৭০ কোটি টাকা পাওনা চাওয়ায় অপহরণ নাটক!
অপহরণের নাটক সাজিয়ে ৭০ কোটি টাকার দেনা থেকে রেহাই পেতে চেয়ে এবার ফেঁসে যাচ্ছেন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী ও মিরসরাই এলাকার প্রতারক সাইফুল ইসলাম (সাইফ)।
চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানীকৃত পণ্য ও কন্টেইনার গায়েব চক্রের মূল হোতা সাইফুলের বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তত অর্ধডজন প্রতারণা ও লুটপাটের মামলা ও একডজন সাধারণ ডায়রি।
তার ব্যবসায়িক পাটনার ও বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানার ৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে পালিয়ে থাকা সাইফুল সে টাকা না দিতে মুলত অপহরণ নাটক সাজিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সাইফুলের ব্যবসায়িক পাটনার, ফাহমিদা কর্পোরেশনের সত্বাধিকারী ও নগর আওয়ামী লীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপহরণের নাটক সৃষ্টি করে রাতেই সে নিজে বিরোধ নিস্পত্তির জন্য প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় বৈঠক করেন এবং সেখানে তিনি অঙ্গিকার করেন সোমবারের মধ্যে তিনি রানার টাকা ফেরত দেয়ার।
এ ব্যাপারে নওশাদ মাহমুদ রানা পাঠক ডট নিউজকে বলেন, নগরীর ঈদগাঁ বউ বাজার দুলহান কমিউনিটি সেন্টার বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে গতকাল শুক্রবার বিকালে ব্যবসায়ি সাইফুল ইসলামকে কথিত অপহরণের বিষয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা ডাহা মিথ্যা ও তার পরিবারের সাজানো নাটক।
ব্যবসায়ী রানা বলেন, সাইফুল একজন আমার ব্যবসায়িক পাঠনার ছিল। আমরা যৌথভাবে এস. এন ট্রেড, আর. এস কর্পোরেশন এবং ফাহমিদা কর্পোরেশন নামে বিগত ৮ বছর ব্যবসা পরিচালনা করতাম। আমি আমার এক মাত্র সন্তানের চিকিৎসা নিয়ে বছরের বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে থাকতে হত। আমি পার্টনার হিসেবে তাকে বিশ্বাস করতাম। সে কারণে ব্যবসাকৃত ৭ হাজার বিল অব এট্রির বিপরীতে আমদানীকারকদের সকল লেনদেনের টাকা পার্টনার সাইফুলের হিসেবে জমা হতো।
মাঝে মধ্যে কিছু খরচের টাকা আমি নিলেও লাভের সমুদয় টাকা সাইফুলের হিসেবে জমা থাকতো। পরবর্তিতে আমি ব্যবসার চুড়ান্ত হিসেব চাইলে আজ দিবে কাল দিবে বলে হিসাব না দিয়ে তালবাহনা করতে থাকে।
আমি অফিস কর্মচারীদের মাধ্যমে ৭ হাজার বিল অব এট্রির বিপরীতে হিসেব মতে ৭০ কোটি টাকা পাওনা হই। সাইফুল পাওনার কথা স্বীকার করলেও দিতে গড়িমসি করতে থাকে। এ নিয়ে অনেক শালিশ দরবার হয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা দিলেও বাকি টাকা শিঘ্রই ফেরত দেয়ার অঙ্গিকার করে।
কিন্ত গত তিন বছর বাকি টাকা না দিয়ে আত্মগোপন করে চলছিল। এ নিয়ে নগরীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ৩/৪টি জিডি করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার দুলহান ক্লাবে একটি বিয়ের দাওয়াতে গেলে তার দেখা পেয়ে তাকে পাওনা টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সে আবারও মিথ্যা আশ্বাস দেয়। এ নিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। তখন তাকে বিয়ের আসরে ঝগড়া না করে কমিউনিসেন্টারের বাইরে যেতে বললে আমরা কয়েকজন কথা বলার জন্য রাস্তার পার্শ্বে গলিতে গিয়ে কথা বলতে থাকি।
এ অবস্থায় তার স্ত্রী শোর-চিৎকার করতে থাকলে লোকজন জমে যায় এবং কয়েকজনের প্ররোলচনায় দ্রুত হালিশহর থানায় গিয়ে কান্নাকাটি করে তার স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে মিথ্যা অভিযোগ করে।
প্রকৃত অর্থে তাকে (সাইফুল) কেউ অপহরণ করেনি। পরে রাতে এনিয়ে নগর আওয়ামী লীগ নেতা ও মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম সাহেবের বাসায় বৈঠক হয়। সেখানে সাইফুল তার কাছে আমার টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে এবং আগামী সোমবারের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গিকার করে। সেখানে তার স্ত্রীও উপস্থিত ছিল।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সংবাদে আমাকে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ আমি যুবলীগের ওমর ফারুক গ্রুপের সদস্য ছিলাম না। আমি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
তারেক মাহমুদ পাপ্পুর প্রতিবাদ:
এদিকে প্রতারক সাইফুলের কথিত অপহরণ নাটক মামলার দ্বিতীয় আসামী করা হয়েছে নওশাদ মাহমুদ রানার ছোট ভাই ব্যবসায়ী তারেক মাহমুদ পাপ্পুকে। অথচ পাপ্পু গত ১৪ দিন যাবত করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এঘটনায় তাকে আসামী করায় বিস্ময় প্রকাশ করে পাপ্পু বলেন, আমি এবং শিশু সন্তান ও স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত। আমি গত ১৪ দিন যাবত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। অথচ আমাকে অপহরণ মামলায় আসামী করা হয়েছে। আমি আমার নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করি আমার ভাইয়ের ব্যবসার সাথে আমার কোন ধরণের অংশিদার নেই। আমার ভাইয়ের সাথে সাইফুলের ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। এতে আমাকে কেন জড়ালো আমি জানি না। তবে সুস্থ হয়ে আমি এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে সিএন্ডএফ ব্যবসার আড়ালে প্রতারক সাইফুলের কন্টেইনার লোপাট ও আমদানীকারকের প্রতিষ্ঠানে ১১ কোটি ৭ লক্ষ টাকার কসমেটিকের চালান গায়েব করে দেয়া এবং দুদক, পিবিআই’র তদন্তধীন মামলা নিয়ে আলাদা আলাদা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হবে।