
তারেক শাহরিয়ার:
প্রজেক্ট থেকে রিক্সাযোগে এসে ভাঁড়া পরিশোধ করে বাসায় ঢুকছিলাম। কিন্তু রিক্সাচালক ভাইয়ের দীর্ঘনিঃশ্বাস শুনে পাঁ থেমে গেছে। তারপর শুরু হলো কথোপকথন। কিছুতেই কথা বলতে পারছিলেন না। দেশ এবং সরকারের প্রতি তীব্র ঘৃণাভরা কথাগুলো শুনে আমারই বুক কেঁপে উঠছিলো। কারন তার প্রতিটি কথায় অভিশাপ ঝরেছে। যাই হোক – তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। নামঃ সৈয়দ জহিরুল হক পরাগ, পিতাঃ সৈয়দ নাজিমুল হক, বাড়ী কিশোরগঞ্জ পাকুন্দিয়া থানার পুরাতন বাজার এলাকায়। বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ নাজিমুল হক সাহেব পেশায় অগ্রনী ব্যাংকের ম্যানেজার ছিলেন। সততার জন্য কিছুই করতে পারেননি। সারাজীবন শুধু সম্মান নিয়ে চলার কথাই ভেবেছেন। তদুপরি তিনি ছিলেন পরোপকারী মানুষ। কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য কিশোরগঞ্জের কিছু পরিচিত জন এবং পুরোনো দুজন অগ্রনী ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে, তারা জানিয়েছেন এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা, বলার কিছু নেই। এরশাদ সরকার থেকে বিভিন্ন সরকার পরিবর্তনের পর বর্তমান সরকারের আমলে এসে মাত্র কিছুদিন আগে সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা তাঁর সনদ পেলেন। কিন্তু সনদ প্রাপ্তি পর্যন্তই শেষ। অথচ এই সনদের জন্য ঘুরতে ঘুরতে তাদের জীবন ধংস। কতো নেতার পেছনে ঘুরেছেন একটা চাকুরীর জন্য। দয়া হয়নি কারো। মুক্তিযোদ্ধা সনদ হাতে নিয়েও তাদের কাছে গিয়েছিলেন। বলা হয়েছে বয়স নেই।
আর্থিক দুর্বলতার জন্য HSC এর পর আর লেখাপড়া করতে পারেন নি। কেউ ভালো কোনো কাজ দেননি। তাই লজ্জার কারনে নিজ এলাকার বন্ধু স্বজনদের নজর এড়িয়ে ফেনীতে এসে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কিন্তু মন থেকে এই জীবন মেনে নিতে পারছেন না। মানার কথাও নয়। কারন আমরা ক্রমাগত শুনতে পাই মুক্তিযোদ্ধাদের সব রকম সুযোগ সুবিধা দিয়েছে সরকার। এই হলো তার নমুনা। অথচ ভারতীয় লোকে ভরপুর লালমনিরহাট এলাকায় কতো ভারতীয় লোক বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে বসে আছে। তাদের সন্তানরাও বেশ ভালো ভালো চাকুরী বাগিয়েছে। কোনো আওয়াজ নেই। সাবেক যোগাযোগ ও ত্রান উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু এসব বিষয় নিয়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর সবকিছু চাপা পড়ে গেছে। তাই বাংলাদেশীরাও সেখানে দূর্বল হয়ে আছে। অন্যদিকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরাগ রিক্সা চালায়। ঘৃনার কথা অনেক বলা যায়, তাতে লাভ কি !! শুধু এটুকুই বলি, কিশোরগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হয়ে যিনি আরাম আয়েশ ভোগ করছেন, সেই পর্যন্ত আমার এই বক্তব্য যদি পৌঁছায় – তবে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে মানষিক যন্ত্রনা মুক্ত করে সম্মানজনক জীবিকা নির্বাহের ব্যাবস্থা করার অনুরোধ রাখছি। দেশ অন্তত একটু হলেও অভিশাপ মুক্ত হোক। কেউ যদি দায়িত্ব মনে করেন, তবে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিতে পারেন।
সূত্র: কণ্ঠশিল্পী তারেক শাহরিয়ারের ফেসবুক আইডি থেকে নেয়া
You must log in to post a comment.