অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

পদ্মা অয়েলে অবৈধ পদোন্নতির নেপথ্য নায়ক প্রতিষ্ঠানের এমডি!

0
.

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন “বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন” এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোং লিঃ- এ চাকুরী ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন অস্থায়ী ১১৭ কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

অভিযোগ উঠেছে, মোটা অংকের নিয়োগ বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে, চুক্তিভিত্তিক হিসেবে নিয়োগের ৫ থেকে ২০ বছর অতিক্রম হলেও তাদেরকে স্থায়ীকরণ করা হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা চলে আসছে। পূর্বে পদ্মা অয়েল কোম্পানীতে কর্মরত অধিকাংশ কর্মকর্তা ও কর্মচারী কে চুক্তি ভিত্তিক ও ক্যাজুয়েল থেকে স্থায়ীকরণ করা হয়। ইতিপূর্বে চুক্তি ভিত্তিক কর্মকর্তা ও ক্যাজুয়েল কর্মচারী থেকে অনেককেই স্থায়ীকরণ করা হয়েছে।

যাদের অধিকাংশই বিভিন্ন সিন্ডিকেট, নিয়োগ বাণিজ্য, কেউবা সচিবের ছেলে, কেউবা সচিবের ভাগিনা, কেউবা সচিবের সুপারিশে কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদে স্থায়ী নিয়োগ হন। প্রতিষ্ঠানটিতে উচ্চ শিক্ষিত অস্থায়ী কর্মকর্তাদের বেতনের চেয়ে, কম শিক্ষিত স্থায়ী কর্মচারীদের বেতন ভাতা অনেক বেশি।অস্থায়ী কর্মকর্তারা বেতন ভাতা বাবদ পাচ্ছেন সর্ব সাকুল্যে মাসিক ২৫০০০/- টাকা , আর কর্মচারীরা পাচ্ছেন ১০-১২ হাজার টাকা। ২০১২ ইং সাল থেকে ২০১৬ ইং সাল পর্যন্ত, চুক্তিভিত্তিক থেকে যাদেরকে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে, তারা হলেন, মো: শাহজাহান (সিকিউরিটি অফিসার), মো: আমিনুর রহমান (জুনিয়র কর্মকর্তা), নাজমুল অয়ন খান,(কর্মকর্তা), যনাথন বাড়ৈ (প্রকৌশলী কর্মকর্তা), মোঃশাকিল মাসুদ (সহকারী ব্যবস্থাপক, প্রকৌশলী), মোহাম্মদ কফিলুস সাত্তার (সহকারী ব্যবস্থাপক, প্রকৌশলী), ইঞ্জিনিয়ার ব্রজেন্দ্রনাথ (সহকারী ব্যবস্থাপক)। মোঃ রাহাত হাসান রনি (জুনিয়র কর্মকর্তা)কে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়।

আর এসব অপকর্মের মূল নায়ক প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলে জানান ভুক্তভোগিরা।

পদ্মা অয়েলে নিয়োগ বাণিজ্য: ১১৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্থায়ীকরণ আটকে আছে বছরের পর বছর

উল্লেখ্য,মোঃ রাহাত হাসান রনি চুক্তিভিত্তিক অফিসার হিসাবে ছিলেন না, এমনকি পরীক্ষা দিয়েও ঢুকেননি! রাগিব হাসান (কর্মকর্তা, প্রকৌশলী) নামে বর্তমানে হেড অফিসে একজন কর্মরত আছেন।তিনি সাবেক ডিজিএম (এইচ.আর.এডমিন) রফিকুল হাসানের ছেলে। অভিযোগ রয়েছে, বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) পরীক্ষা দিয়ে, রেজাল্ট আউট হওয়ার আগেই ২০১৪ ইং সালের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগ পান পিতার ক্ষমতা বলে। অথচ, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শর্ত ছিল, প্রকৌশলী পদে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাহলে, তিনি কোন বিধি বলে নিয়োগ পেলেন? বর্তমানে তাদের মধ্য থেকে অনেকেই পদোন্নতি পেয়ে অফিসার,সিনিয়র অফিসার, সহকারী ব্যবস্থাপক, উপ-ব্যবস্থাপক হিসাবে চাকুরীরত আছেন। বাকি ২৮ জন কর্মকর্তা ও ৮৯ জন কর্মচারীকে স্থায়ীকরণ করা হচ্ছে না রহস্যজনক কারণে! তারা কোম্পানীর ৫% লভ্যাংশ, চিকিৎসা ভাতা, ছুটিসহ সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

যেখানে কোম্পানীর একজন স্থায়ী শ্রমিক/স্টাফ/ড্রাইভার এর বেতন ভাতা সহ মাসিক ৫০০০০/-(পঁঞ্চাশ হাজার) থেকে ৭০০০০/- (সত্তোর হাজার) টাকা। সেখানে একজন অস্থায়ী শ্রমিক খাটছে ১০/১২ হাজার টাকা। আর, একজন চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা সর্বসাকুল্যে ২৫০০০/-টাকা, সেখানে একজন স্থায়ী কর্মকর্তা পাচ্ছেন বেতন ভাতা ও মেডিকেল ভাতা, উৎসব ভাতা ও লভ্যাংশ সহ গড়ে ৭৫০০০/- থেকে লক্ষ টাকার উপরে ।

উল্লেখ্য যে, ২০০৯ ইং সালে ১৮ জনকে এবং ২০১২ ইং সালে ৮৮ জন কর্মচারীকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে স্থায়ীকরণ করা হয়। কোম্পানীর কিছু অসৎ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নেতা এসব নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে সরাসরি জড়িত। ২০১৯ ইং সালে লোক দেখানে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বাহির থেকে ড্রাইভার পদে স্থায়ী ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ ১৮ হতে ২০ বছর যাবৎ অস্থায়ী ভাবে কর্মরত ড্রাইভারদেরকে স্থায়ীকরণ করা হয়নি! কারণ, তাদের পক্ষে মোটা অংকের টাকা প্রদান করা সম্ভব ছিল না। অথচ এ বিষয়ে কোন সংস্থা থেকে আজও যাচাই করা হয়নি। এ কারনে, এখনোও পর্যন্ত কোম্পানীর ভিতরে চরম ক্ষোভ বিরাজমান রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, কোম্পানীর একাধিক ম্যানেজার,এজিএম,ডিজিএম,জিএম দুর্নীতির সাথে সরাসরি জড়িত থাকার পরও, তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদে, ভাইটাল ডিপোর দ্বায়িত্বে ও প্রকল্প পরিচালক হিসাবে পদোন্নতি দিয়ে রেখেছে। যারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। ফলশ্রুতিতে, যোগ্য কর্মকর্তারা হতাশাগ্রস্থ হয়ে কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলেছেন। এতে করে,কোম্পানী ক্ষতি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এটি একটি রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান এখানে নিয়মের বাইরে কাউকে নিয়োগ ও স্থায়ী করা সম্ভব নয়। বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তাদের ওই নিয়োগে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হবে। তাদের জন্য শর্তও শিথিল করা হবে।