অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

করোনা পরিস্থিতির সুযোগে সীতাকুণ্ডে রাতের আঁধারে শিপ ইয়ার্ড দখলের অভিযোগ

0
.

করোনা পরিস্থিতির সুযোগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি শিপ ইয়ার্ড দখল করার অভিযোগ উঠেছে জনৈক সোলেমান কন্ট্রাকটরসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

এক মাস আগে একতরফাভাবে জাহাজ বিচিং এবং যৌথ মালিকানার ইয়ার্ড পুরো দখলে নিয়ে জাহাজ কাটা শুরুর পর মঙ্গলবার (১৬ জুন) সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাটঘর সংলগ্ন উত্তর সোনাইছড়ি মৌজার ইয়ার্ড থেকে অপর মালিক মো. কামাল পাশার প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড অপসারণ করে লোকজনে ইয়ার্ডে ঢুকতে দেয়া হচ্ছেনা বলে জানা গেছে।

ব্যবসায়ী মো. কামাল পাশা জানান, তার প্রতিষ্ঠান মোহরম ইস্পাত শীপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ এর জন্য ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সুপার সিক্স স্টার শীপ ব্রেকিং এর মালিক মোহাম্মদ মোজাহের সওদাগর, মোহাম্মদ ইউসুফ সওদাগর ও মোহাম্মদ শামসুল আলম এর কাছ থেকে স্থাপনাসহ কয়েক দাগের প্রায় দুইশ’ শতক জমি কিনেন।

আরেক ব্যবসায়ী মেসার্স এ ফাহিম এন্টারপ্রাইজ এর মালিক সোলেমান কনট্রাক্টরও ৫২ দশমিক ৯৮ শতক জমি কিনেন। এসব জায়গার সাথে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার বন্ধকী জমি আছে ৫২ দশমিক ৯৮ শতক।

এরি মধ্যে সব পক্ষের ব্যবসা ও জাহাজ কাটার সুবিধার জন্য স্ব স্ব ভূমির মালিকানা স্বত্ব ঠিক করে দেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক বরাবরে সম্প্রতি একটি চিঠি দেন।

.

কিন্তু তিন পক্ষের জায়গা মাপঝোক এর আগেই দেশের করোনাভাইরাস সংক্রামনে প্রশাসনের ব্যস্ততার সুযোগে পুরো ইয়ার্ড দখলের উদ্দেশে জাহাজ বিচিং করে এ ফাহিম এন্টারপ্রাইজ। এ অবস্থায় মোহরম ইস্পাত শীপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ এর ম্যানেজার মো. হাসান বাঁধা দিলে গত ১৩ মে তাকে জানে মেরে ফেলার হুমকী দেন এ ফাহিম এন্টারপ্রাইজ এর মালিক সোলেমান কনট্রাক্টর।

এ ব্যাপারে মো. হাসান ১৬ মে সোলেমান কনট্রাক্টরকে বিবাদী করে সীতাকুণ্ড থানায় জিডিও দায়ের করেন। কিন্তু বাঁধা উপেক্ষা করে জাহাজ কাটা অব্যাহত রাখেন সোলেমান কন্ট্রাকটর।

এই বিষয়টি জানিয়ে গত ১৬ মে সীতাকুণ্ড থানায় ইয়ার্ড ম্যানেজার মো. হাসান সাধারণ ডাইরী করেন। এর প্রেক্ষিতে ১৭ ও ৩০ মে দুই দফা ওসি তদন্ত শামীম সেখ ও তার ফোর্স সরেজমিন তদন্ত করেন।

বিষয়টি সুরাহার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরেও আবেদন করেন, মো. কামাল পাশার প্রতিষ্ঠান মোহরম ইস্পাত শীপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ। কিন্তু সব কিছু তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় সোমবার (১৫ জুন) রাতে পুরো ইয়ার্ডের আলো নিভিয়ে দিয়ে সোলেমান কন্ট্রাকটর ও মোজাহের সওদাগর বহিরাগত ভাড়াটে লোকজন দিয়ে ইয়ার্ডে থাকা কামাল পাশার নামের সাইনবোর্ড খুলে ফেলে। তার স্থলে তারা সেখানে পূর্বের মালিক মো. মোজাহের সওদাগর এর প্রতিষ্ঠান সুপার সিক্স স্টার শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এর সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়। এ সময় কামাল পাশার নৈশ প্রহরী মো. আবছার বাঁধা দিলে তাকে জানে মারার হুমকী ছাড়াও পুনরায় সাইনবোর্ড লাগানো হলে প্রতিষ্ঠানের মালিক কামাল পাশাকেও মেরে সাগরে ফেলে দেয়ার হুমকী দেয়। এর পর মঙ্গলবার সকালে ইয়ার্ডে ঢুকতে গেলে কামাল পাশার লোকজনকে ইয়ার্ডে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন মো. কামাল পাশা।

.

