অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

১০ বছরেও বিচার না পেয়ে হতাশ ফেলানীর পরিবার

0
বিএসএফর গুলিতে নিহত ফেলানীর লাশ এভাবেই তাঁর কাটায় ঝুলছিল।

সীমান্তে আলোচিত ফেলানী হত্যার ১০ বছর পূর্ণ হলো আজ ৭ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার। দীর্ঘ এক দশকেও মেয়ে হত্যার বিচার না পেয়ে হতাশ ফেলানীর পরিবার। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের চৌধুরীহাট সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর গুলিতে নিহত হয় কিশোরি ফেলানী।

ফেলানী কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী এলাকার নুরুল ইসলাম নুরু ও জাহানারা বেগমের মেয়ে। ফেলানির মরদেহ দীর্ঘ ঘন্টার পর ঘণ্টা কাটাতারে ঝুলে থাকার পর দুই দিনব্যাপী পতাকা বৈঠকের মাধমে ৮ জানুয়ারি বিএসএফ বাংলাদেশি বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। ৯ জানুয়ারি লাশ ময়নাতদন্ত শেষে তার গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ধুয়ে মুছে ফেলানীর কবর পরিস্কার করছেন তার মা।

ফেলানীর হত্যার খবর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচার হলে সাড়া বিশ্বে তোলপার শুরু হয়। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চরম নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় ফেলানী। বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মী, সংগঠন এবং বিজিবির পক্ষে থেকেও ফেলানি হত্যার বিচারের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। পরে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কোচবিহারের সোনারী বিএসএফ ছাউনিতে অমিয় ঘোষের বিচার কার্যক্রম শুরু করে দেশটির সরকার। আদালতে সাক্ষী দেন প্রত্যক্ষদর্শী বাবা নুরুল ইসলাম নুরু ও মামা আব্দুল হানিফ। ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত হত্যা এবং বিএসএফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয় অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে। ৫ বিচারকের এই আদালত বিএসএফ ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের হাবিলদার অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন।

ফেলানী হত্যার সঠিক বিচার না পেয়ে ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতীয় হাই কমিশনারের মাধ্যমে পুনরায় বিচারের আবেদন করেন ফেলানীর বাবা। পরে বিজিবি-বিএসএফের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পুনঃবিচারে বিএসএফ সম্মতি দিলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনর্বিচার শুরু হয়। ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম আদালতে অমিয় ঘোষকে আবারও অভিযুক্ত করে সাক্ষ্য দেন এবং তার সর্বোচ শাস্তি দাবি করেন। কিন্তু এই বিচারেও আদালত আবারও আগের রায় বহাল রাখেন।

মেয়ের কবরে নীরবে চোখের জল ফেলেন ফেলাসীর বাবা।

পরে ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) এবং ভারতীয় আইনজীবী অপর্ণা ভাট এর সহাতায় ফেলানী হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন তার বাবা নুরুল ইসলাম। এরপর ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি ভারতের সুপ্রিমকোর্টে করা দুটি রিটের শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। শুনানীর পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হলফনামা দাখিলের জন্য ৩ সপ্তাহের সময় দেয় আদালত।

বিচারের এমন ধীরগতি আর ভারত সরকারের অবহেলায় হতাশ ফেলানীর পরিবার ও স্থানীয়রা। এখনও ন্যায় বিচারের আশায় দিন গুনছেন তারা।

ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়ে হত্যার ১০ বছর পেরিয়ে গেলো অথচ কোনো বিচার পেলাম না। আজ যদি আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার বিচার সঠিকভাবে হতো উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হতো তাহলে সীমান্তে আর হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতো না।’
একই দাবি করেন ফেলানীর মা জাহানারা বেগম এবং তার অন্যান্য ভাইবোনসহ স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘ভারতের বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে ভারত সরকারের উচিত দ্রুত এই মামলার রায় দেয়া।’