অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

দুর্নীতির মামলায় জেলখাটা ফজলুল্লাহ ৪র্থ বার ওয়াসা’র এমডি হতে চান

0
.

সাইফুল ইসলাম শিল্পী:

চট্টগ্রাম ওয়াসার বির্তকিত ব্যক্তি ও বর্তমান এমডি প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহকে চতুর্থ বারের মত এমডি পদে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তদবীর চলছে। আগামী তিন বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে তার অনুগত ওয়াসার বোর্ড সভায়।

এ নিয়ে গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্ট মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রায় ৯ বছর ধরে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদে দায়িত্ব পালন করছেন প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর তৃতীয়বারের মতো তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। বর্তমানের তার বয়স ৭৯ বছর।

এ বয়সে তিনি কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে সমক্ষম তা নিয়ে নগরবাসীর মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ২০০৯ সালে চুক্তিভিত্তিতে তিন বছরের জন্য ওয়াসার এমডি হন এরপর দীর্ঘ ৯ বছর ধরে উপর মহলকে ম্যানেজ করে পরপর ৩ বার এ পদ ধরে রাখেন।

.

জানাগেছে,গত ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় ১৩ সদস্যের মধ্যে ১২ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সবাই ওয়াসার এমডির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে মত দেন।

এ ব্যাপারে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রিয় কার্য নির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন- ওয়াসার বর্তমান এমডি প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ একজন বির্তকিত ব্যাক্তি। তিনি দুর্নীতি মামলার আসামী। এসব মামলায় তিনি জেল খেটেছেন। এ রকম একজন ব্যাক্তিকে কেন বার বার ওয়াসার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এমডির দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে আমরা বুঝতে পারি না।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে কি যোগ্য লোকের অভাব রয়েছে..? অবৈধভাবে নিয়োগ না দিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ দিয়ে নিযোগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বৈধভাবে চেষ্টা করলে অবশ্যই যোগ লোক পাওয়া যাবে।

ওয়াসার বোর্ড সভায় সুপারিশ প্রসঙ্গে এস এম নাজের হোসাইন বলেন-এটা এমডির অনুগত বোর্ড সভা। তাই তারা তার জন্য সুপারিশ করেছেন। লাখ লাখ গ্রাহকের স্বার্থ তারা দেখে না। গ্রাহক সমিতির সভাপতি বানানো হয়েছে একজনকে দেখা গেছে তিনি ওয়াসার কোন গ্রাহকও না। তার স্ত্রী গ্রাহক। অথচ নিয়ম রয়েছে ইঞ্জিনিয়াস ইন্সটিটিউশন থেকে একজনকে গ্রাহক সমিতির সভাপতি করা।

অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতির মামলায় জেলখাটা এই কর্মকর্তা বার বার  নিয়োগ পেতে সরকারে উপরের মহলে কোটি টাকা উপটৌকন দিয়েছে।

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ায় তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন এর আগে নির্বাহী প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় কর্তব্যে অবহেলার কারণে একবার বরখাস্তও হন।

.

ওয়াসা থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি একটি সমবায় ব্যাংক হলে জনগণের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন স্যোসাল সেভিং কো-অপারেটিভ ব্যাংক নামে একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান থাকাকালীন সাধারণ মানুষের আত্মসাতের অভিযোগে ওয়ান-ইলেভেনের সময় তিনি ৩ বার জেল খাটেন।

সে সময় গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিন দফায় তাকে জেলে যেতে হয় পরে বিভিন্ন জনের টাকা পরিশোধের মাধ্যমে জেল থেকে বের হন। জনগণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এখনও চট্টগ্রাম ও ঢাকার ছয়টি মামলা চালু হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে টাকা দিয়ে তিনি মামলাগুলো ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগের পর দুই জন কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে এগুলো ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এর ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানকে কয়েক হাজার কোটি টাকার কাজ যা দিয়েছেন অবৈধভাবে বর্তমান সচিব হেলাল উদ্দিনকে বিদেশে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ হাজার ডলার প্রদান করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার দুর্নীতির মাধ্যমে তার ভাগ্নি জামাই ওর ড্রাইভারকে চা করে দিয়েছেন ওয়াসার জাইকার অর্থায়নে জাপানি প্রতিষ্ঠানে থেকে একটি বিলাসবহুল গাড়ি কোন কোন নিয়ে নিয়ে তা বিক্রি করে কর্নার একাউন্ট স্থানান্তর করেন।

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বয়স ৭৯ বছর তাকে বারবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ওয়াসার কর্মকর্তা কর্মচারীদের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উক্ত কর্মকর্তা ওয়াসা কর্মরত বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে ডলার ঘুষ দিয়ে বিদেশ সফরে যান।

তদুপরি দেশী বিদেশী প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষের টাকা নিয়ে আমেরিকার পাচার করেন।

চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্মরত দেশি-বিদেশি ঠিকাদার থেকে ৫ পার্সেন্ট টাকা আদায় করে থাকেন। এসব টাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব অতিরিক্ত সচিব উর্দ্ধতন কর্মকর্তার মন্ত্রী ও সচিবের দিয়েছে এবং উর্দ্ধতন করি কল্পনা’ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপটৌকন হিসেবে প্রদান করেন বলে প্রচার করেন।

সাবেক সচিব মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন সচিবকে ১০ লক্ষ টাকা দিতে হয় বলে তিনি ওয়াসার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে জানিয়েছেন। তার দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী নেতা তাজুল ইসলাম। ইতিমধ্যে তিনি দুই শতাধিক শ্রমিক কর্মচারী নিয়োগ নিয়েছেন। যাঁদের অধিকাংশেরই কুমিল্লায়।

চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক, সাপ্তাহিক চাঁটগার বাণী সম্পাদক রোটারিয়ান মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম ওয়াসার জন্যে ১৩হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দিলেও নগরবাসী এর সুফলের বদলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। পাইপলাইনের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি, বিভিন্ন রাস্তা একাধিকবার খোঁড়াখুঁড়ি, পানি উৎপাদনের অসত্য তথ্য প্রচার, ভুয়া ও ভুতুড়ে পানির বিল দিয়ে গ্রাহক হয়রানিসহ নানান অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা লেগেই আছে এখানেই। অথচ চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সভায় চতুর্থ দফায় বর্তমান এমডির আরও ৩বছর মেয়াদ বাড়ানোর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, চট্টগ্রাম ওয়াসা পরিচালনার জন্যে দেশে নতুন কোনো এমডি খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

উপরের ইচ্ছাতেই অবসরের ২১ বছর করার দায়িত্ব পালন করছেন বলে মন্তব্য করেছেন ওয়াসার এমডি ফজলুল্লাহ। তিনি বলেন, বোর্ড যদি মনে করে যে আমাকে আরেকটা টার্ম দরকার বা মন্ত্রণালয় যদি মনে করে আমাকে দরকার।
আমার মতো অভিজ্ঞ মানুষ পাওয়া যাবে কিনা, আর এই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ আছে কি-না এ সমস্ত কারণে এখন একজন অভিজ্ঞ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন।