অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

দিশেহারা রোহিঙ্গা মুুসলমান সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকা চায়

0
ansari-08-01-16-1
মাহমুুদুুল হক আনসারী
hqdefault
.

গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারের মুসলমানদের ওপর জান্তা সরকার নির্যাতন চালালেও গত মার্চ মাসে ‘গণতান্ত্রিক’ সরকার নির্বাচিত হওয়ায় তারা এই নির্যাতন থেকে মুক্তি পাবেন বলে আশা করেছিল। কিন্তু তাদের ওপর চলমান নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন আরো বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত ৯ অক্টোবর সীমান্তের তিনটি নিরাপত্তা চৌকিতে সংঘবদ্ধ হামলায় দেশটির ৯ পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর কারণ দেখিয়ে নির্যাতন আরো বেড়ে যায়। অভিযোগ করছে ওই হামলার পেছনে মুসলমানদের হাত রয়েছে।

গত কয়েকদিনে মুসলমান অধু্ষ্যিত এলাকায় বিশেষ করে রাখাইন পল্লি গুলোতে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ নাম দিয়ে মূলত মুসলমান নর-নারীদের নির্বিচারে হত্যা করে যাচ্ছে। শত শত বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, দেশটির সেনাবাহিনী হেলিকপ্টারে করে গান শিপ দিয়ে গুলিও নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে নাফ নদীতে ফেলে দিচ্ছে। নদীতে শত শত মুসলিম নর নারীর লাশ ভাসছে। ইতিমধ্যে শত শত মুুসলিম নর নারী নির্র্মমভাবে হত্যা করার সংবাদ বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। অসংখ্য নারীকে দলবদ্ধভাবে সম্ভ্রমহানির সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। দিন দিন পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। জীবন বাচাঁতে অনেকেই বাংলাদেশে ঢুকার চেষ্টা করলেও তাদের প্রতিরোধ করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশের টেকনাফ শরণার্থী শিবিরে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা তরুণ মোহাম্মদ তৌহিদ এ এফপিকে ফোনে জানান ওই দেশের সেনাবাহিনীর তার সামনে তার বোনকে গুলি করে হত্যা করেছে, কোন প্র্রকারে আমি পালিয়ে সেখান থেকে জীবন বাঁচাই। আমার মাকে ঘরে রেখে এসেছি বেঁচে আছে কিনা জানিনা। শত শত রোহিঙ্গা মুসলমান জীবন বাচাঁনোর জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছে, ঐ দেশের সেনাবাহিনী মুসলিম নর-নারীদের তাদের ঘর বাড়িতে গিয়ে নির্বিচারে হত্যা করছে।

রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা এবং উচ্ছেদের জন্য ঐ দেশের রাখাইন সম্প্রদায়কে ব্যাবহার করা হচ্ছে। ২০১২ সালে রোহিঙ্গা মুসলমানদের তাদের ঘর বাড়ি থেকে উচ্ছেদের জন্য সামরিকজানতা এবং রাখাইনরা জোটবদ্ধভাবে হত্যা করে যাচ্ছে। হত্যা এবং জীবন বাচাঁনোর জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের নিকট সাহায্য চাইলেও রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভাগ্যে তা জোটেনি। দিন দিন তাদের জীবন এবং সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে তার কোন প্রতিকারে কেউ এগিয়ে আসছেনা।

rohingya-fleeing-by-sea
.

বাংলাদেশে তারা ঢুুকার চেষ্টা করলেও ঢুকতে পারছেনা বরং তারা গ্রেফতার হচ্ছে। পুনরায় তাদেরকে মায়ানমারে পুশ করা হচ্ছে। গোটা পৃথিবী তাদের সাথে নির্মম আচরণ করছে, বাংলাদেশে প্রায় ১৮ কোটি মানুষের বসবাস এখানকার মানুুষ যার যে পেশা আছে তার সাথে যুুদ্ধ করে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজনীয় সুবিধা অসুবিধা দেখবালের দায়িত্ব সরকারের। এখানে সকল ধর্মের ও মতের মানুষদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুুবিধা অব্যাহত রাখতে সরকার আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসস্থান এবং শিক্ষিত যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং বাস্তবায়ন সরকারের বিশাল দায়িত্ব। এর উপর পাশ্ববর্র্তী দেশ মায়ানমারে মুসলমান নর নারী,শিশু যেভাবে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হচ্ছে তাদের নিয়ে বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণ উদ্বিগ্ন না হয়ে পারছেনা।

উদ্বিগ্ন উৎকণ্ঠা সরকারের সাথে জনগণের মাঝেও বিরাজ করছে, একদিকে রোহিঙ্গা মুুসলমানদের জানমালের নিরাপত্তা অন্য দিকে বাংলাদেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা যাচ্ছে। পাশ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র হওয়ার কারণে মায়ানমারের মুুসলমানদের জান মাল রক্ষায় এদেশের মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্বও বটে,ছোট্ট একটি দেশ আমাদের বাংলাদেশ দেশের লাখ লাখ ছিন্নমূল মানুষ ঘর বাড়ি হারিয়ে রাস্তায় ফুতপাতে কারো ঘরের আঙিনায় রাত যাপন করে।

এদেশের সরকার অনেক কর্মসূচী গ্রহণ করেও ঐ ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসনে কার্যকর কোন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়নি। বিশাল এ সমস্যা বাংলাদেশের ছিন্নমূল দরিদ্র মানুষের সামনে, এর পর রোহিঙ্গা মুসলমানদের এদেশে প্রবেশ আশ্রয় পুনর্বাসন খাদ্য নিরাপত্তা বাসস্থান চিকিৎসার জন্য সরকারের ওপর বাড়তি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে তৈরি হল। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য এবং সহযোগিতা বাংলাদেশ সরকার পেয়ে থাকলে রোহিঙ্গা সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে,রোহিঙ্গাদের এ দেশে সাময়িকভাবে আশ্রয় দেয়া যেতে পারে তবে তাদের জন্য মঙ্গল হবে তাদের নিজ দেশে তাদেরকে নিরাপদভাবে স্বাধীনভাবে নাগরিক সুুযোগ সুবিধা প্রদান করে বসবাসের ব্যবস্থা করে দেয়া।

হাজার হাজার নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিক সম্মান নিয়ে বসবাস করার সুুযোগ দানে মায়ানমারে সামরিক জানতা সরকারকে কঠোরভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে জাতিসংঘের মাধ্যমে। এটা করতে যদি আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ বিলম্ব করে তাহলে এ সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা আশে পাশের দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সময় থাকতেই আন্তর্জাতিক মহলকে এ সমস্যা সমাধানে কঠোর উদ্যোগ ও সমাধানে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

লেখক: সংগঠক, গবেষক, কলামিষ্ট
Email: mh.hoqueansari@gmail.com