অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

“সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে সাড়ে ৩ বছর বাড়ী ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা জাকির”

0
.

চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানা এলাকায় স্থানীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী চটপটি আলাউদ্দিন ও তার বাহিনীর ভয়ে দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছর এলাকা ছাড়া একাত্তরের রণাঙ্গণে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: জাকির হোসেন ও তার পরিবার।

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের দাবী সন্ত্রাসী চটপটি আলাউদ্দিন বাহিনী দ্বারা একাধিকবার মারধরের স্বীকার হয়ে এলাকা ছাড়া হলেও কোন সহযোগীতা পাননি স্থানীয় পুলিশ প্রশসানের নিকট। খোদ পুলিশ কমিশনার বরাবর মৌখিক অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি এই মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।

সরকারদলীয় প্রভাবশালীর ভূমি দস্যুর ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন এসব করছে বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।

ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, আকবরশাহ থানার উওর কাট্টলী ১০ নং ওয়ার্ডের অসহায় মুক্তিযোদ্ধা মো: জাকির হোসেন ৩/৪/২০১৩ তারিখে আদালত কর্তৃক পৈত্রিক ও ক্রয়কৃত জমি দখল পায়। উক্ত জমি উপর বিল্ডিং নির্মাণ কাজ করতে গেলে সন্ত্রাসী চটপটি আলাউদ্দিন তার বাহিনী বাঁধা দেয়। ২০১৭ সালে ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্বা জাকির হোসেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের কয়েকদফা আইনশৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় মারধর করে।

আরও খবর: হত্যাসহ ১৯ মামলার আসামী আকবর শাহ’র ‘চটপটি আলাউদ্দিন’এখনও অধরা

এসময় তারা নির্মাণ কাজের মালামাল লুটপাট করে নিয়ে। র্সবশষে ১৫/১১/২০১৮ ইং তারিখে মহামান্য্য সুপ্রীম কোর্টে আদেশ মোতাবেক জমি Possession & Position বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। আলাউদ্দিন গং উক্ত আদেশ লংঘন করে মুক্তিযোদ্বা মো: জাকির হোসেন ভাড়াটিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের মারধর করে রক্তাক্ত করে।

মুক্তিযোদ্ধা মো: জাকির হোসেন পাঠক ডট নিউজকে জানান, আমরা যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। অথচ স্বাধীন দেশে আজ আমি পরাধীন। নিজের বসতভিটাতে যেতে পারছি না। সন্ত্রাসীর ভয়ে সাড়ে ৩ বছর যাবত নিজের বসত ভিটায় যেতে পারছি না। বসতভিটা খালি পড়ে আছে। ভাড়াঘর থাকা অবস্থায় কেয়ারটেকার থাকলেও বর্তমানে বসতভিটা দেখার কেউ নেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানান, মো: জাকির হোসেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে ১৯ মামলার আসামী আলাউদ্দিনের ভয়ে স্বপরিবারে ছেড়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। কাট্টলীর নিজ বসত ভিটা থাকা অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা মো: জাকির হোসেন এর উপর হামলা করে মাটিতে ফেলে মারধর করে ও পুলিশে যোগ দেওয়া ছোট ছেলে সাখাওয়াত হোসেনকে রড দিয়ে আঘাত করে মাথায়।

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের দাবী, তাদের প্রতিবেশী ও সীতাকুণ্ড আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের সেল্টারে আলাউদ্দিন মুক্তিযোদ্ধ পরিবারে জায়গা সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য বার বার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।

তবে বিষয়টি অস্বিকার করেছেন দিদারুল আলম এমপি। পাঠক ডট নিউজের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, এসব ঘটনা তাদের পারিবারিক বিষয়। জায়গা জমি নিয়ে চাচা ভাতিজার বিরোধ। সেখানে আমার করার কিছু নাই। আমার চাচা মঞ্জুরুল আলম কমিশনার থাকাকালে অনেক সালিশ বিচার করেও এর সমাধান করতে পারেনি। তাছাড়া, মো: জাকির হোসেনদের পক্ষে কোন পারফেক্ট কাগজপত্র নেই।

তিনি বলেন, “আপনি সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তাদের কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেন। আমি একজন নিরপেক্ষ উকিল (আইনজীবি)র মাধ্যমে সমধান করে দেব। কিন্তু দেখবেন তারা (জাকির হোসেন) রাজি হবে না।”

