অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

আলোচনা-সমালোচনার উর্ধ্বে আহমদ শফী

0
.

জিয়া চৌধুরী, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ

আল্লামা আহমদ শফী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ারটিলা গ্রামে ১৯১৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম বরকত আলী, মাতার নাম মেহেরুন্নেছা।

জীবনদশায় অনেক ঘটনা অঘটনা এবং আলোচনা সমালোচনার মধ্যমনি ছিলেন এই প্রখ্যাত আলেম দ্বীন।

বিশেষ করে ঢাকা শাপলা চত্বরে সমাবেশ ও নৃশংস্ব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসেন আল্লামা আহমদ শফী ও তারগড়া সংঘঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

তিনি আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম এবং ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায় শিক্ষালাভ করেন। শফী আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম নামে একটি ধর্মীয় সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী বাংলাদেশের আপামর মুসলিম জনগোষ্টির কাছে শায়খুল ইসলাম নামেই পরিচিত ছিলেন। তিনি একজন অসাম্প্রদায়িক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন। যার কারণে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ তাকে বিশেষ শ্রদ্ধা করতেন। বাংলাদেশের বাইরেও মুসলিম বিশ্বে একজন বড়মাপের আলেম ও ধর্মীয় নেতা হিসাবে আল্লামা শফীর ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা রয়েছে।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী জাতীয়ভাবে প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১১ সালে। ওই বছর নারী উন্নয়ন নীতিমালা করার পর আল্লামা শফী এর বিরোধিতা করে চট্টগ্রামে কর্মসূচি ডাকেন। পরে ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হায়দারের ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করে ব্লগিংকে কেন্দ্র করে সারাদেশেই বিক্ষোভে নামে কওমি মাদ্রাসার আলেম ও শিক্ষার্থীরা। কওমিদের র্শীষ আলেম হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই এসবের নেতৃত্ব দেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। পরে একই বছর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ১৩ দফা দাবী নিয়ে মাঠে নামলে আল্লামা আহমদ শফী সারাদেশে ব্যাপকভাবে আলোচনায় উঠে আসেন। ইসলাম ধর্ম ছাড়াও দেশে ও দেশের বাইরে যেখানেই মানবতার বিপর্যয় দেখেছেন সে বিষয়ে কথা বলেছেন ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন আল্লামা শফী। তার আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা ও অনড় ভূমিকার কারণে বিগত সময়ে দেশের রাজনৈতিক শীর্ষ নেতারা সবসময় আল্লামা শফীর আস্থাভাজন থাকার চেষ্টা করে গিয়েছিলেন।

জন্মের মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি হাটহাজারী মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯৪১ সালে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি হন। মাত্র চার বছরে তিনি হাদিস, তাফসির, ফিকাহ শাস্ত্র অধ্যয়ন করে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। ১৯৪৬ সালে দারুল উলুম হাটহাজারীতে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠানের মজলিসে শূরার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পান। পরবর্তী সময়ে শায়খুল হাদিসের দায়িত্বও তিনি পালন করেন। ২০০৮ সালে তিনি কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড- বেফাকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি দারুল উলুম হাটহাজারী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওলামা সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গঠন করা হয়। তিনিই এর প্রতিষ্ঠাতা আমির মনোনীত হন।

আহমদ শফীর নেতৃত্বে ১১ এপ্রিল ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে এমএ (আরবি-ইসলামিক স্টাডিজ)-এর সমমান ঘোষণা করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তার স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে, নাতি, নাতনি রয়েছে। আল্লামা আহমদ শফী কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, আল হাইয়াতুল উলইয়া’র চেয়ারম্যান ও আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আহমদ শফীর দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আহমদ শফীর দেওয়া একটি বক্তৃতায় নারীদের প্রতি অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার ও তাদের শিক্ষাগ্রহণের নিরুত্সাহিত করার নির্দেশ প্রদানের অভিযোগে বিভিন্ন নারী সংগঠন, বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ এবং জনসাধারন কর্তৃক সমালোচনার মুখে পরেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন ও ভাবধারার এবং রাজনৈতিক দলের মানুষের কাছেও বির্তকিত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহমদ শফীর এই বক্তৃতার সমালোচনা করেন। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে আহমদ শফীর বক্তব্যকে গণমাধ্যমে অপপ্রচার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৪ সালের ১৮ এপ্রিল কক্সবাজারে একটি বক্তৃতায় তিনি নাস্তিকদের হত্যার কথা বলেন যার প্রেক্ষিতে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। মোবাইল ফোন তৈরি করে ইহুদিরা সমাজকে ধ্বংস করছে বলে মন্তব্য করার পর নির্বাসিতা লেখিকা ও বিতর্কিত কলামিষ্ট তসলিমা নাসরিন তার বক্তব্যের সমালোচনা করেন।

২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আহমদ শফীর পদত্যাগ এবং তার ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কারসহ ৫ দফা দাবি নিয়ে দারুল উলুম হাটহাজারীর ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে। দুপুর থেকে এ আন্দোলন শুরু হয়, রাত্রে আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয় এবং পরদিন আহমদ শফী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের কারণ দেখিয়ে সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য হাটহাজারী মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করে। ছাত্ররা সরকারের এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যায়, আহমদ শফী পদত্যাগ করলে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করা হয়।