অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

“বিএনপি নেতা সামশুল হককে নিয়ে আ’লীগ নেতা হাসান মনসুরের স্মৃতিচারণ”

0
.

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রিয় যুবদল নেতা সামশুল হক মঙ্গলবার সকালে ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর খবরে ফেসবুকে মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।  নিজ দলেন নেতাকর্মী ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কাছে মরহুম সামশুল হক সমান জনপ্রিয় মানুষ ছিলেন তা বুঝা গেল তার মৃত্যুর পর।  বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে শোক প্রকাশ করতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

সামশুল হকের মৃত্যুতে তার স্মৃতিচারণ করে ফেসবুকে বিশাল লেখা লিখে স্ট্যাটাস দিয়েছেন কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তরুণ রাজনীতিবিদ হাসান মনসুর।  সে স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে “সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য” এর রাজপথ কাঁপানো অন্দোলনসহ নানা ঘটনা।

মরহুম সামশুল হককে নিয়ে হাসান মনসুরের সে ফেসবুক ষ্ট্যাটাসটি পাঠক নিউজের পাঠকের উদ্দেশ্যে হুবহু তুলে ধরা হল-

.

“BNP নেতা সামসুল হক ভাই আজ ঢাকার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্লাহি রাজিউন)।এনায়েতবাজার এলাকার বাসিন্দা ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল চট্টগ্রাম মহানগরীর এই নেতার অকাল মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরসাদ বিরোধী গনআন্দোলনে – “সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য” র নেতৃত্বে ছাত্র গনআন্দোলনে তার সাথে পরিচয়। সেই সময় এনায়েত বাজার নিউ মার্কেট, আমতলা চত্বর, রিয়াজউদদীন বাজার ছিল আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার। এসব এলাকার অলিগলিতে তখন প্রতিবাদী ছাত্র জনতা – কারফিউ ভেঙে পুলিশ আর্মির চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে মিছিল করতো, এসময় আমাদের ছাত্রলীগের নেতাদের পাশাপাশি ছাত্রদলের মরহুম মোঃআলী ভাই, সামসু ভাই, শাহেদ বক্স, Yeasin Chowdury Liton রা সহ অনেকেই থাকতো। এলাকার ছেলে হিসেবে “সামসু ভাই” আমাদের কে নিরাপদে রেখে আন্দোলন সংগ্রামে সাথে থাকতেন – অলিগলি ভালো চিনতেন। আমি তখন ১৫ নং বাগমনিরাম ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক, শ্রদ্ধেয় Kazi Shahidul Islam মনু ছিলেন সভাপতি — আর “সামসু ভাই” ছিলেন পাশের ২২ নং এনায়েতবাজার ওয়ার্ড ছাত্রদল বা যুবদল নেতা। আন্দোলনের পর স্বৈরাচারী “এরশাদ শাহীর” পতন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে “সামসু ভাই” তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী র নিরাপত্তা টিমে যোগ দেন, পরবর্তী সময়ে যুবদল চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারন সম্পাদক দায়িত্বও পালন করেন।  রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও সামাজিক অনুষ্ঠান, জানাজায় বেশ কয়েকবার তার সাথে দেখা হলে কথা হতো । খুব ভারী ও মোটা গলা ছিল তার, উচচ আওয়াজে “বোন জামাই” বলে ডাকতেন। একসময় আমার স্ত্রী ছোটকালে এনায়েতবাজার গোয়াল পাড়া এলাকায় তাদের প্রতিবেশী ছিল – সেই রিলেসান টাকে খুব হাইলাইটস করতেন তিনি, আন্তরিকতায় জড়িয়ে ধরে, অতীত স্মৃতি রোমন্থন করতেন। আমাকে প্রতিবার দেখা হলেই কমন একটা কথা বলতেন “মুজিব কোটে” তোমাকে দারুন মানায়, খুব সাবলীল, আন্তরিকতার ছোঁয়া ছিল তার ব্যাবহারে। কোনো সময় চলমান রাজনীতি নিয়ে কথা বলতেন না। একবার ২০০৪ সালে দারুল ফজল মার্কেট আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সভা করে আমরা মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, উপর থেকে নেমে দেখি – আওয়ামী লীগ অফিসের গেইট অবরুদ্ধ করে কলাপসিবল গেইট বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ। আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট Sheikh Iftikher Shimul Chy , মশিউর রহমান রোকন (পাথরঘাটা) , প্রয়াত গৌরাঙ্গ চন্দ্র ঘোষ (এনায়েতবাজার), মরহুম আবদুর রহমান ভাই (আলকরন) সহ আমরা আটকা পরেছিলাম ভিতরে, সামসুল হক ভাই ঐসময় কি এক কাজে তামাকমুণ্ডি লেইন দিয়ে কোনো কাজে যাচ্ছিলেন, আমাকে দেখে – অফিসের পিছনের গেইট দিয়ে কথা বলার ছলে আমাকে সহ অনেককে নিরাপদে চলে যেতে সুযোগ দেন। উদার ও বন্ধুবৎসল ছিলেন, আমাকে খুব পছন্দ করতেন। রাজনৈতিক রেষারেশির সংস্কৃতিতে বর্তমান সময়ে – সামজিক দূরত্ব, পারসোনাল রিলেশনটা সেভাবে রাখা হয় না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মানেই মহাশত্রু হিসেবে আমরা দেখি, একটা ছবি বা আন্তরিকতার সংবাদ পেলেই ফেসবুকে ছেড়ে দেই অপরকে হেয় করতে। আমরা ভিন্ন দল আদর্শ ধারন করতে পারি — কিন্ত একই সমাজে বাস করি, অতীতে সরকার বিরোধী আন্দোলনে কাধেকাধ রেখে মিছিল করেছি, এটা ভুলি কেমনে?  মরহুম সামসুল হক ভাইয়ের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। মহান আল্লাহ তাকে জাননাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমিন।”