অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

কারাবন্দি আসলাম চৌধুরীর মেয়ে মেহরীন আনহা’র স্ট্যাটাস ভাইরাল

0
.

সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, নাশকতা সৃষ্টির ইন্দন, রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ খেলাপির দায়ে অসংখ্য মামলায় গত ৬ বছর ধরে কারাগারে বন্দি জীবন যাপন করছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রামের আলোচিত বিএনপি নেতা লায়ন আসলাম চৌধুরী।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেফতার হন। এর পর থেকে একটির পর একটি মামলায় জামিন হলেও মুক্তি পান নি তিনি। একটি মামলায় জামিন হলে নতুন করে অরেক মামলায় গ্রেফতার করা হয়। এভাবেই বন্দি জিবন চলছে চট্টগ্রামেই এই নেতার।

এর আগে ১৪৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে রাইজিং এগ্রো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রাইজিং স্টিল মিলস লিমিটেডের জামিনদার বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মো. মোশারফ হোসেইন মৃধা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এসব মামলা সহ অনন্ত অর্ধশতাধিক মামলা চলছে তার নামে।

সকল মামলায় জামিন হলেও মুক্তি মেরেনি আসলাম চৌধুরীর। আদালত থেকে কয়েকবার জামিনে মুক্তি পেলেও আবার জেলগেটে অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাবন্দি করা হয় তাকে। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে নেতাকর্মী ও পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন সীতাকুণ্ড আসনের জনপ্রিয় এ নেতা।

এর মধ্যে আজ বুধবার তার একমাত্র মেয়ে মেহরীন আনহার উজমা বাবা আসলাম চৌধুরীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। উজমার শেয়ার করা সে স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়।

.

কারাবন্দি বাবাকে নিয়ে মেহরীন আনহার উজমার সেই আবেগঘন স্ট্যাটাসটি হুবহু পাঠক ডট নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:

আমার বাবা আসলাম চৌধুরী-
“আমি প্রশান্ত মহাসাগরের নীল জলরাশি দেখিনি,
কখনো মাপতে যাইনি এর গভীরতাও,
কিন্তু দেখেছি আমার বাবাকে
যার হৃদয় এতটাই গভীর যে
তার অবুঝ সন্তান এই গভীরতায়
যেভাবে ইচ্ছে বিচরণ করতে পারি
সামুদ্রিক প্রাণীকুলের মতো”।
হ্যাঁ, আমি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেশী নিগৃহীত রাজনৈতিক দল বিএনপি নেতা ৫ বছর ধরে মিথ্যা অভিযোগে কারান্তরিত এবং নির্যাতিত মোঃ আসলাম চৌধুরীর একমাত্র সন্তান। সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে তিনি আজ আমার ছোট ৩ জনের পরিবার এবং বাবার বৃহৎ পরিবার বিএনপি থেকে ৫ বছর ধরেই বিচ্ছিন্ন। অথচ নিজের কেরিয়ারে সম্পূর্ণ সফল। আমার বাবা আর্থিক কারণে নয়; কেবলমাত্র নিজ এলাকা সিতাকুণ্ডের জনসাধারণের কল্যাণার্থে এবং বিএনপির প্রতি ভালবাসার কারণেই রাজনীতিতে আসা তাঁর। বাবা একজন চাটার্ড একাউন্টেন্ট, চাকরি জীবনের শুরুতে বিসিএস কর্মকর্তাও ছিলেন। ব্যবসায়িক জীবনেও সফল ছিলেন আমার বাবা। পরবর্তীতে তিনি লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্হিতিতে আমার বাবার সমস্ত ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক অর্জন, সেই সাথে আমার পরিবার ধ্বংসপ্রায়। ২০১২ সাল থেকে আমার বাবাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হতে হয়। এরপর ২০১৬ সালে আমার দেশপ্রেমিক বাবাকে সম্পূর্ণ বানোয়াট মামলায় গ্রেফতার করা হয়, যার কোন বিন্দু পরিমাণ সত্যতা নেই। বাবা নিজেও অনবরত কারাবন্দিত্বে শারীরিক এবং মানসিক নাজেহাল হয়ে অসুস্থ প্রায়। বাবার অনুপস্থিতিতে তাঁর অর্জিত ব্যবসা বাণিজ্যও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। এছাড়াও আমার মাকেও হতে হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে নাজেহাল। বাবার অবর্তমানে মা আর আমি শুধু অন্ধকারই দেখছি চারিদিকে। এতকিছুর পরেও আমার সাহসী বাবা পথভ্রষ্ট হননি, অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি। যে রাজনীতি সারাজীবনের অর্জিত জীবনকে ধ্বংস করে, পরিবারের সদস্যদের শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতির কারণ হয়; কি দরকার সেই রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার? আপানারা যারা আজ মিথ্যা অভিযোগে, অযৌক্তিক কারণে বাবাকে গত ৫ বছর ধরে কারান্তরীন রেখেছেন, যার ফলে প্রতিনিয়ত আমি হচ্ছি বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত, আপনাদেরও কি পরিবার নেই, সেই যন্ত্রণা কি আপনাদের অনুভবে আসে না? প্রসংগত আমি বাবা মা’র একমাত্র সন্তান। ২০১৬ সালে বাবার গ্রেফতারের পরের দিন আমার ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা ছিলো। কি মানসিক কষ্ট নিয়ে আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলাম তা শুধু আমি উপলব্ধি করতে পারি। সেই ২০১২ সাল থেকে বাবা আমাদের কাছ থেকে দূরে। কেউ কি একবারের জন্যও ভেবে দেখেছেন পরিবারের এই ছোট্ট মেয়েটির কথা? আমার দিকে তাকিয়ে মা নীরবে কাঁদে। আমাকে দেওয়ার মতো সান্তনা হয়তো মা’র ঝুলিতে ফুরিয়ে গেছে। আজ যারা আজ নির্যাতনের ছড়ি ঘুরাচ্ছেন, মনে রাখবেন নিঃসন্দেহে সবার উপরে একজন তো আছেনই; তিনি তো উত্তম বিচার কর্তা। ইনশাআল্লাহ আমি তাঁর উপর পূর্ণ আস্থা রেখে আজ আমার বাবা এবং পরিবারের নির্যাতনের ভার সেই মহানের উপরই অর্পণ করছি। তিনিই অবশ্যই এর বিচার করবেন। সকল নির্যাতনের অবসান হোক। সহসা বাবা মুক্তি পাক। আর কোন মিথ্যা মামলা নয়। আমি চাই আমাদের তিনজনের ছোট পরিবারটি আবার এক হোক। বাবা তুমি ফিরে এসো, আমি আর মা প্রতিমূহুর্তেই তোমার অপেক্ষায়।
একমাত্র সন্তানের আকুতি
মেহরীন আনহার উজমা।