এ বাপারে জানতে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে ফোন কেটে দেন। সীতাকুণ্ড থানার ওসি তদন্ত শামীম সেখ একমাস আগে এই ইয়ার্ড দখল নিয়ে সীতাকুণ্ড থানায় করা ইয়ার্ড ম্যানেজার মো. হাসান এর জিডির বিষয়টিও অস্বীকার করেন।

মোহরম ইস্পাত শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডস্ট্রিজ এর মালিক কামাল পাশার দাবী, গত ১৬ মে জিডি করার পর ১৭ ও ৩০ মে দুই দফা ওসি তদন্ত শামীম সেখ ও এসআই টিকলু মজুমদার সরেজমিন তদন্তÍ করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে গত একমাস ধরে পুলিশ কোন ব্যবস্থা না নিয়ে রহস্যজনকভাবে নিরব ভূমিকা পালন করেন। যে কারণে জমির আগের বিক্রেতা মোজাহের সওদাগর ও তার সাবেক ভাড়াটিয়া সোলেমান কনট্রাকটর আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং সর্বশেষ সোমবার রাতের ঘটনা ঘটায়।

কামাল পাশার দাবী তিনি, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সুপার সিক্স স্টার শীপ ব্রেকিং এর মালিক মোহাম্মদ মোজাহের সওদাগর, মোহাম্মদ ইউসুফ সওদাগর ও মোহাম্মদ শামসুল আলম এর কাছ থেকে স্থাপনাসহ কয়েক দাগের প্রায় দুইশ’ শতক জমি কিনেছিলেন। এখন পুরোনা মালিকের সাইনবোর্ড স্থাপন করায় এসব ঘটনার সাথে সাবেক মালিক মোজাহের সওদাগরেরও যোগসাজশ আছে বলে মনে করছেন মো. কামাল পাশা।

সোমবার রাতের ঘটনা জেলা পুলিশ সুপার ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে লিখিত ভাবে জানিয়ে এর প্রতিকার দাবী করেন মো. কামাল পাশা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সুপার সিক্স স্টার শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের মালিক মোজাহের সওদাগর পাঠক ডট নিউজকে বলেন, আমি ৭/৮ বছর আগে আমার ইয়ার্ডের জায়গা ব্যাংকের কাছে বন্ধক দিয়ে ছিলাম পরে সে জায়গা থেকে কামাল পাশাসহ আরও কয়েকজন ব্যাংক থেকে কিনে নেয়। কিন্তু কামাল ইয়ার্ডে জায়গা কিনলেও তার যাতায়াতের রাস্তা নাই। আমার মালিকানাধীন রাস্তা দিয়ে তার ইয়ার্ডে যাতায়াতের বাধা দিয়েছে আমার দারোয়ানরা। তার ইয়ার্ড দখল বা সাইবোর্ড ফেলে দিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড লাগানোর অভিযোগ মিথ্যা।

তবে এ বক্তব্যে বিরোধীতা করে কামাল পাশা বলেন, যাতায়াতের রাস্তাটি মালিক চৌধুরী নুরুল হকে মালিকানাধীন জায়গা। ১৯৮৫ সালে এটি সার্বজনিনভাবে যাতায়াতের রাস্তা হিসেবে স্বীকৃত হয় এবং এ রাস্তা শুধু আমার ইয়ার্ড না, অন্যান্য ইয়ার্ড ও প্রতিষ্ঠানের যাতায়াতের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়া এটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা রয়েছে সার্বজনীন ব্যবহারে রাস্তা। মোজাহের সওদাগরের দাবী মিথ্যা বলে জানান কামাল পাশা।

এদিকে কামাল পাশার ইয়ার্ড দখল করে সাইন বোর্ড লাগানোর অভিযোগ অস্বিকার করেছেন সোলেমান কন্ট্রাকটর। তিনি পাঠক ডট নিউজকে বলেন, আমি কেন আরেকজনের ইয়ার্ড দখল করবো? সে (কামাল পাশা) আমার আপন ভগিনা। সে ইয়ার্ড কিনেছে। তার যাতায়াতের রাস্তা নাই। সে আমার ইয়ার্ডের উল্টর পার্শ্বে রাস্তা চাচ্ছে। কিন্তু সে বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে আসছে। সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি তার কোন জায়গা বা ইয়ার্ড দখল করি নাই। তার ক্রয় করা ১৪০ ফুট জায়গা তার দখলে আছে কিনা আপনারা সরেজমিনে আসলে প্রমান পাবেন।