অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সফিকুল হক চৌধুরী আর নেই

0
.

না ফেরার দেশে চলে গেলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, ‘আশা’র প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ও চেয়ারম্যান সফিকুল হক চৌধুরী। গতরাত ১টায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)।

সফিকুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী ফারজানা ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আজ বাদ জুমা শ্যামলীর শিশুপল্লীতে জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার মরদেহ সমাহিত করা হয়।

উল্লেখ্য, আশা’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট মো. সফিকুল হক চৌধুরী ১৯৪৯ সালে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার নরপতি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে বি. এ (সম্মান) সহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বিসিএস ১৯৭৩ ব্যাচের প্রবেশনারী কর্মকর্তা হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়েও চাকরিতে যোগদান না করে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায় ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে আত্মনিয়োগ করেন এবং দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ উন্নয়ন কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। সফিকুল হক চৌধুরী ১৯৭৮ সালে আশা প্রতিষ্ঠা করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আশা একটি বেসরকারি সংস্থা। পুরো নাম অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট। আশা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সমাজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে উৎসাহ যোগায় এবং এ লক্ষ্যে তাদের সংগঠিত করে।

১৯৭৮-১৯৮৫ সালে আশা দরিদ্র মানুষের জন্য বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড সম্পাদন করে, আইনি সহায়তা প্রদান করে ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করে, সাংবাদিক প্রশিক্ষণের আয়োজন করে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করে। ১৯৮৫-১৯৯১ সালে সংস্থাটি শিক্ষা, ঋণদান, ক্ষুদ্র কৃষি, নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে। বর্তমানে আশা ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের দরিদ্র নারীদের উন্নয়নে কাজ করে।
এছাড়া আশা সদস্যদের সঞ্চয়, ক্ষুদ্র ইন্সিওরেন্স ও চিকিৎসা অনুদান কার্যক্রম পরিচালনা করে।

আশা’র ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের উৎস হচ্ছে সংস্থার নিজস্ব অর্থ, সদস্যদের সঞ্চয় এবং পল্লী কর্মসংস্থান ফাউন্ডেশনের ঋণ। বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় আশা’র ব্রাঞ্চ অফিস ৩২৩৬টি, কর্মী ২৪ হাজার এবং সদস্যসংখ্যা ৫৫ লাখ। আশা ২০০৯ সালে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটে একটি প্রবীণ নিবাস প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সর্বস্তরের মানুষকে চিকিৎসা সেবা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও রেমিট্যান্স সেবা প্রদান করার জন্য একটি কমপ্লেক্স গড়ে তুলেছে।
আশা ২০০৭ সালে বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও বাস্তবায়নে ‘আশা ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে। ‘আশা ইন্টারন্যাশনাল’ মরিশাসে রেজিস্ট্রিকৃত।

সিএমআই নামে নেদারল্যান্ডভিত্তিক ইক্যুইটি সংস্থা আশা ইন্টারন্যাশনালকে তহবিল সরবরাহ করছে। বর্তমানে আশা ইন্টারন্যাশনাল ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, ঘানা ও কম্বোডিয়ায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আশা ২০০৭ সালে দরিদ্র ও নিম্নআয়ের পরিবারের ছেলেমেয়েদের স্বল্পখরচে উচ্চশিক্ষার সুযোগদানের জন্য আশা ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে চার হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী আশা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করছে।