অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বাতিল হচ্ছে এ বছরের পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা

0
.

এ বছর পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা হচ্ছে না। মঙ্গলবার এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে গত ১৮ আগস্ট করোনা মহামারির কারণে এ বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না নেয়ার বিষয়টি বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একইসঙ্গে ২০২০ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না নিয়ে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উন্নীতকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়।

১৮ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব স্বাক্ষরিত এই সিদ্ধান্তের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই সারসংক্ষেপে বলা হয়, “ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সাথে ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়। সেই থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বছরের শুরুতে পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ১ জানুয়ারি – ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩১ কর্মদিবস নির্ধারণ করা হয়। ১৬ মার্চ ২০২০ তারিখ পর্যন্ত বিষয়ভিত্তিক ৩০-৩৫ % পাঠদান করা সম্ভব হয়েছে।”

“করোনা ভাইরাস সংক্রমণজনিত কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে স্বাভাবিক পাঠদান ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ আছে। এ ছুটির মেয়াদ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এতে মোট ৭১ কার্যদিবস বিদ্যালয়সমূহ বন্ধ থাকবে এবং ৫ম শ্রেণির ৪০৬ টি স্বাভাবিক পাঠদান সম্ভব হবে না। তবে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে চলমান ‘ঘরে বসে শিখি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু সব শিক্ষার্থীর বাসায় টেলিভিশন না থাকায় এবং টেলিভিশন থাকলেও অধিকাংশ অভিভাবকের বাসায় ক্যাবল সংযোগ না থাকায় সব শিক্ষার্থীকে এ প্রোগ্রামের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণির প্রায় ৫৬ ভাগ শিক্ষার্থী এ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে কিংবা অংশগ্রহণের সুযোগ ছিলো। সে বিবেচনায় ১২ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ বেতারে বিকেল ৪ টা ৫ মিনিট থেকে ৪ টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত ৫০ মিনিটের জন্য ঘরে বসে শিখি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। যা ৫ম শ্রেণির প্রায় ৯৭.৬ % শিক্ষার্থীর নিকট মোবাইল এবং রেডিওর মাধ্যমে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। এছাড়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭৬% শিক্ষার্থী / অভিভাবকদের সাথে কোভিড ১৯ সময়ে তাদের লেখাপড়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনা চলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ কথা বলেছেন।”

সারসংক্ষেপে আরো বলা হয়, “করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু কিছু দেশ কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়সমূহ খুলেছে। তবে কোনো কোনো দেশে যেমন জাপান , দক্ষিণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিদ্যালয়সমূহ খুললেও আবার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সংক্রমণের পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশেও এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়সমূহ খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যালয়সমূহ খুলে দেয়া হলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনা করে অভিভাবকগণ তাদের ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে নাও পাঠাতে পারেন। এতে করে যারা বিদ্যালয়ে যাবে এবং যারা যাবে না তাদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হবে। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি কর্তৃক প্রণীত সংশোধিত পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা নিতে হলে আরো প্রায় ৫০ কার্যদিবস পাঠদান প্রয়োজন। সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যালয়সমূহ খোলা না গেলে যে কার্যদিবস পাওয়া যাবে তাতে নভেম্বর- ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির অবশিষ্ট পাঠদান সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।”

“ গত ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিষয়টি বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়। উক্ত সভায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিষয়টি সার্বিক পর্যালোচনা করে ২০২০ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না নিয়ে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উন্নীতকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে । এছাড়া ২০২০ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হলে সমাপনী পরীক্ষার ভিত্তিতে প্রদেয় মেধাভিত্তিক বৃত্তি প্রদান সম্ভব হবে না। তবে উপবৃত্তির কার্যক্রম চলমান থাকবে।
এমতাবস্থায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২০২০ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ না করার বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ অনুমোদন প্রয়োজন।”