অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

স্বাধীন দেশের প্রথম বাণিজ্য মন্ত্রী এম আর সিদ্দিকীর ২৯তম মৃত্যু বার্ষিকী কাল

0
.

স্বাধীন-বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্য মন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও শিল্পপতি লায়ন মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকীর (এম আর সিদ্দিকী) ২৯ তম মৃত্যু বার্ষিকী আগামীকাল শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারী)।

এ উপলক্ষে মরহুমের পারিবারিক আয়োজনে কোরআন খতম, মিলাদ মাহফিলসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ড সমিতি চট্টগ্রাম এর উদ্যোগে মরহুমের কবরে পুষ্পস্তক অর্পণ দোয়া কামনা করা হবে।

মরহুম এম আর সিদ্দিকী ১৯২৫ সালের ১ মার্চ সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণ-রহমতনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ হোসেন।

এম.আর সিদ্দিকী ১৯৫৫ সালে জেমস ফিনলে পি.এল.সি-এর মুখ্য হিসাব কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৯ সালে তিনি ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির (বর্তমানে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের শাখা) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তান ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি এ.কে খান জুট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে ন্যাশনাল মটরস লিমিটেড, ক্রিসেন্ট মটরস লিমিটেড, ১৯৬৮ সালে থেরাপিউটিক্স (বাংলাদেশ) লিমিটেড এবং ১৯৬৯ সালে এস.কে.এম জুট মিলস লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে তিনি সিডকো লিমিটেড এবং ১৯৮৫ সালে সিডকো (গার্মেন্টস বিভাগ) লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের (বর্তমানে পূবালী ব্যাংক) স্পন্সর পরিচালক এবং আল বারাকা ব্যাংক বাংলাদেশের (অধুনা বিলুপ্ত, বর্তমানে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড) ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।

এম.আর সিদ্দিকী ১৯৬২ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ১৯৬৪-১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে তিনি চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম জেলা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ছিলেন। চট্টগ্রামের প্রতিরোধ যুদ্ধে তিনি সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে তাঁকে পূর্বাঞ্চলীয় জোনাল কম্যান্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। বিদেশে প্রবাসী সরকারের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি জুলাই মাসে আমেরিকা সফর করেন।

১৯৭২ সালে এম.আর সিদ্দিকী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য ও বৈদেশিক ব্যবসা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে ১৯৭৩ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স এবং পশ্চিম জার্মানি সফর করেন। এ সময় তিনি কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে এ সকল দেশের সমর্থন ও সহায়তা অর্জনে সফল হন। ১৯৭৫ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৮০ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

এম.আর সিদ্দিকী ১৯৫৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান লায়ন্স আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৬০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম জেলা আক্রান্ত হলে তিনি উদ্ধার তৎপরতা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে তৎপর হন। এ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব ১৯৬২ সালে তাঁকে The Lion Humanitarian Award পদকে ভূষিত করে। তিনি ১৯৬২-৬৩ এবং ১৯৬৩-৬৪ সালে প্রাদেশিক লায়ন্স জেলা ৩১৫-এর জেলা গভর্নর এবং ১৯৭২-৭৩ ও ১৯৭৩-৭৪ সালে বাংলাদেশ লায়ন্স জেলা ৩১৫-এর জেলা গভর্নর নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল এবং ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তিনি বাংলাদেশ লায়ন্স ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৮৩ সালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠা করেন লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল।

এছাড়া তিনি OISCA (Bangladesh Chapter)-এর সভাপতি, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি (১৯৮৪), বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের আহবায়ক (১৯৮৫), মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি (১৯৮৫ ও ১৯৮৬), UCEP বাংলাদেশের চেয়্যারম্যান (১৯৮৮) এবং বাংলাদেশ-জাপান ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। তিনি সীতাকুন্ডের কুমিরায় লতিফা সিদ্দিকী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৩) এবং লতিফা সিদ্দিকী ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৫) প্রতিষ্ঠা করেন।