অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে ৯ বছরে ৯ বিয়ে, রয়েছে ৪ প্রেমিকা

0
.

কখনো পুলিশ অফিসার, কখনো আর্মি অফিসার, আবার কখনো নেভি অফিসার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। বাস্তবে তিনি
পেশায় সিকিউরিটি সুপারভাইজার। কিন্তু এসব ভুয়া পরিচয় দিয়ে গত ৯ বছরে বিয়ে করেছেন ৯টি। এর বাইরে প্রেমিকা রয়েছে আরও ৪ জন। তাদেরও বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শুধু বিয়ে নয়, চাকরি দেয়ার নাম করেও শ্বশুরবাড়ির স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

অবশেষে গতকাল শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে চট্টগ্রামে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন প্রতারক সোলায়মান। বিয়ে পাগল প্রতারক সোলায়মানের বাড়ি বরগুনা। জানা গেছে সেখানেও তার বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ের অভিযোগ রয়েছে।

১৭ বছর বয়সে জীবিকার সন্ধানে বরগুনা থেকে আসেন চট্টগ্রামে। কাজ নেন নগরীর একটি গার্মেন্টসের সিকিউরিটি সুপারভাইজারের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর মোবাইল ফোনে অল্প বয়সি মেয়েদের সাথে কথা বলে তাদেরকে পটিয়ে প্রতারণার জালে ফেলে বিয়ে করার এক অভিনব শিল্পরপ্ত করেন সোলায়মান। টার্গেট করেন গার্মেন্টসের নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মেয়েদেরকে। শুধু তাই নয় বিয়ে করার পরে স্ত্রীর ভাই-বোনদেরকে চাকরি দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল অর্থ। স্ত্রীদের মাধ্যমে এনজিও থেকে লোন নিয়ে ওই অর্থ নিয়ে পালিয়ে গেছেন অন্যত্র। বেছে নিয়েছেন আরেকজনকে।

.

প্রতারক সোলায়মানকে নিয়ে আগেই বেশ কিছু তথ্য পেয়েছিলো গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় তাকে আটক করা যাচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর মামলার প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে নগরীর পাহাড়তলী থেকে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।

অতিরিক্ত উপ কমিশনার আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, বিভিন্ন অফিস বা আর্মির বিভিন্ন সদস্যদের পোশাক পরা ছবিতে নিজের মুখ লাগিয়ে সেভাবে উপস্থাপন করেছে।

আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোলায়মান স্বীকার করে নানা পরিচয়ে ৯ বছরে ৯ জনকে বিয়ে করার পাশাপাশি আরো কয়েকজনকে বিয়ের আশ্বাস দেয়ার কথা।

বিয়ে করেই প্রতারণার শেষ নয় সোলায়মানের। স্ত্রীদের দিয়ে যেমন এনজিও থেকে লাখ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে, তেমনি চাকরি দেয়ার কথা বলে শ্বশুরবাড়ির স্বজনদের কাছ থেকেও টাকা হাতিয়েছে সে।

ডিবির উপ পরিদর্শক মনির হোসেন বলেন, সবাই জানত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। এই বিশ্বাস থেকেই সবাই তাকে টাকা দিয়েছে। আর সে এভাবেই সবার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

অষ্টম স্ত্রী রাহেলার কাছ থেকে তার ভাই ও বোনকে চাকরি দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা এবং তার নামে এনজিও থেকে ঋণ তুলে হাতিয়ে নিয়েছেন এক লাখ টাকা। নবম স্ত্রীর রহিমার কাছ থেকে যৌতুক নিয়েছেন দুই লাখ টাকা। এভাবে একটি নয় দুটি নয় ২০ বছর থেকে ২৯ বছরের মধ্যে মাত্র ৯ বছরে ৯টি বিয়ে করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সুনিপূণ কারিগর এ সুলায়মান। তবে তার শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে ধরা পড়েছেন নগর গোয়েন্দা (বন্দর) পুলিশ ও পাহাড়তলী থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, বিয়ে পাগলা সোলায়মানের বিরুদ্ধে উঠতি বয়সি মেয়েদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিয়ে করা ও অর্থ হাতিয়ে নেয়া সংক্রান্ত একটি অভিযোগ হাতে আসলে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করা হয় এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে পাহাড়তলী থানা এলাকার একটি বাসা থেকে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় নবম স্ত্রী রহিমা আক্তারকে।

এর আগে রাঙ্গামাটির ১৫ বছর বয়সী নবম স্ত্রী রহিমা আক্তারের মা বাদি হয়ে পাহাড়তলী থানায় একটি মামলা রুজু করেন।