অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

আদালতের ব্যাতিক্রমী রায়: মাদক বিক্রেতা চালাবে মাদক বিরোধী প্রচারণা!

0
.

সিলেটে আদালতের উদ্যোগে এক সময়ের মাদক বিক্রেতা এখন মাদকবিরোধী প্রচারে। ওই মাদক বিক্রেতার প্রচারণায় মূখর আদালতপাড়া, অলিগলি, স্কুল কলেজ সর্বক্ষেত্র। আদালতের এক যুগান্তকারী রায়ে বছরব্যাপি মাদক বিরোধী প্রচারণায় আত্মনিয়োগ করেছে মাদক বিক্রেতা ওই ব্যক্তি। সৃষ্টি হয়েছে ছাত্রশিক্ষক ও আবাল বৃদ্ধ বণিতা সকলের মধ্যে মাদক বিরেধী সচতেনতা। কারাদন্ডের বদলে তাকে মাদকবিরোধী প্রচারণায় লাগিয়ে তাকে সুস্থ পথে ফিরে আনার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে সর্বমহল।

জানা গেছে সিলেটে এক মাদক বিক্রতাকে কারাদন্ডের বদলে বছর ব্যাপি প্রবেশন শাস্তি হিসেবে বছরব্যাপি মাদক বিরোধী প্রচারণায় লাগিয়ে দেন সিলেটের যুগ্ম দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক আলী মনসুর।

গত ২২ নভেম্বর’ মাদক নিয়ন্ত্রন আইনের একটি মামলায় অভিুযক্ত ব্যক্তিকে কারাগাওে না পাঠিয়ে একবছরের জন্য মাদকবিরোধী প্রচারণা ও আত্মশুদ্ধিমূলক কর্মকান্ডের প্রবেশন শীর্ষক আদেশ প্রদান করেন।

আদেশপ্রাপ্ত আব্দুর শুকুর সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার যশপুর গ্রামের ইউসুফ আলীর পুত্র। দায়রা -১০৫৮/২০১৮ নং মামলার রায়ে বিচারক আসামী আব্দুর শুকুরকে কারাদন্ডের বদলে কোর্টের একজন প্রবেশন অফিসারের অধীন বছরব্যাপি হ্যান্ড মাইকযোগে মাদকবিরোধী প্রচার চালাতে ও আত্মশুদ্ধিমূলক সাধনায় নিযুক্ত থাকতে নির্দেশ দেন।

আদালতের দেওয়া মাদকবিরোধী প্রচারের ভাষা হচ্ছ- “সুধীজন, মাদক বিক্রয়, পরিবহন ও সেবন একটি আইনী অপরাধ। এই অপরাধ করলে আইনে কঠোর শাস্তির বিধান আছে। মাদক বিক্রয়, পরিবহন ও সেবন একটি সামাজিক অপরাধও। এই অপরাধে জড়িত ব্যক্তিরা সমাজ ও পরিবারের ঘৃণিত ব্যক্তি হয়। তাদের সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়। তাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম চরম অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হয়। এটি আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির কারণ হয়।

মাদক সেবন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিনষ্ট করে এবং শরীরে দূরারোগ্য ব্যাধি সহ নতুন নতুন রোগের বাসা বাধে। মাদক সেবনের ফলে আমাদের তরুণ সমাজ ধ্বংসের মূখে পতিত হয় যার ফলাফল পুরো জাতিকে ভোগ করতে হয়। আমরা আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি আপনারা মাদক বিক্রয়, পরিবহন ও সেবন থেকে বিরত থাকবেন এবং আপনাদের সন্তান, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের কেও বিরত থাকতে বলবেন। না হয়, ভয়াবহ পরিণতি বরণ করতে হবে। তাই মাদককে ‘না’ বলুন; মাদককে ঘৃণা করুন। আমরা ভবিষ্যতে কখনো মাদক বিক্রয়, পরিবহণ ও সেবন করব না।”

