অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ফটিকছড়ির চেয়ারম্যান জানে আলমের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমান পেয়েও ব্যবস্থা নিচ্ছে না দুদক

0
.

দুদকের অনুসন্ধানে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রমাণ মিললেও, অর্থের বিনিময়ে এক ইউপি চেয়ারম্যানকে মামলার আওতায় না এনে উল্টো আইনের ফাঁকফোকরে ছাড় দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে স্বয়ং দুদকের বিরুদ্ধে। গতকাল (২১ নভেম্বর) শনিবার সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন মামলার বাদিরা।

এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিটও করেছে ভুক্তভোগিরা। যা আগামী ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে আদেশ বাতিল করে অভিযোগ কারীর আবেদন পূনঃবিবেচনার জন্য দুদক চেয়ারম্যানকে আদেশ দেন হাইকোর্ট।

ফটিকছড়ির দাঁতমারা ইউনিয়নের সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষে মো. শাহিদুল আলম নাহিদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির উপজেলার সর্ববৃহৎ ২নং দাঁতমারা ইউনিয়নের গত ২০১১ ইং সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন মো. জানে আলম। গত ২০১৫-২০১৬ ও ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয় থেকে হতদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসুচীর প্রায় সোয়া কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত ৮ নভেম্বর ২০১৬ ইং এবং ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখ দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পৃথক দুটি আবেদন করি।

এ নিয়ে বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টিভির টিম ৩৬০ ডিগ্রী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করে। এ ছাড়াও স্থানীয় এবং জাতীয় প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় এসব অনিয়ম দুর্নীতির সংবাদ প্রচারিত হয়। এর পর দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৪১ জন সাক্ষীর স্ব-শরীরে সাক্ষ্য গ্রহন করেন। প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা এবং স্বাক্ষীদের সাক্ষ্যমতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ একটি প্রতিবেদন দুদক চেয়ারম্যান বরাবরে প্রেরন করে। যেখানে চেয়ারম্যান মো. জানে আলমসহ সংশ্লিষ্ট ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদক আইনে মামলা দায়ের, চেয়ারম্যান মো. জানে আলমের সম্পদ বিবরনীর নোটিশ জারি এবং উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলামসহ অপরাপর সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হয়।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় দুদকের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা গুটি কয়েক অসাধু কর্মকর্তার গোপন আতাঁতের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশকে উপেক্ষা করে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে মামলা থেকে কৌশলে বাদ দিয়ে শুধু মাত্র আত্মসাৎকৃত সোয়া কোটি টাকা সরকারী অর্থের মধ্যে মাত্র সাড়ে ৬ লাখ টাকা কোষাগারে জমা প্রদানের অনুমোদন দেয়া হয়। বিষয়টি আমরা অবগত হওয়ার পর দুদক চেয়ারম্যান বরাবর বিষয়টি পূনঃবিবেচনার জন্য গত ৮ অক্টোবর এবং ৯ নভেম্বর পৃথক দুটি আবেদন করি। কিন্তু আমাদের আবেদন গুলোকে দুদক প্রধান কার্যালয় আমলে না নিয়ে তাঁদের পূর্বের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।

এমন অবস্থায় আমরা মহামান্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করি। গত ১৯ নভেম্বর মাননীয় বিচারপতি এনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ শুনানী শেষে আগামী ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে পূর্বের আদেশ বাতিল করে অভিযোগ কারীর আবেদন পূনঃবিবেচনার জন্য দুদক চেয়ারম্যানকে আদেশ দেন।

শুধু তাই নয়, অভিযুক্ত চেয়ারম্যান দুদকের মামলা ডিসমিস করেছে মর্মে এলাকায় নানাভাবে প্রচারনা চালাচ্ছে এবং অভিযোগকারী হিসেবে আমাদেরকেও নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। ইতোমধ্যে অনিয়মের প্রতিবাদ করে অভিযোগ করায় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনকে এবং অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক আবু মুছা জীবনকে দুটি করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। চেয়ারম্যান টাকার জোরে উপর মহলে সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলেছে এই দম্ভোক্তি দেখাচ্ছে এলাকায়।

এমতাবস্থায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারী অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে অভিযোগকারী হিসেবে আমরা শংকা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তদন্তে অভিযুক্ত প্রমাণিত হওয়ার পরেও এ ধরনের দুর্নীতিবাজদেরকে মামলার আওতায় না এনে উল্টো আইনের ফাঁকফোকরে ছাড় দেয়া হলে দুদকের প্রতি দেশের জনমানুষের আস্থার সংকট তৈরি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন অবস্থানে থাকার ফলে বিভিন্ন স্তরের দুর্নীতিবাজরা যখন একে একে পাকড়াও হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী ও তথাকথিত জনপ্রতিনিধির বির্তকিত ভুমিকায় বর্তমান সরকারের প্রসংশিত অর্জনগুলো ম্লান হচ্ছে।