অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

কেডিএস গ্রুপের রোষানলে পড়ে ১১মাস কারাবন্দি আমেরিকার পাসপোর্টধারী মুনির হোসেন

0
সংবাদ সম্মেলন। ইনসেটে মুনির হোসেন।

ব্যাংক অব আমেরিকার অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্টের চাকরি ছেড়ে দেশে এসে যে প্রতিষ্ঠানে ১০ বছর চাকুরি করে প্রতিষ্ঠানকে উন্নতির শিখরে পৌছে দিয়েছেন সে কর্মকর্তাকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ কেডিএস গ্রুপের বিরুদ্ধে।

প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষের শিকার হয়ে মিথ্যা মামলায় বিনাবিচারে জেল খাটছে আমেরিকার পাসপোর্টধারী চট্টগ্রামের সন্তান মুনির হোসেন।

কেডিএস গ্রুপের মালিক খলিলুর রহমান ও তার  পরিকবারের মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলা থেকে সন্তানকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে  সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার অসহায় পিতা চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন খান।

আজ বুধবার (২৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এই অসহায় পিতা বলেন, তার ছেলে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ব্যাংক অব আমেরিকা ফ্লোরিডায় সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চাকুরি করে। ২০০৭ সালে মুনির হোসেন তার স্কুল বন্ধু কেডিএস গ্রুপের কেওয়াই স্টিলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমানের অনুরোধে দেশে এসে কেওয়াই স্টিল মিলের নির্বাহী পরিচালক হিসাবে যোগদান করে। অল্প সময়ে কোম্পানির এই উন্নতি মুনির হোসেন খাঁনকে নির্বাহী পরিচালকের পদ থেকে পেইড ডাইরেক্টর করা হয়। এরপর তার রক্ত-ঘাম-মেধায় এই প্রতিষ্ঠান দেশের একটি শীর্ষ স্থানীয় টিন উৎপাদনকারি প্রতিষ্টানে (মুরগি মার্কা ঢেউটিন) পরিনত হয়। ২০০৭ সালে মুনির কেডিএস গ্রুপের এই কোম্পানিতে যোগ দেন তখন এর মূলধন ছিল অল্প টাকা। ২০১৮ সালে তা বিশাল অঙ্কে দাঁড়ায়। কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার মুনির হোসেনের সাফল্যের কথা স্টিল জগতে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের দ্বিতীয় ছেলে ইয়াসিন রহমান টিটু উত্তরাধিকারসূত্রে কেওয়াই স্টিলের একজন মালিক। বর্তমানে তিনি জেলবন্দী থাকায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিতরেই নিয়মিত কেওয়াই স্টিলের ব্যবসায়ীক নীতি-নির্ধারনী সভা করেন। ঠিক পূর্বের ন্যায় ১১ এপ্রিল ২০১৮ সালে বিকালে প্রতিষ্ঠানের একাউন্টস ইনচার্জ ইমরান হোসেন এবং জিএম আবদুল কালামসহ ১০ কর্মকর্তাসহকারে কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে বোর্ড মিটিং। মিটিংটি বসে জেল সুপারের কক্ষের পাশে কনফারেন্স রুমে। সেসময় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাকবিত-ার এক পর্যায়ে অন্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সামনে টিটু প্রায় এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে মারধর করে হুমকি দেয় বাইরের কাউকে না বলার জন্য। ঘটনাটি আমার ছেলে তার বন্ধু সেলিম রহমানকে ২০১৮ সালের ১০ মে একটি ইমেইল করে জানায়। এরপর আরো একাধিকবার সেলিম রহমান এবং খলিলুর রহমানের সাথে দেখা করে কথা বলার চেষ্টা করে। তারা কোন সাড়া দেননি।

হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলার কথা উল্লেখ করে মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, ২০১৮ সালের জুন থেকে কেডিএস গ্রুপের চাকুরি ছাড়ার পর প্রায় দেড় বছর বেকার থাকে মুনির। পরিবার নিয়ে কষ্টে পড়ে যায় মুনির। সবাই তাকে আমেরিকায় চলে গিয়ে সেখানে স্থায়ী হওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু মুনির নিজের আত্মবিশ্বাস ছিল। সে দেশে থেকে যায়। ২০১৯ সালে মুনির আরেকটি কোম্পানি এ্যাপোলো স্টিলের পরামর্শক হিসাবে যোগদান করে। কোম্পানিটি পরবর্তীতে মুনিরের নেতৃত্বে কেওয়াই স্টিলের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে। এতে তারা আরো ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। এই কোম্পানি ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়। তাতে ব্যর্থ হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি অংশকে ব্যবহার করে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর প্রথম চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানায় একটি গাড়ি চুরির মামলা করে। মামলায় যেসময়টা উল্লেখ করা হয়েছে সেসময় মুনির ঢাকায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ছিলেন। ওইসময়ের সিসিটিভি ফুটেজ স্কুল থেকে সংগ্রহ করে আদালতে জমা দেয়া হয়। তবুও এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে তিনবার রিমান্ডে আনে পুলিশ। এরপর একে একে আরো ২৫টি মামলা করে। একটি মামলা থেকে জামিন নেয়ার আগে আরেকটি করে। আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় ৫ টি, ঢাকার গুলশান থানায় একটি এবং চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেহ মোহাম্মদ নোমানের কোর্টে ১৯ মামলা করে কেডিএস গ্রুপ। মামলার মধ্যে সে এখন ২০ টিতে জামিনে আছে। গাড়ি চুরির মামলা ছাড়া বাকি সব মামলা প্রায় একই রকম অভিযোগ। প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ করার কথা বলা হয়েছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে বাংলাদেশস্থ আমেরিকান দুতাবাস তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে পত্র দিয়েছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে ফ্যাক্টরির জন্য কাঁচামাল আমদানির সময় রপ্তানিকারক থেকে কমিশন নেয়ার অভিযোগ আনা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মুনিরকে ওইসব কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে একটি কাল্পনিক চুক্তিও তারা আদালতে উপস্থাপন করছে। কিন্তু মুনিরের পিতা হিসেবে আমি ওইসব কোম্পানিতে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি মুনির তাদের কোন এজেন্ট নয়। তারা যে চুক্তিপত্র দেখাচ্ছে তা ভূয়া।

অসহায় এই পিতা বলেন, তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের একজন সাবেক কর্মকর্তা এবং একজন ক্যাপ্টেন। বন্দর থেকে অবসর নিয়ে তিনি তার ছোট ছেলেকে নিয়ে তার প্রতিষ্ঠান চালান। মুনির স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় এবং উচ্চ বেতনে চাকুরি করায় তাকে তাকে ব্যবসায় সম্পৃক্ত করেননি এবং তার কাছ থেকে কোনদিন একটা টাকাও নিইনি। কারণ তার কাছ থেকে টাকা নেয়ার প্রয়োজন আমার হয়নি। অথচ কেডিএস গ্রুপ হয়রানিমূলকভাবে মুনিরের বিরুদ্ধে যেসব মামলা করছে, সেসব মামলায় আমাকে এবং আমার ছোট ছেলের নামও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যুক্ত করে দিয়েছে। অথচ কেডিএস এর সাথে আমাদের কোন ধরনের সম্পর্ক নেই। এতেই বুঝা যায়, মামলাগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং হয়রানিমূলক। কেডিএস এর টাকা আছে। তারা টাকার বিনিময়ে প্রশসানের একটি অংশকে ব্যবহার করে আমাদেরকে হয়রানি করছে।