অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চসিক নির্বাচন বাতিল চেয়ে সিইসি, মেয়র ও সচিবের বিরুদ্ধে ডা. শাহাদাতের মামলা

0
.

চট্টগ্রাম কর্পোরেশন নির্বাচন বাতিল করে নতুন তফশীল ঘোষণার মাধ্যমে পুণঃনির্বাচন দাবী করে সিইসি, নির্বাচন কমিশন সচিব, মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ ৯ জনকে বিবাদী করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন চসিক নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন।  মামলায় তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছে।

আজ বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে চট্টগ্রামের প্রথম জেলা যুগ্ম জজ খাইরুল আমিনের আদালতেএ মামলা করেন।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ও ডা. শাহাদাত হোসেনের আইনজীবি দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি পাঠক ডট নিউজকে নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বিবাদীদের প্রতি সমন জারীর জন্য আগামী ২১ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করেছেন। মামলা নং ২-২৪/০২/২০২১।

.

মামলায় সিইসি, সচিব ও চসিক মেয়র ছাড়াও অন্য যাদের বিবাদী করা হয়েছে তারা হলেন- চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং রিটার্নিং অফিসার, মেয়র প্রার্থী আবুল মঞ্জুর, এম এ মতিন, খোকন চৌধুরী, মোহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ ও জান্নাতুল ইসলাম।

অভিযোগ দায়েরের পর ডা. শাহাদাত উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, চসিক নির্বাচনে মোট ৪৮৮৫টি কেন্দ্রে ইভিএমএ ভোট গ্রহণ করা হলেও মাত্র ২০টি কেন্দ্রে মেশিনে প্রিন্টেড ফলাফল দিয়েছে। বাকি ৪৬৬৫টি কেন্দ্রের হাতে লেখা ফলাফল প্রকাশ করেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে সবগুলো কেন্দ্রের প্রিন্টেড ফলাফলের লিখিত আবেদন জানালেও তারা তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ২২টি কেন্দ্রে আমাকে শূন্য ভোট এবং ১৭৮টি কেন্দ্রে ১০টির কম ভোট দেখিয়েছে যা সম্পূর্ণ অবাস্তব ও ভোট জালিয়াতি জ্বলন্ত নমুনা। এসবের প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। এছাড়াও নির্বাচনের পর প্রথমে আমাদের যে ফলাফলের তালিকা দিয়েছিল তাতে আমার শূন্য ভোট ছিল মাত্র দুই কেন্দ্রে, কিন্তু ফাইনাল তালিকায় শূণ্য ভোট দেখানো হয়েছে ২২টি কেন্দ্রে। এর কারণ কি? এর থেকে তো বুঝতে হবে তারা ভোট ডাকাতি করলেও সেটা সেটা সুক্ষভাবে করতে জানেনি।

তিনি বলেন, চসিক নির্বাচনে ভোটের দিন দুপুর ২টা পর্যন্ত ৪-৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু দিন শেষে সাড়ে ২২ শতাংশ ভোট দেখানো হয়েছে। নির্বাচনের দিন প্রতি ঘণ্টার ভোটের হিসাব দেখতে চেয়েছিলাম। ৭ দিন সময়ও দিয়েছি। কিন্তু এই তথ্য কমিশন দিতে পারেনি। নির্বাচনে ৪ হাজার ৮৮৫টি ইভিএম ব্যবহার করা হয়। সেখানে মাত্র ১০টি বুথে ইভিএম’র প্রিন্টেড কপি দেওয়া হয়েছে। যদি ১০টি বুথের ইভিএম’র প্রিন্টেড কপি থাকে তাহলে সবগুলো ইভিএম’র প্রিন্টেড কপি থাকার কথা। কিন্তু তারা এটা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। ভোট কারচুপির অভিযোগ এবং বির্তকিত নির্বাচন বাতিল করে নতুন তফশীল ঘোষণা মাধ্যমে নিরপেক্ষভাবে পুণ:নির্বাচনের দাবীতে ৯ জনকে বিবাদী করে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।

.

ডা. শাহাদাত বলেন, বহুল বিতর্কিত ইভিএমে ভোটাভুটি হয়েছে। ভোটের ফলাফল পেতে সেই সনাতন পদ্ধতির চেয়েও বেশি সময় কেন লাগল তা এক বড় রহস্য। ইভিএম পদ্ধতি হওয়ার পরও কেন একটি শহরের ভোটের ফলাফল ঘোষণা করতে ১০ ঘণ্টা লাগবে? এলাকা ভেদে ভোটের ব্যবধান ছিল অস্বাভাবিক। কোন কেন্দ্রে প্রাপ্ত ভোটের হার দেখানো হয়েছে ১% এবং আবার কোন কেন্দ্রে ৯৪%। একই ভবনে ২টি কেন্দ্রে ১টিতে ৮৪% অন্যটিতে ১.৬৬% ভোট দেখানো হয়েছে।

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু ভোটের হিসাবে দেখানো হয়েছে ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ভোট বেশি পেয়েছেন। কিন্তু তাকে আরও সাড়ে তিন লাখ ভোট যোগ করে মেয়র বানানো হয়েছে। মামলায় বলা হয়, মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন চসিক নির্বাচনের ভোটের হিসাব চেয়ে এখনও পাননি। কোনো কেন্দ্র থেকে ইভিএমের প্রিন্ট কপি দেয়া হয়নি। নির্বাচনে তাকে জোর করে হারিয়ে দেয়া হয়েছে।

মামলা দায়েরকালে ডা. শাহাদাত হোসেনের সাথে আদালতে উপস্থিত ছিলেন- চট্টগ্রাম বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলার আহবায়ক আবু সুফিয়ান, জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এ.এস.এম বদরুল আনোয়ার, বর্তমান সভাপতি এডভোকেট এনামুল হক এনাম, এডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, এডভোকেট মাহমুদুল আলম চৌধুরী মারুফ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য গাজী সিরাজ উল্লাহ, মো. ইদ্রিস আলীসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবি।

উল্লেখ্য হানাহানি সংর্ঘষের ও ভোট জালিয়াতির অভিযোগের মধ্য দিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৮৪ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী।