অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেফতার তিতাস গ্রাহকদের ১০ কোটি টাকা বিল আত্মসাতকারী ফারুক

0
.

রাজধানীর মিরপুরে তিতাসের দেড় হাজার গ্রাহকের গ্যাস বিলের ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী মো. ওমর ফারুককে (৩২) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

রোববার রাতে সীতাকুণ্ড থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার বিকালে কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে রাজধানীর মিরপুর-২ এর ৬০ ফিট এলাকায় ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স’ নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করে ওমর ফারুক। ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকার প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিলের টাকা সংগ্রহ করা হতো। দুই বছর ধরে ওমর ফারুক গ্রাহকের গ্যাস বিলের ১০ কোটি টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করে।

গত জানুয়ারি মাসে মিরপুর এলাকায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে বকেয়া বিলের জন্য প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রচারণা চালায়। এরপরই ভুক্তভোগীরা প্রতারক ফারুকের বিরুদ্ধে রাস্তায় আন্দোলনে নামে। এ ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। উপায় না দেখে ফারুক ২৩ জানুয়ারি ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স’সহ তিনটি অফিস তালাবদ্ধ করে সহযোগীদের নিয়ে আত্মগোপন করে।

র‌্যাব জানায়, কয়েকজন ভুক্তভোগী ২ ফেব্রুয়ারি মিরপুর মডেল থানায় ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা করে। এর পরপরই র‌্যাব-৪ এর গোয়েন্দা দল মামলার ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং অবস্থান শনাক্ত করে প্রতারক ফারুককে গ্রেফতার করে।

ফারুকের উত্থান: র‌্যাব জানায়, ওমর ফারুকের বাড়ির নোয়াখালী জেলার কবিরহাটে। সে স্থানীয় একটি স্কুল থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পাশ করে ২০১৪ সালে ঢাকায় চলে আসে। এরপর মগবাজার এলাকায় একটি বিকাশের দোকানে চাকরি নেয়। ২০১৫ সালে মিরপুরের আহম্মেদনগর এলাকায় নিজে বিকাশের ব্যবসা শুরু করে। প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫টির অধিক অ্যাকাউন্ট খোলে। ২০১৮ সালে মিরপুর-২ এর ১৩নং ওয়ার্ডের ৬০ ফিট এলাকায় ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স’ নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে সে। এরপর প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে এলাকার গ্রাহকের গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করত।

২০১৮ সাল থেকে তিতাস গ্যাস, ওয়াসা ও ডেসকোর গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল সংগ্রহ করে জমা না দিয়ে বিলের কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।

ফারুকের প্রতারণার কৌশল: বিল সংগ্রহের সময় গ্রাহককে ব্যাংকের সিলসহ সংশ্লিষ্ট বিলের রসিদ সরবরাহ করে ধীরে ধীরে বিশ্বস্ততা অর্জন করে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গ্রাহকের টাকা জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করে। শুধু তাই নয়, সে ‘অটুট বন্ধন’ নামে একটি এমএলএম সমিতি প্রতিষ্ঠা করে সাধারণ জনগণকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখায়। বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করে। তাছাড়া প্রতারণার উদ্দেশ্যে বিকাশ, নগদ এবং অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুরূপ বিল পরিশোধের জন্য ‘নব ক্যাশ’ নামক একটি সেবা চালু করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়।

র‌্যাব বলছে, প্রতারক ফারুক এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ মিরপুর মডেল থানায় আগের দায়ের করা মামলায় হস্তান্তর করা হবে। এই প্রতারণা কাজে অন্য সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ফারুকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলাও প্রক্রিয়াধীন। তিতাসের কেউ তার সহযোগী হিসেবে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখছে র‌্যাব। যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে তিতাস কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত জানাব। ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করলে ভবিষ্যতে ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন বলে তিনি জানান।