অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

“যে শোক আজো স্বজনদের কাঁদায়”

0
.

আজ শোকাহত ১১ জুলাই। মিরসরাই ট্রাজেডি দিবস। দেখতে দেখতে পার হলো ‍‍‍‍‍‌‌‌‍‍‍‍‍‍‌‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‌‌‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‌‌‌‍‍‍‍‍‍‌‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‌‌‍‍‍‍‍৯ বছর। স্বজনের বুকফাটা আহজারীতে এখনো ভারী হয় আবুতোরাবের আকাশ বাতাস। চোখের জল শুকিয়ে শোকে পাথর। এখনো গভীর রাতে ভেসে আসে কান্নার রোল। স্মৃতি বলতে শুধুই ছবির ফ্রেম। নাড়ী ছেঁড়া ধন ছেলেকে হারিয়ে মা-বাবা সেই ছবি বুকে আকড়ে ধরে আহজারী করেন। কখনো কখনো হয়ে যান নির্বাক।

২০১১ সালের এইদিনে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় স্কুল ছাত্রসহ ৪৫ জন। শোকাহত পরিবারগুলোকে সান্তনা দিতে ছুটে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়া, সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দৌজা চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ বিদেশি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

মিরসরাই ট্র্যাজেডির সাত বছরের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর সাদেক বলেন, দুর্ঘটনায় স্কুলের ৩৪ জন ছাত্র মারা যায়। এ শূন্যতা কখনো পূরন হওয়ার নয়। তিনি বলেন, এখনো মাঝে-মধ্যে মনে হয়, ছেলেগুলো আমার আশেপাশে ঘুরাফেরা করছে। বিশেষ করে আবু সুফিয়ান, ধ্রুব নাথ ও কাজল নাথকে আমার খুব বেশি মনে পড়ছে। এরা তিনজনই খুব মেধাবী ছিল।

.

সেদিন যা ঘটেছিল:

১১ জুলাই সোমবার। মিরসরাই স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলের ফাইনাল জিতে মিনি ট্রাকে ফিরছিল সবাই। বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কের সৈদালী এলাকায় ট্রাকটি উল্টে ছিটকে পড়ে ডোবায়। ঘটনার পরপর ডোবার জল থেকে উদ্ধার হয় মরদেহ আর মরদেহ। মরদেহের মিছিলে সংখ্যা দাড়ায় ৪৫। অন্যদিকে ছেলের মৃত্যুর খবরে হৃদক্রিয়া বন্ধে মারা যান হরনাথ। সব মিলিয়ে ৪৫ জনের প্রাণের বিনিময়ে রচিত হয় মিরসরাই ট্র্যাজেডি।

আবু তোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৪ শিক্ষার্থী প্রাণ হারায় ওই দুর্ঘটনায়। এছাড়া আবু তোরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনজন, প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের দুইজন, আবু তোরাব ফাজিল মাদরাসার দুইজন, এবং আবু তোরাব এস এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষার্থী মারা যায়।

মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহতরা- সাইদুল ইসলাম, সাখাওয়াত হোসেন, তাকিব উল্লাহ মাহমুদ সাকিব, আনন্দ চন্দ্র দাশ, নুর মোহাম্মদ রাহাত, আল মোবারক জুয়েল, তোফাজ্জল ইসলাম, লিটন চন্দ্র দাশ, মোঃ সামছুদ্দিন, মেজবাহ উদ্দিন, ইমরান হোসেন ইমন, কাজল চন্দ্র নাথ, সূর্য চন্দ্র নাথ, ধ্রুব নাথ, আবু সুফিয়ান সুজন, রূপন চন্দ্র নাথ, সামছুদ্দিন, ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ, আমিন শরীফ, উজ্জল চন্দ্র নাথ, শরীফ উদ্দিন, সাখাওয়াত হোসেন, কামরুল ইসলাম, তারেক হোসেন, নয়ন শীল, সাজু কুমার দাশ, জুয়েল বড়ুয়া, রায়হান উদ্দিন, জাহেদুল ইসলাম, এস এম রিয়াজ উদ্দিন, টিটু দাশ, রাজিব হোসেন, আশরাফ উদ্দিন, জিল্লুর রহমান, জাহেদুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, আশরাফ উদ্দিন পনির, রায়হান উদ্দিন শুভ, মঞ্জুর মোর্শেদ, তারেক হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন নয়ন, আনোয়ার হোসেন, হরনাথ দাশ, আরিফুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলাম চৌধুরী।

সাজাপ্রাপ্ত সেই চালক মফিজ।

মামলার রায়, সাজা ও মুক্তিঃ

দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকেই পালিয়ে যান ট্রাক চালক মফিজুর রহমান। পরদিন তাকে আসামি করে মায়ানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাস্টার কবির আহমদ নিজামী মিরসরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার ১০ দিন পর ২১ জুলাই পুলিশ বরিশালের কাউনিয়া থেকে মফিজকে গ্রেফতার করে।

একই বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে মিরসরাই ট্র্যাজেডির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলার চার্জশিটভুক্ত ৩০ জন ও সুরতহাল রিপোর্টের ছয় সাক্ষীসহ মোট ৩৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ৮ ডিসেম্বর এ রায় দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ ফরিদা ইয়াসমিন। দীর্ঘ ৫ বছর সাজা ভোগার পর ২০১৫ সালের ২৮ জুলাই মুক্তি পায় চালক মফিজ।