অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

করোনা : ইতালির প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ৩০০ মামলা

0
.

ইতালির প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন করোনায় মৃতের স্বজনেরা। সরকারি অবহেলায় ইতালিতে করোনা ছড়িয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। এর জন্য তারা ১০ কোটি ইউরো ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানায়, ইতালির উত্তর লম্বার্ডির রাজ্য সরকার প্রধানের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ এনেছেন করোনায় মৃত স্বজনেরা। তিনজনের বিরুদ্ধে কয়েকশ মামলা করেছেন তারা। চীনের উহানের পরেই ইতালিতে দ্রুত সংক্রমিত হয়েছিল করোনা। দেশটি রীতিমতো মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়। মৃতদের ৫০০ জন আত্মীয় একজোট হয়ে এ মামলা করেছেন।

ইতালির উত্তর লম্বার্ডিতে প্রথম দিকে খুবই দ্রুত সংক্রমিত হয় ভাইরাসটি। করোনায় মৃত এক ব্যক্তির বাবা দাবি করেছেন, করোনা ছড়াচ্ছে দেখেও সরকার ব্যবস্থা নেয়নি। চীন থেকে আসা মানুষদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়নি। করোনা রুখতেও ব্যবস্থা নেয়নি। সরকারের এই অবহেলার জন্য করোনা আরো দ্রুত ছড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, উত্তর লম্বার্ডির একটি হাসপাতালে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তা সত্ত্বেও হাসপাতাল খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

করোনার সমস্যা যখন রীতিমতো উদ্বেগজনক তারও তিন সপ্তাহ পরে ১০ মার্চ থেকে ইতালিতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। লম্বার্ডির আইনজীবীরা এখন খতিয়ে দেখছেন, লকডাউন আগে ঘোষণা করা উচিত ছিল কি না। লকডাউন ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে ফেডারেল ও রাজ্য স্তরের কর্মকর্তারা বিপাকে পড়তে পারেন, কারণ দায় তাদের ওপরেই আসে।

নই ডিনানসেরেমো বা উই উইল ডিনাউন্স গোষ্ঠীর সভাপতি লুকা ফাসকো বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বারবার ইতালি সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছিল। তাদের পরামর্শ মানলে মৃতের সংখ্যা অনেক কম হতো। এই গোষ্ঠীই ৩০০টি মামলা দায়ের করেছে।

অভিযোগ, ইতালির ফেডারেল করোনাভাইরাস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানকে আপডেট করা হয়নি। ২০০৬ সালের মহামারি নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা নিয়েই তারা করোনার মোকাবিলা করতে চেয়েছে। তার ফলে রাজ্যস্তরে যতটা প্রস্তুতি দরকার ছিল, তা হয়নি।

এরই মধ্যে ডব্লিউএইচও-র কর্মকর্তা জামবোন গুরুতর অভিযোগ করেছেন। তিনি সংস্থার পক্ষে একটি রিপোর্ট তৈরির দলে ছিলেন। সেখানে ইতালি কীভাবে করোনা সামলেছে, তার সমালোচনামূলক তথ্য ছিল। তার অভিযোগ, প্রকাশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডাব্লিউএইচও সেই রিপোর্ট মুছে দেয়।

সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, করোনা মোকাবিলায় পুরোনো আমলের পরিকল্পনা নিয়ে চলছিল ইতালি। সেখানকার হাসপাতালের অবস্থা ভয়ঙ্কর ছিল। অভিযোগ, ডাব্লিউএইচও-র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর জেনারেল ফর স্ট্র্যাটেজিক ইনিশিয়েটিভের কাছে আরজি জানিয়ে এই রিপোর্ট সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আগে ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তিন বছর কাজ করেছেন। মহামারি রোধের পরিকল্পনা আপডেট করার কাজ তারই করার কথা ছিল। এখনো পর্যন্ত ইতালিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৭০ হাজার মানুষ মারা গেছেন। মধ্য জুলাই থেকে করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে অর্ধেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

আইনজীবীদের দাবি, সাধারণ মানুষ তাদের সুরক্ষার দায়িত্ব রাজ্য ও ফেডারেল সরকারের হাতে দিয়েছিল। কিন্তু দুই সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তার মতে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বড় কথা নয়। এক ইউরো জরিমানা হতে পারে। কিন্তু তারা দেখাতে চান, করোনা মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ ও তারা ঠিক সিদ্ধান্ত সময়ে ঘোষণা করেনি।