অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সীতাকুণ্ডে জাল দলিল তৈরী করে অসহায় পরিবারের সহায়-সম্পত্তি দখলের চেষ্টা

0
.

জেলার সীতাকুণ্ড থানাধীন ফৌজদারহাট স্টেশন এলাকায় এক অসহায় পরিবারকে ভিটে বাড়ী হতে উচ্ছেদের জন্য হুমকি ধমকির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে রমজান আলী জানান, তাদের পিতার আমল হইতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা বসতবাড়ী সংক্রান্ত ১৯৮২ সালে সীতাকুন্ড রেজিঃ অফিস পুড়ে যাওয়ার সুবাদে ১৯৭৮ সালের একটি জাল দলিল সৃজন করে এলাকার প্রভাবশালী ভূমিদস্যু মহল রাজনৈতিক ইন্দনে ও প্রশ্রয়ে নানা হয়রানীর মাধ্যমে তাদেরকে পরিবার পরিজনের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।

রমজান আলী বলেন, সম্প্রতি স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও শিপইয়ার্ড ব্যবসায়ী আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম কিছু ভূমিদস্যু প্রকৃতির লোকের সহায়তায় তার পিতা ১৯৭৮ সালের এক দলিল জনৈকা নুর জাহান নামে একজন মহিলাকে খরিদা মালিক দেখাইয়া একখানা জাল দলিল সম্পাদন করে এবং ১৯৮২ সালে সীতাকুণ্ড রেজিঃ অফিস আগুনে পুড়ে যাওয়ায় তিনি ঐ দলিলটি একটি জাল দলিল হিসাবে দাবী করেন। তিনি আরো বলেন, কথিত নুর জাহান নামে নারীকে তিনি কখনো দেখেননি এবং সে কখনো জমির মালিকানা দাবী করেনি।

পরবর্তীতে উক্ত দলিলের কথিত গ্রহীতা নুর জাহানের মৃত্যুতে তার ওয়ারিশদের দাতা দেখিয়ে স্থানীয় একজন ভূমি ব্যবসায়ী মোঃ কাইছার নামে ব্যক্তি ২০১৩ সালে উক্ত সম্পত্তি আমমোক্তারমূলে ক্ষমতা প্রাপ্ত মর্মে বর্ণিত আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম বরাবরে বিক্রী দলিল করার বিষয়ে জানাজানি হলে এক পর্যায়ে দখল বেদখলের ব্যাপারে পাল্টাপাল্টি শুরু হইলে অভিযোগকারী রমজান আলী বাদী হইয়া চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় মিছ ১০৫৭/১৮ নং মামলা ও সীতাকুন্ড সহকারী জজ আদালতে উক্ত দলিল বাতিলের জন্য অপর ২২৪/১৯নং মামলা করলে উভয় মামলা বর্তমানে বিচারধীন আছে।

উল্লেখ্য যে, বর্ণিত নুরজাহান বেগমকে ২০১৩ সালে মৃত উল্লেখ করলেও ২০১৯ সালে বর্ণিত নুরজাহানের নামে উক্ত সম্পত্তির নামজারী আবেদন করা হয়। কিন্তু দেশে করোনা মহামারীতে আদালত বন্ধের সুযোগে প্রতিপক্ষ জোর করে জায়গা সম্পত্তি দখলে নেওয়ার জন্য হুমকির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সীতাকুণ্ড থানায় সাধারণ ডায়েরী (নং- ৮৫৬/২০২০) দায়ের করা হয়।

ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে রমজান আলী জানায়, ইতিমধ্যে তাহার দাবী করা জাল দলিল চ্যালেঞ্জ করে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২, (সীতাকুন্ড আমল) আদালতে দন্ডবিধির আইনের ৪৪৭/ ৪৬৮/ ৪৭১/ ১০৯/ ৩২৩/৫০৬(৩৪) ধারায় সি আর মামলা নং- ২৫৮/২০২০ইং দায়ের করলে তা আদালত আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

এব্যাপারে বাদী পক্ষের আইনজীবি হুসাইন মুহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন- উক্ত জাল দলিলকে জাল ঘোষণার জন্য বিজ্ঞ সীতাকুণ্ড সহকারী জজ আদালতে অপর ২২৪/১৯ নং মামলা দায়ের করলে উক্ত মামলায় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ চাওয়া হয়। বিজ্ঞ আদালত বিবাদীপক্ষকে শো-কজ করেন এবং ২৪/৯/২০২০ইং তারিখে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতে মিস ১০৫৭/১৮নং মামলায় প্রতিপক্ষ কাউসারুল আলম গংদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারায় প্রসিডিং ড্র করার বিষয়ে আদেশ দেন। এডভোকেট আশরাফ উদ্দিন আরও বলেন, অভিযোগকারী রমজান আলী ও তার পরিবার পরিজনকে হুমকি ধমকি এবং তাদেরকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের অন্যায় প্রচেষ্টা সহ ভাড়াটিয়া লোক নিয়োগের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে অসহায় পরিবারের পক্ষে সকল প্রকার আইনী সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাই।

এদিকে এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত কাউছারুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রমজান আলী গং এ পর্যন্ত কোথাও তাদের জায়গার বিএস দলিল দেখাতে পারেনি। ২০১৮ সাল থেকে তারা বাদি হয়ে ১০টি মামলা করেছে রফিকুল ইসলাম গংদের বিবাদী করে ৭টি মামলার রায় রফিক ভাইয়ের পক্ষে গেছে ৩টি মামলা তদন্ত চলছে। একটি মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই দুদিন আগে তদন্ত করে সকল কাগজপত্র দেখেছেন।  তিনি বলেন মূলত এসব জায়গা নূর জাহানের পৈত্রিক সম্পতি সীতাকুণ্ড ভুমি অফিসসহ সব খানে এর রেকর্ড রয়েছে। যেহেতেু আদালতে মামলা চলছে আদালতের মাধ্যমে সমাধান হবে আমরা কোন ধরণের হুমকি ধমকি দিচ্ছি না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিবাদী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি কাগজপত্র দেখে এবং নিশ্চিত হয়ে দুই বছর আগে কাউছারুল আলম থেকে এ সম্পত্তি ক্রয় করেছি।  টাকা দিয়ে দিয়ে জায়গা কিনে কেউ ভুমিদস্যূ হয় কি করে।  এ জায়গা ক্রয়ের পর থেকে গত দুই বছর তারা (রমজান আলী গং) আমাকে বিবাদী করে ১১টি মামলা তরেছে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েছে।  ইতোমধ্যে আদালত আমার পক্ষে ৮টি মামলা রায় দিয়েছে। তারা মূলত হয়রানী এবং আমার সন্মানহানী করার জন্য এসব মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আমার জায়গা আমার দখলে আছে। তিনি বলে বলেন, আমি কোন দল করি না। আমি ব্যবসায়ী। অথচ তারা আমাকে আওয়ামী লীগ বলে প্রচার করছে। তিনি বাদীকে হুমকি দেয়ার বিষয়টি অস্বিকার করেন।