অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

শফি হত্যা মামলা: পিবিআইয়ের প্রতিবেদন পুনরায় তদন্তের দাবি বাবুনগরীর

0
.

হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যু নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া প্রতিবেদন পুনরায় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এই দাবি জানান।

গতকাল সোমবার আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে জুনায়েদ বাবুনগরীসহ হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাসহ ৪৩ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর শফীর শ্যালক মো. মঈন উদ্দীন বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা করেছিলেন। বাবুনগরী দাবি করেন, আহমদ শফীর মৃত্যু ছিল স্বাভাবিক।

বিবৃতিতে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যু নিয়ে পিবিআই যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাস্তবতা বিবর্জিত। আমরা মনে করি, এই প্রতিবেদন একটি চিহ্নিত চক্রের শেখানো বুলি। আমরা আমাদের আইনজীবীদের মাধ্যমে আদালতে এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি পেশ করব। এই মিথ্যা রিপোর্টের ভিত্তিতে যাদের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, তা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’

ঘটনাস্থলে ছিলেন না উল্লেখ করে জুনায়েদ বাবুনগরী বিবৃতিতে বলেন, তিনিসহ আরও ১২ জনকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এর কোনো বাস্তবতা নেই। চট্টগ্রাম মেডিকেলের ছাড়পত্র ও ঢাকা আসগর আলী হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটসহ নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণের আলোকে দেশ-বিদেশের সবার কাছে প্রমাণিত হয়েছে, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু আল্লাহ তায়ালার হুকুমে স্বাভাবিক ছিল। তিনি অনেক দিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। রোগ বেড়ে যাওয়ায় একাধিকবার তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সর্বশেষ আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি মহান রবের ডাকে সাড়া দেন।

বিবৃতিতে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর তাঁর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ ব্যাখ্যামূলক বিবৃতির মাধ্যমে বাস্তব সত্য মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেছিলেন। তাঁর বাবার মৃত্যু স্বাভাবিক হয়েছিল বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন। এরপরও আল্লামা আহমদ শফী মৃত্যুর প্রায় দুই মাস পর দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের নামে মামলা দায়ের হওয়াতেই বোঝা যায় এই মামলা কতটা হাস্যকর ও ভিত্তিহীন।

বিবৃতিতে পুনরায় নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান হেফাজতের আমির। পিবিআই সূত্র জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনে ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। নরহত্যার দায়ে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে জুনায়েদ বাবুনগরী ছাড়াও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস, সহকারী মহাসচিব হাবিব উল্লাহ, হেফাজত নেতা নাছির উদ্দিন, আহসান উল্লাহ, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, আবদুল মতিন, শহীদুল্লাহ, রিজুয়ান আরমান, জাফর আহমদ, এনামুল হাসান ফারুকী, আনোয়ার শাহ, শফিউল আলমসহ ৪৩ জন রয়েছেন।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী মারা যান। শফীর ছেলে আনাসকে চট্টগ্রামের দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক পদ থেকে অব্যাহতিসহ ছয় দফা দাবিতে ১৬ সেপ্টেম্বর জোহরের নামাজের পর থেকে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্ররা। তারা মাদ্রাসার সব কটি ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। আনাসসহ কয়েকজন শিক্ষকের কক্ষে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহীকে মাদ্রাসার ভেতরে পেয়ে মারধর করে ছাত্ররা।

ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে মাদ্রাসাটির মহাপরিচালকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে সরে দাঁড়ান আহমদ শফী। একই সঙ্গে তাঁর ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় শুরা কমিটি। দাবি মেনে নেওয়ায় ওই দিন রাতে ছাত্ররা আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করে।

গত ১৫ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে হেফাজতের নতুন আমির নির্বাচিত হন জুনায়েদ বাবুনগরী। এর আগে তিনি সংগঠনটির মহাসচিব ছিলেন। ১৫১ সদস্যের কমিটিতে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীসহ তাঁর অনুসারীদের কাউকে রাখা হয়নি।