অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বাঁশখালীতে ৫ ঘন্টা নির্যাতন চালিয়ে অপহৃত সাংবাদিক বেলালকে ছেড়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা

0
অপহ্নত সাংবাদিক বেলাল। ফাইল ছবি।

অপহরণের শিকার একুশে পত্রিকার বাঁশখালী উপজেলা প্রতিনিধি মো. বেলাল উদ্দিন অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন।  অপহরণের পর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তার উপর চালানো হয় শারিক নির্যাতন।  তাকে বলা হয় কলেমা পড়তে, শেষ ইচ্ছা কি জানতেও চায় সন্ত্রাসীরা।  রাত ১২টার পরপরই তাকে শেষ করে দেয়া হবে বলে জানায়। পরে তথ্যমন্ত্রীর ফোন পেয়ে উদ্ধর্তন পুলিশ বেলালকে উদ্ধারে তৎপর হয় বলে জানান একুশে পত্রিকার সম্পাদক আজাদ তালুকদার।

যে চেয়াম্যানের সন্ত্রাসীরা বেলালকে অপহরণ করেছে তার বাড়ীর সামনে সন্ত্রাসীরা তাকে ফেলে যাওয়ার পর ওসি বাশঁখালী বেলালকে উদ্ধার করে আহত বেলালকে চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এর আগে অপহরণের পরপরই সন্ধ্যা থেকে সাংবাদিকরা বেলালকে উদ্ধারে জন্য ওসিকে অবহিত করলেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেন নি। পরে সন্ত্রাসীদের সাথে যোগসাজসে সন্ত্রাসীরা পুলিশের কথা মত বেলালকে ছেড়ে দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধারের কথা প্রচার করে।

এ ব্যাপারে বাঁশখালী থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, ঘটনাস্থল বাঁশখালী থানা থেকে অনেক দূরে। এজন্য একটু সময় লেগেছে। আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে এনেছি। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।

এর আগে রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাঁশখালীর ছনুয়া আবাখালী এলাকা থেকে একুশে পত্রিকার বেলাল উদ্দিনকে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায় ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান এম হারুনুর রশিদের অনুগত সন্ত্রাসীরা।

জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বেলাল উদ্দিন একুশে পত্রিকাকে মুঠোফোনে বলেন, ‘চোখ-মুখ বেঁধে আমাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে মারধর করে, জামা-প্যান্ট ছিঁড়ে ফেলে সন্ত্রাসীরা। আমাকে তারা বলে, কালেমা পড়ে ফেলতে। শেষ ইচ্ছা কী বলে ফেলতে। আমি তাদের কাছে পানি চেয়েছি, তখন বলেছে এখন আর পানি খাওয়া লাগবে না। রাত ১২টার পর শেষ করে দেবো।’

‘তুলে নেয়ার ঘন্টাখানেক পর তারা বলাবলি করে, আমার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন যাচ্ছে। পরে তারা আমাকে সিএনজি অটোরিকশায় করে চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে এনে ছেড়ে দেয়। রশি খুলে দেয়ার সময় তারা বলে, জীবনে আর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখবি না, চেয়ারম্যান অন্যায় করলেও না। ছাড়ার আগে আমার দুটি মোবাইল, ঘড়ি, নগদ টাকা ও একুশে পত্রিকার পরিচয়পত্র কেড়ে নেয় তারা।’

বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ছেড়ে দেয়ার কিছুক্ষণ পর চেয়ারম্যানের বাড়িতে ওসি সাহেব আসেন। তখন চেয়ারম্যান ঘটনা মিটমাট করে ফেলতে চেয়েছিলেন। আমি বলেছি, আমার সম্পাদকের সাথে কথা বলা ছাড়া আমি কিছু বলতে পারবো না। চেয়ারম্যান টাকাও দিতে চেয়েছেন। কত লাগবে জানতে চেয়েছেন। চেয়ারম্যান আরও বলেছেন, তোমার মতো ১৪ জন মানুষ পালার ক্ষমতা আমার আছে। কোন সময় কী লাগে সেটা শুধু আমাকে বলবে। আমার পক্ষে লিখবে, মঙ্গল হবে।’

চেয়ারম্যান হারুনের লোকজনের এভাবে তুলে নেয়ার কারণ জানিয়ে বেলাল বলেন, ‘ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদে ৫০ টাকার জন্ম নিবন্ধন ৩০০ টাকা নেয়া হচ্ছিল। এ নিয়ে নিউজ করায় পরিষদের সচিব বদলি হন দুই মাস আগে। এতে চেয়ারম্যান আমার প্রতি ক্ষুব্ধ হন।’

এদিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জড়িত তিন সন্ত্রাসী ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান এম হারুনুর রশিদের অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বাঁশখালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে স্থানীয়রা তথ্য দিয়েছেন।

চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১২টি মামলার আসামি। ১২ বছরের কাজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল নগরের পাঁচলাইশ থানায়।

এছাড়া চেয়ারম্যানের ভাই মো. আলমগীর অন্তত ৮টি মামলার আসামি। চেয়ারম্যানের পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, সাগরে জেলেদের আটকে চাঁদা আদায়, জলদস্যুতাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আছে।

চেয়ারম্যান হারুনের বাহিনীর অন্যতম সদস্য বহু মামলার আসামি সোলতান বাহাদুর প্রকাশ বাহাদুর ডাকাত, নুরুল আলম, মো. হোসাইন ও আবু তালেব র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বিভিন্ন সময় নিহত হয়েছে।

অন্যদিকে ঘটনার পরপর একুশে পত্রিকার প্রতিনিধি বেলাল উদ্দিনকে দ্রুত উদ্ধার করতে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম রশিদুল হককে ফোনে নির্দেশ দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

এছাড়া বেলাল উদ্দিনকে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের সদস্যরাও।

সূত্র: একুশে পত্রিকা।