অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

২২ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক ও নয়নাভিরাম রূপ পাচ্ছে ‘বুড়া মসজিদ’

0
.

বোয়ালখালী উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বুড়ো মসজিদকে আধুনিক নয়নাভিরাম রূপ দিতে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদের নকশা ও নির্মাণ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

১ লক্ষাধিক বর্গফুটের জায়গায় ওপর প্রস্তাবিত মসজিদের চারতলা বিশিষ্টি নকশায় মসজিদের সঙ্গে থাকছে ১৩০ ফুট উচ্চতার মিনার, সুপ্রশস্ত প্রবেশদ্বার, ঈদগাহ, কবরস্থান, এতিমখানা, মাদরাসা সংবলিত একাডেমিক ভবন, বৃহৎ পরিসরের মহিলা-পুরুষ ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য পৃথক অজুখানা, এবাদতখানা, রান্নাঘর, ডাইনিং হল ও পার্কিং।

শ্রীপুর খরনদ্বীপ ইউনিয়নে অবস্থিত বিখ্যাত ‘বুড়া মসজিদ’ কখন এ মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার নির্দিষ্ট সন তারিখ কারো জানা নেই। তবে ৩০০ বছর পূর্বে মোঘল আমলের শেষ দিকে এটি নির্মিত হয় বলে অনেকেরই ধারণা। অবশ্য তখনকার মসজিদের ভিত্তি ছিল ভিন্ন রকম। কুঁড়ে ঘরে গায়েবী আজান পড়ত নিয়মিত, এমন জনশ্রুতি রয়েছে এলাকায়।

চট্টগ্রামের তৎকালিন প্রশাসক থানাদার ওয়াসিন চৌধুরী এ মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বলে জানা গেছে। তাঁর দাদা শেখ নাছির উদ্দিন তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের গৌড় এলাকা থেকে এ এলাকায় দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে আগমন করেন। পাঞ্জাগানা নামায আদায়ের সুবিধার্থে এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। এ মসজিদের নামকরণ সম্পর্কে

জানা যায়, ওয়াসিন চৌধুরীর পিতা একজন ইবাদত গুজার ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ইবাদত বন্দেগীতে এতই মশগুল থাকতেন যে, পারিপাশ্বিক অবস্থার কোন খবর রাখতেন না। তিনি বুড়ো বয়সে ঐ মসজিদে নামাজ যিকির আজকারে দিন রাত কাটিয়ে দিতেন। এভাবেই দিনের পর দিন কেটে যেত আধ্যাত্মিক সাধনায়। তিনি এতই পরহেজগার ছিলেন যে, তাকে সবাই বুড়া হুজুর নামে ডাকত। ইবাদত করতে করতে তিনি একদিন এই মসজিদ থেকে হারিয়ে যান।

পরবর্তীতে তাঁর কোন সন্ধান কেউ পাননি বলে কথিত আছে। তাই তাঁর নামানুসারে এটি ‘বুড়া মসজিদ’ নামে প্রসিদ্ধ লাভ করেন। ১৮৮৬ সালে ভূমিকম্পের কারণে বেড়া ও ছনের ছাউনি ঘর ভেঙে যায়। ভাঙা অবস্থায়ও জোড়াতালি দিয়ে আরও ২০-২৫ বছর চলে। পরে স্থানীয়রা মাটির দেয়াল তুলে পুনর্নির্মাণ করেন। এভাবে ৪-৫ বার নির্মাণ করা হয়।

প্রায় ১০০ বছর পূর্বে মসজিদের কিয়দংশ পাকাকরণ করা হয়। ১৯৪০ সালে মসজিদের পুরনো ভিত্তি ভেঙে নতুন করে ছাদ জমিয়ে পাকাকরণ করা হয়। ইমারতটি এখনো মসজিদের মধ্যখানে বহমান আছে। ১৯৭৪ সালে ৫০০-৬০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা করে মসজিদ সংস্কার-সম্প্রসারণ করা হয়। ১৯৭৫ সালে মসজিদের পাকা ভবনের গেট নির্মিত হয়। ১৯৮৬ সালের দিকে দ্বিতীয় তলায় উন্নীত করা হয়।

নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান তারুণ্য ডিজাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, এতে একসঙ্গে তিন হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নয়নাভিরাম রূপ পাবে তিন শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শ্রীপুর ‘বুড়া মসজিদ’। ইতিমধ্যে প্রাথমিক পরিকল্পনা শেষ হয়েছে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি টাকা।

তিনি আরো বলেন,মসজিদের পুকুরেও নান্দনিকতার ছোঁয়া পাবে। অজুখানা ও পুকুরপাড় মিলে একসঙ্গে অজু করতে পারবেন ১৬০ জন। ওয়ারিশানদের পক্ষে মো. নুরুন্নবী চৌধুরী বলেন, বর্তমানে মসজিদের অফিসিয়াল মোতাওয়াল্লী

বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছিয়া খাতুন, স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. মোকারমসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মসজিদের উন্নয়নে মেঘা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এতিমখানা, মহিলাদের জন্য আলাদা এবাদতখানা ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী পূর্ণার্থীদের জন্য প্রার্থনা কক্ষ নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম রয়েছে এ প্রকল্পে।

মসজিদের মোতাওয়াল্লি ও বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছিয়া খাতুন বলেন, ৩০০ বছরের পুরনো এ মসজিদটি এখন অনেকটা জরাজীর্ণ। অবকাঠামো অনেক পুরনো। মসজিদটিকে আধুনিকরনের লক্ষে স্থাপত্যশৈলীর মাধ্যমে মসজিদটি নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে নকশাসহ প্রাথমিক কাজ। ঐতিহ্য ও প্রাচীন মসজিদকে দৃষ্টিনন্দনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যসবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।