স্থানীয় ব্যবসায়ী ইদ্রিস জানান, চটপটি আলাউদ্দিন গভীর সমুদ্রে ট্রলারে মাছ শিকাররের নামে মাদক পাচারে জড়িত। ২০১০ সালে কোষ্টর্গাড ট্রলার ধাওয়া করলে পালিয়ে যাওয়ার সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়। র্বতমানে সে স্থানীয় থানা পুলিশের সোর্স। আলাউদ্দনি এতোটাই বেপরোয়া যে তাকে কেউ থামাতে পারছনে না। কারণ সে একজন পশোদার মাদকব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যূ। স্থানীয় হাইব্রিড সরকারদলীয় প্রভাবশালীর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসাবে এলাকায় পরিচিত। তার বিরুদ্ধে থানা পুলিশের কাছে স্থানীয় মানুষের অসংখ্য অভিযোগ ও মামলা রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা মো: জাকির হোসেন এর বড় ছেলে জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা এতোটা অসহায় যে, ক্ষমতাধর আলাউদ্দিনের ভয়ে নিজ পৈত্রিক বাড়িতে যেতে পারি না। বাড়িতে গেলে তার বাহিনী নিয়ে দা- কিরিচ শাবল দিয়ে মেরে ফেলতে তেড়ে আসে। আমরা সরকারকে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, পৌরকর, আয়কর পরিশোধ করার পর ও উচ্চ আদালতের Possession & Position বজায় রাখার আদেশ থাকা সত্বেও উক্ত পৈত্রিক বসতভিটায় দীর্ঘ ০৩ বছর প্রবেশ করতে পারছিনা ও ভাড়াটিয়াদের থেকে ভাড়া বাবদ মাসিক ১,৫০,০০০/- টাকা দীর্ঘ ০৩ বছর ভাড়া পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি। আইন শৃংখলা বাহিনী থেকে আইনগত সহায়তা না পাওয়া দুঃখজনক ও অমানবিক বটে। আমরা এ ব্যাপারে  প্রধানমন্ত্রী ও আই‌জি‌পি ও পু‌লিশ ক‌মিশনার এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের হস্ত‌ক্ষেপ কামনা কর‌ছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে ফুসকা ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসাসহ এলাকায় ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে।সিটি গেইটের আগে সেবা হোটেলের নামে ফুসকার দোকানটি সড়ক ও জনপদের জায়গা। অবধৈভাবে জোড় পূবক দখল করলে ১৭/১২/২০১৪ তারিখে এবং ০৫/০৫/২০১৯ইং তারিখে দুইবার জেলা প্রশাসনের ম্যাজিষ্ট্রেট স্থানীয় থানার সহায়তায় উচ্ছেদ করলে সে ৩য় বার তার বাহিনী নিয়ে পুনরায় দখল করে।

বর্তমানে রাস্তার পাশে চটপটি আলাউদ্দিনের বসবাসরত বসতভিটা সরকারী জায়গা। যা পূর্বে রেজিয়া বেগমের নামে এক বয়স্ক বৃদ্ধ মহিলা ভোগদখলরত ছিল। চটপটি আলাউদ্দিন গলির মুখে সরকারী জায়গা দখল করে দোতলা বিশিষ্ট ফানির্সারে দোকান দিয়ে দখল করেছে যাহা র্পূবে মৃত আবুল কালাম এর ভোগদখলে ছিল।

নিজেকে পুঙ্গ ফুসকা বিক্রেতা দাবী করিলেও পুলিশ প্রশাসনের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য চলনার আশায় নিয়েছে। যদি পুঙ্গ হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে সরকারী জায়গা দখল করে এ প্রশ্ন মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেনের পরিবারের।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরকে বার বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

জানতে চাইলে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) এস এম মোস্তাক আহমেদ বলেন, এ ধরণের কোন ঘটনার বিষয়ে আমি জানি না। ওই মুক্তিযোদ্ধা যদি আদালতের ডকুমেন্ট নিয়ে আসে আমরা অবশ্যই তাকে সহযোগিতা করবো।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আলাউদিনের দুই মোবাইল ফোন নম্বরে বার বার ফোন দিয়ে মোবাইল নম্বর দুটি বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে তার সে নম্বরে এসএমএস পাঠিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।