আদালতের রায় মোতাবেক প্রবেশন প্রাপ্ত আব্দুর শুকুরকে চলতি ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর থেকে শুরু করে ২০২১ সালের ২১ মে পর্যন্ত প্রত্যেক ইংরেজী মাসের সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে ১১টা পর্যন্ত জেলা আইনজীবি সমিতির কার্যালয় সম্মূখে আদালত প্রাঙ্গণে এবং প্রত্যেক বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত সিলেট নগরের জনতার কামরান চত্বরের সামনে হাজির হয়ে হ্যান্ডমাইক যোগে উপরোক্ত মাদকবিরোধী বক্তব্যের প্রচার করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট পূর্বে কোর্ট ইন্সপেক্টরের কাছ থেকে হ্যান্ডমাইক সংগ্রহ করে প্রচারণা শেষে তা ফেরত দিতে হবে।

আদালতের আদেশ মোতাবেক প্রবেশনপ্রপ্ত আব্দুর শুকুরকে ২০২১ সালের ১ জুন থেকে ১৫ অক্টবর পর্যন্ত সিলেট মোট্রোপলিটন এলাকাধীন ১৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চত্বরে খোলাকালীন তারিখে গিয়ে কোর্ট নির্ধারিত তারিখ ও সময়সীমার মধ্যে প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১দিন করে মাদকবিরোধী প্রচারণা চালাতে হবে।

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- এমসি কলেজ, মদন মোহন কলেজ,অগ্রগামী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্লু বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ, পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজ, সরকারী মহিলা কলেজ, আম্বরখানা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, রাজাজিসি স্কুল এন্ড কলেজ, অগ্রগামী সরকারী বালক বিদ্যালয়,সিলেট ইন্টারন্যানাল কলেজ,দক্ষিণ সুরমা সরকারী কলেজ, শাহজালাল স্কুল এন্ড কলেজ, হাজী আব্দুস সাত্তার হাই স্কুল এন্ড কলেজ , শাহ খুররম ডিগ্রী কলেজ এবং বর্ডার গার্ড স্কুল এন্ড কলেজ। প্রচারের সময় আসামী মাদক সহ পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হওয়ার কথাও শেয়ার করতে হবে।

প্রবেশন কালীন আসামী মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর লিখিত দুটি বই (১। একাত্তরের দিনগুলো-জাহারা ইমাম ও ২।একাত্তরের ঢাক মুক্তিযোদ্ধাদের উপর লেখা); ইসলাম ও নৈতিকতার উপর লিখিত ২টি বই পড়তে হবে এবং দুটি সিনেমা যথাক্রমে- আগুনের পরশমনি, ওরা ১১জন দেখতে হবে। এছাড়াও আসামী আব্দুর শুকুর প্রবেশনকালীন পরিবেশের উপর দায়িত্বশীল হিসেবে ২টি বনজ ও ৩টি ফলজ মোট ৫ টি গাছ রোপন করবে।

প্রবেশনের উল্লেখিত কোন শর্ত ভঙ্গ করলে বা সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট সন্তোষজন না হলে আসামী আব্দুর শুকুরকে ১বছর কারাদন্ড ভোগ করতে হবে। আর যথাযথ শর্ত পূরন করলে এই দন্ড মওকুফ এবং তা’ তার চাকরিসহ ভবিষ্যৎ জীবনে কোনরুপ অযোগ্যতা হিসেবে গণ্য হবে না বলে আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৫ মে দিবাগত রাতে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের সামনে নেশাজাত দ্রব্য (ঈড়হপড়ৎ ঝুৎঁঢ়) সহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় আব্দুর শুকুর। এ ঘটনায় জেন্তাপুর থানার এসআই সুজন কুমার আচার্য্য বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা{নং-১৩(৫)১৮} করেন। বিচারান্তে এ মামলায় কারাদন্ডের বদলে বিচারক তাকে মাদকবিরোধী প্রচারণার প্রবেশন দেন।