অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সিঙ্গাপুরে করোনা আক্রান্ত এক নবাবজাদার গল্প…

0
টান টোক হাসপিটাল সিঙ্গাপুর।

একজন করোনা রোগীকে ডরমেটরিতে করোনা শনাক্ত হওয়ায় তাকে আইসোলেট করতে নেওয়া হয় হোটেলে। সেখানে দু চারদিন থাকার পর তিনি মিনিস্ট্রি অফ হেলথ (MOH) অফিসারকে ফোনে জানায়, সেখানে থাকতে তিনি স্বাচ্ছন্দবোধ করছে না। মানসিক ভাবে বিপর্যস্থ। তাকে ভাল খোলামেলা পরিবেশের কোন হোটেলে নিতে। MOH অফিসার তাকে আশ্বস্ত করে বলে আজকের রাতটা থাকুন। আমি দেখছি। সাথে সাথে MOH থেকে দু’জন কর্মী চলে আসেন।

তাকে সঙ্গ দিয়ে তার মন মানসিকতা চাঙ্গা রাখতে থাকে। এভাবে রাত বরোটা পর্যন্ত কয়েকবার তারা তাকে সঙ্গ দেয়। পর দিন সকাল সাড়ে ৭টায় তাকে আনা হয় মেরিনা স্কয়ার এর সাথে এক বিলাশ বহুল আলিশান হোটেলে। কিন্তু সেখানে এসে বাঁধে আরেক বিপত্তি। হোটেলের জানালা না খুলতে পারায় তার অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তিনি MOH অফিসারকে আবার কল করে সব বলেন।

ফোন করার ৩০ মিনিটের মধ্যে ডাক্তারসহ চারজন তার রুমে হাজির। সাথে মিনি ই,সি,জি মেশিন, পালস ডিটেক্টর, এবং পেশার মাপার যন্ত্র। প্রাথমিক ভাবে দেখার পর তাকে তখনই নিয়ে যাওয়া হয় Tan Tock Seng Hospital এ। এই হাসপাতালটি অন্যতম একটি আধুনিক হাসপাতাল। পাঁচ তারকা সমতুল্য। সেখানে তার COVID-19 নেগেটিভ থাকলেও আবারও করানো হয়। আবারও করোনা টেষ্ট। এক্সরে ও ই,সি,জি।

.

তাকে আবার আনা হয় মেরিনা স্কয়ারের পাশে আরেকটি পাঁচ তারকা হোটেলে। কিন্তু ঐ হোটেলেরও জানালা খুলার ব্যবস্থা না থাকায় সে আপত্তি জানায় রুমে যেতে। তখন ডাক্তার এবং সিকিউরিটিরা তাকে রিসিভশনের পাশে বসিয়ে সঙ্গ দেয় রাত ১২ টা পর্যন্ত। তাকে অনুরোধ করতে থাকে, শুধু আজকের রাতটাই রুমে থাকার জন্য।

পরদিন সকাল বেলা ডাক্তার এসে তাকে হোটেলের নিচে নামতে অনুরোধ করেন। তার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। তাকে তার মন মত মনোরম পরিবেশে ভি,আই,পি অপর একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। যেনো প্রাকৃতির খুব কাছ থেকে ফ্রেশ অক্সিজেন গ্রহন করতে পারে। সুস্থ থাকতে পারেন। ভাল থাকতে পারেন। এখনও প্রতিনিয়ত তার সার্বিক পরস্থিতি MOH এবং ডাক্তারেরা পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছেন।

ওই নবাবজাদার পরিচয়চা বা নাইবা দিলাম। তিনি ভিনদেশী। কোন সিঙ্গাপুরের নাগরিক নন। একজন খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষ। তিনি এখন ভাল আছেন। সুস্থ আছেন। নিজ রুম অর্থাৎ তার কোম্পানীর ডরমেটরীতেই আছেন।

MOH অফিসার, ডাক্তার, নার্স, হোটেলের সিকিউরিটিসহ সকলের ব্যবহার কতটা অমায়িক আপনি কল্পনাও করতে পারবেননা। তাদের ব্যবহার দেখলে মনে হয়, আমি এদেশের অনেক বড় মাপের কোন ভি,আই,পি গেষ্ট। ভুলেই যাই আমি এ দেশের সামান্য একজন অভিবাসী শ্রমিক মাত্র।

ভালবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতায় মাথাটা নত হয়ে আসে। ভাবতেই গাল গড়িয়ে অশ্রু ঝড়ে। আমার দেশে আমি মাত্র একটি সংখ্যা হলেও, এ দেশে একজন ভি,আই,পি।
একজন সত্যিকারের “নবাবজাদা”।

লেখক: আশিক খান, সিঙ্গাপুর প্রবাসী।