সেই বিখ্যাত স্বাধীনতার ঘোষণা মুক্তিকামী সাধারণ জনগণ এবং তৎকালীন ইতিহাসবিদ সহ পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সেনাদের রক্তের নাচন ধরিয়ে দিয়েছিল, কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর এবং সমগ্র বিশ্ববাসী জানতে পেরেছিল বাংলাদেশের মানুষের সক্ষমতা এবং সাহসিকতা । জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে সম্মুখ সমরে কৃতিত্বের সাথে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করার পেছনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি
২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পৈশাচিক আক্রমনের পর এদেশের মানুষ হয়ে পড়েছিল দিশেহারা। কী করবে কেউই যেন বুঝে উঠতে পারছিল না। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বর্বর সৈন্যদের বুটের তলায় আমাদের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে কি না- এ ভাবনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল তারা। ঠিক সে সময়ে যার কণ্ঠ এদেশের কিংকর্তব্যবিমুঢ় মানুষের সংবিৎ ফিরিয়ে এনেছিল তিনি মেজর জিয়া।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন বাঙালি অফিসার। তাঁর কণ্ঠে ২৬ মার্চ শোনা গেল স্বাধীনতাযুদ্ধের আহ্বান। স্বাধীনতার বাণী তিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সারা বাংলাদেশে। স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ বাংলাদেশের জনগণ সেদিন সাহস ফিরে পেয়েছিল ওই একটি কণ্ঠের দৃপ্ত উচ্চারণে। তারপরের ইতিহাস সবারই জানা। স্বাধীনতার পর নিষ্ঠাবান সৈনিকের ন্যায় জিয়া চলে গিয়েছিলেন নিজ পেশায়। কিন্তু সময়ের অনিবার্যতাই তাকে নিয়ে এসছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে।
মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়া দেশবাসীর কাছে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান হিসেবে পরিচিত হন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর। মূলত ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লব জিয়াউর রহমানকে রাজনীতির দৃশ্যপটে টেনে আনে। জাতির এক কঠিন দুঃসময়ে জিয়াউর রহমান শক্তহাতে হাল ধরেছিলেন। পর্দার অন্তরালে নানা রকম খেলা চলতে থাকার ওই ঘোর অমানিশার রাতে তিনি যেন আলোকবর্তিকা নিয়েই এসেছিলেন
সত্তরের দশকে সময়ের পরিক্রমায় কুক্ষিগত বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখন্ডতা কে অতল গহবর থেকে টেনে তুলতে শহীদ প্রসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে ভূমিকা রেখেছিলেন তা আজও সমগ্র বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনায়ক এর কাছে আদর্শ হিসেবে পরিগণিত । বিভাজনের রাজনীতিকে তিনি ঘৃণা করতেন । তাইতো ডান-বাম ও মধ্য পন্থীদের সমন্বয় করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ড তাকে সুরক্ষা প্রদান করার জন্য তিনি যেসব কার্যকর ভূমিকা রেখেছিলেন তা স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ কতিপয় দেশের রোষানলে পড়েছিলেন।
রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় অসংখ্যবার সেই সব রাষ্ট্রের সকল ষড়যন্ত্র তিনি কঠোর হস্তে দমন করতে পেরেছিলেন নিজ কর্মদক্ষতা ও বিচক্ষণতায়। দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণে তার গৃহীত কিছু কর্মসূচি আজও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে সাধারন মানুষ । শহীদ প্রসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেছিলেন – বিদেশে আমাদের প্রভু নেই বন্ধু আছে এটাই তার পররাষ্ট্র নীতি ছিল ” বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতাকে সমুন্নত রেখে বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে বন্ধুত্ব । ” মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তিনি তার সেই পররাষ্ট্রনীতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন ।
যা আজ ও অনেক বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে আইকন হিসেবে পরিগণিত । বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক জীবন মান উন্নয়নের জন্য তার গৃহীত ” খালকাটা কর্মসূচি ” যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা ঘটিয়েছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে । শুধু তাই নয় সমগ্র বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছিল তার এই কর্মসূচি ।
বাকশাল কায়েম করে গণতন্ত্রের কাফন ছাড়া দাফন করেছিল জিয়াউর রহমানের পূর্ববর্তী সরকার । সেই মৃত গণতন্ত্রকে পুনঃজন্ম দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান । শুধু তাই নয় দেশ ও জাতির প্রয়োজনে গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করার জন্য ” বহুদলীয় গণতন্ত্র ” ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন জিয়াউর রহমান ।
ইতিহাসবিদরা জিয়াউর রহমানকে ” গণতন্ত্রের পিতা ” হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
শহীদ জিয়াউর রহমানের গৃহীত পররাষ্ট্র নীতি, জনবান্ধব ও গণতান্ত্রিক কর্মধারা পছন্দ হয়নি দেশ ও বিদেশে থাকা বাংলাদেশ বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের । তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে শাহাদাত বরণ করেন জাতির এই সূর্যসন্তান । তার জানাজায় উপস্থিত প্রায় ৫০ লাখ জনতার ঢল প্রমাণ করে বাংলাদেশের দেশ প্রেমিক জনগণের হৃদয়ে কতটুকু ঠাঁই করে নিয়েছিলেন তিনি ।
” গণতন্ত্রের পিতা ” খ্যাত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৯তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে তারই অনুসৃত নীতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা , সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার দৃপ্ত প্রত্যয় হৃদয়ে ধারণ করে দেশ ও জাতির হারানো বাক স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকার পুনরুদ্ধারের লড়াই এ আসুন সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।
আজকের এই দিনে শহীদ প্রসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অমর হোক, বাংলাদেশের হারানো গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার হোক সেই কামনা
লেখক: লায়ন আনোয়ার হোসাইন উজ্জ্বল,
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি।