অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

করোনা ভাইরাস কী এবং কীভাবে

0
.

করোনা ভাইরাস কোন সিংগেল স্পেসিজের ভাইরাসের নাম নয়। এটা একটি ফ্যামিলি। বিভিন্ন প্রানীর দেহে এই ফ্যামিলির দুইশর বেশি ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়েছে।

এরমধ্যে মানব দেহে পাওয়া গেছে করোনা পরিবারের ছয়টি প্রজাতির ভাইরাস। এবার চীনের উহান থেকে যে আউটব্রেকটা হয়েছে এটা সপ্তম বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। সবগুলি ভাইরাসেরই আলাদা নাম আছে। এবারকার ভাইরাসটির নাম দেওয়া হয়েছে 2019 nCoV.

মানুষের শ্বাসনালীতে মূলত এই ভাইরাস আক্রমণ করে এবং শ্বাসনালীকে সংক্রমিত করে নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ প্রকাশ করে। অর্থাৎ জ্বর,সর্দি,কাশি ও শ্বাসকষ্ট – এই হলো এই রোগের লক্ষণ। রোগী মারা যায় তীব্র শ্বাসকষ্ট থেকে রেসপিরেটরি ফেইলিউর হয়ে।

ইতোপূর্বে সার্স ও মার্স নামে দুটি আউটব্রেকের কথা আমরা শুনেছি। এগুলো এই করোনা পরিবারের ভাইরাসেরই কাজ।

এই ভাইরাস ছড়ায় রেসপিরেটরি ড্রপলেটের মাধ্যমে। মানে হাঁচি, কাশি থেকে বাতাসে ছড়ায়, সেখানে থেকে শ্বাসের মাধ্যমে মানুষের দেহে ঢোকে।

চিকিৎসা নেই। এখন অব্দি ভ্যাক্সিনও নেই। প্রতিরোধের উপায় হলো আক্রান্ত রোগীকে আলাদা করে রাখা। মাস্ক ব্যাবহার করা, নিয়মিত হাতধোয়া। কন্ট্যাক্ট যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা। এমনকি হ্যান্ডশেক না করারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

চীনের উহান থেকে এই রোগ ছড়ালো কি করে? বলা হচ্ছে ওখানকার একটা মাংসের বাজার থেকে এটা ছড়িয়েছে৷ সমূদ্র তীরবর্তী ঐ বাজারটি বাদুর,সাপ, মুরগী, কুকুর, সামুদ্রিক প্রানী সহ অনেকধরণের প্রানীর পাইকারি বাজার৷

তবে এটি সাধারণ ধারণা মাত্র। নতুন প্রজাতির ২০১৯ এনসিভি ভাইরাসের জিন সিকুয়েন্স পরীক্ষা করার পর বিজ্ঞানীরা মনে করছেন মানবদেহে পূর্ববর্তী করোনা ফ্যামিলির ভাইরাসের মিউটেশন হয়ে নতুন প্রজাতির ভাইরাসের উদ্ভব হয়েছে। অর্থাৎ এটি মানবদেহেই মিউটেশনের ফল-এমনটিও হতে পারে।

সুতরাং এটি নিশ্চিত নয় যে চীনাদের খাদ্যাভ্যাসই এই রোগ ছড়ানোর জন্য দায়ী৷

পুনশ্চঃ করোনা ভাইরাস ইস্যুতে সবাই চীনাদের এক হাত নিচ্ছেন। এই ফাঁকে কেউ কেউ তাদের রেসিজম এবং ঘৃণাবাদ উগড়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ লিখেছেন হালাল খাবার খান বলে তারা ভাল আছেন। চীনাদের উপর অভিশাপ লাগছে ইত্যাদি।

অনেকেই হয়তো জানেন না, করোনা ফ্যামিলির পূর্ববর্তী একটি ভাইরাসের আউটব্রেকের নাম মারস (MERS). অর্থাৎ মিডিল ইস্ট রেস্পিরেটরি সিন্ড্রোম। মধ্যপ্রাচ্য থেকে যে রোগের উৎপত্তি। ৮০০ লোক মারা গিয়েছিল এই রোগে। এবং বলা হয় উট থেকে এই রোগের সূত্রপাত।

সৃষ্টির আদি থেকেই মানুষ ও অন্যান্য প্রানীকূল পরস্পরের পাশাপাশি থেকেই দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েছে৷ একে অন্যের রোগ শেয়ার করেছে। এটা নতুন কিছু না।
অহেতুক রেসিজম আর ঘৃণা ছড়াবেন না। অন্যের বিপদ নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করবেন না। সুস্থ থাকুন সুস্থ রাখুন। সবাইকে ভালবাসুন।