অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

জিয়াউর রহমান দেশের অভ্যন্তরে থেকে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন: আমীর খসরু

0
.

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, শহীদ জিয়া চট্টগ্রামে পাকহানাদার বাহিনী বিরুদ্ধে প্রথমে বিদ্রোহ করেছেন। পরে তিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে তিনি দেশের অভ্যন্তরে থেকে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। আওয়ামী লীগ বর্তমানে যে ইতিহাস রচনা করেছে সেটা ক্ষমতার ইতিহাস। এটা বিভ্রান্তিকর ইতিহাস। ক্ষমতায় থেকে যারা ইতিহাস রচনা করে সেটা হয় প্রোপাগান্ডা। তারা ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর সত্যিকারের ইতিহাস রচনা হয়। রাজনীতিবিদরা ইতিহাসবিদ হয়ে গেছে এখন, তথাকথিত এসব ইতিহাসবিদের ইতিহাস আগামী দিনে থাকবে না। ইতিহাসবিদরাই সত্যিকারের ইতিহাস রচনা করতে পারেন। তাই আমি মনে করি যারা ইতিহাসবিদ তারাই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সত্যিকারের ইতিহাস পৌঁছে দেবেন। ইতিহাস বিকৃতকারীদের এদেশের আপমর জনগণ চিনে নিয়েছে। তাই ইতিহাসকে বিকৃত করে জনসম্মুখে নিজেদের আসল রূপের বহিঃপ্রকাশ করছেন আওয়ামী লীগ।

তিনি আজ মঙ্গলবার (১জুন) বিকালে নগরীর নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪০ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, একটি পক্ষ বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ফলাও করে প্রচার করে জিয়াউর রহমান আর্মি থেকে ক্ষমতা দখল করেছেন। কিন্তু তারা এর মাধ্যমে ইতিহাস বিকৃত করে আসছে। জিয়াউর রহমান মার্র্শাল ল’র মাধ্যমে বা কোনো ক্যু’র মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেননি। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর যখন দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় তখন সারাদেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়। যেমনটি ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থাকাকালে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করেছেন। ঠিক একই পেক্ষাপট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পরে তিনি ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন, তখন এ দায়িত্ব দেওয়ার কেউ ছিল না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তিনি সে সময় সেনাবাহিনীতে ছিলেন না, সে সময় সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন আরেকজন। তখন আর্মির প্রধান যিনি তিনি আওয়ামী লীগ নেতারা যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন তাতে তার যোগসাজশ ছিল, কিন্তু ব্যর্থ হওয়ার কারণে সেটা আর ঠিকেনি। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেনি।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। দেশের সীমানার মধ্যে ৪৭ টি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী বসবাস করে। তাদের নিজস্ব ভাষা ও বর্ণমালা আছে। দেশের সীমানার মধ্যে যারা বসবাস করে তারা সবাই বাংলাদেশী। সেই জন্য সবাইকে সমান সুযোগ করে দিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রচলন করেছিলেন। দেশে আজকে মানুষের ভোটাধিকার ও কথা বলার অধিকার নাই। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নাই। আজকে একটা অনির্বাচিত অবৈধ সরকার দেশ শাসন করছে। আজকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার অবস্থা নাই। যারা অনির্বাচিত তারা দুর্নীতিবাজ হয়, তারা জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়। তাই সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে মুক্ত করতে হবে।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক বীর উত্তম জিয়াউর রহমান শুধু একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন না তিনি ছিলেন রনাঙ্গনের বীর সেনানায়ক। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন বলেই আমরা স্বাধীন একটি রাষ্ট্র পেয়েছি। জিয়াউর রহমান শুধু একজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন না, একজন দার্শনিকও ছিলেন তিনি। তিনি আমাদের একটা ঠিকানা দিয়েছেন। বাংলাদেশী জাতীয়বাদী একটি আদর্শ দিয়েছেন। আওয়ামীলীগ স্বাধীনতার চেতনাকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। যে আকাঙ্খা নিয়ে স্বাধীন হয়েছে দেশ সে আকাঙ্খা বাস্তবায়ন হয়নি। চলমান যে লড়াই সেটা ক্ষমতার লড়াই নয়, এটা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শের লড়াই। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তাদের গণআন্দোলনের মাধ্যমে বিদায় করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মহাকাব্য। দেশ ও জনতার দূর্যোগকালে তিনি আলোর দিশারী হয়ে এসেছেন। তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার সময়ে গুণীদের কদর করেছেন। তিনি এসব গুণীদের সম্মান জানানোর জন্য একুশে পদক, স্বাধীনতার পদক প্রচলণ করেছেন। আর আওয়ামী লীগ সেই জিয়াউ রহমানের বীর উত্তম পদক কেড়ে নিতে চায়। বেগম খালেদা জিয়া গৃহবন্দি, অসুস্থ। তাকে সরকার বিদেশ যেতে বাঁধা দিচ্ছে। এতে আমাদের নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত প্রস্তুত আছে, চট্টগ্রাম থেকে আন্দোলন শুরু হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যে কারনে এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ দিয়ে, রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, তার সঠিক মর্যাদা পাচ্ছেন না এদেশের মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম এই ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। অথচ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই এদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য তৈরি করেছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে উত্তর জেলা বিএনপি’র আহবায়ক ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে মহান মুক্তিযুদ্ধ একটি কালজয়ী ইতিহাস। আর ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানসহ অসংখ্য মহানায়ক। মুক্তিযুদ্ধকে একটি দল নিজেদের ইতিহাস বলে দাবী করে আসছেন। এই ইতিহাসের সাথে এদেশের গণমানুষের যে ইতিহাস জড়িয়ে আছে, তা স্বীকার করছেন না এই দলটি। দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করে মানুষের কথা বলার মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ হারুন। বক্তব্য রাখেন উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য এম এ হালিম, অধ্যাপক ইউনুস চৌধুরী, নুরুল আমিন, নূর মোহাম্মদ, ইঞ্জি. বেলায়েত হোসেন, কর্নেল আজিম উল্লাহ বাহার, অধ্যাপক জসিম উদ্দীন চৌধুরী, এড. কাশেম চৌধুরী, হুমায়ুন কবির চৌধুরী আনসার, এড. আবু তাহের, লায়ন হেলাল উদ্দীন, কমল কদর, জাহিদুল হক, জামাল হোসেন, উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি হাসান জসিম, সাধারণ সম্পাদক মুরাদ চৌধুরী, মহিলাদল নেত্রী আফরোজা বেগম জলী, মেহেরুন্নেছা নারগিস, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শহীদুল আলম শহীদ, উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মনিরুল আলম জনী প্রমুখ।