অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

যমদূত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্বজিৎ হত্যার সাক্ষী রিপনকে

0
.

যমদূত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে রিপনকে। সাত বছর ধরে এক দিনের জন্যও এই যমদূত রিপনের পিছু ছাড়েনি। আর কত পালিয়ে থাকা যায়! পালিয়ে পালিয়ে রিকশা চালান রিপন। মাঝে মধ্যে বাড়তি টাকার জন্য রাস্তায় এটা-ওটা বিক্রি করেন। আজ এই এলাকা তো কাল অন্য এলাকায় যেতে হয় রিপনকে। কিন্তু কোথাও গিয়ে শান্তি নেই রিপনের। আগে পুলিশের কাছে গিয়ে খানিকটা সহায়তা পেলেও এখন পুলিশ দূরদূর বলে তাড়িয়ে দেয় পুরান ঢাকার আলোচিত বিশ^জিৎ হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী এই রিপনকে।

একটি জীবন বাঁচানোর জন্য কি না করেছেন মো: রিপন সরদার। নিজের জীবন বাজি রেখে রক্তাক্ত বিশ্বজিৎকে রিকশায় তুলে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছেন। চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ায় চিকিৎসকদের সাথে ঝগড়া করেছেন। কিন্তু সেদিন বাঁচেনি বিশ্বজিতের জীবন। হাল ছাড়েননি রিপন। নিজের চোখের সামনে তিনি বিশ্বজিৎকে কোপাতে দেখেছেন। মুমূর্ষু বিশ্বজিৎ যখন পানি পানি করে কাতরাচ্ছিল তখন তিনি পাশের দোকান থেকে পানি এনে খাইয়েছেন। দুর্বৃত্তদের যাতে বিচার হয় সে জন্য আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন এই রিপন।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর। বিএনপি জোট আহূত অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্বজিৎকে। প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কিছু নেতাকর্মী এ ঘটনা ঘটায়। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের একজন সাক্ষী রিকশাচালক রিপন। তার বাড়ি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার মাইজপাড়া গ্রামে। বাবা মোবারক সরদার। একেবারেই অভাবী মানুষ তারা। রিপন ঢাকায় রিকশা চালাতেন। আর তার বড় ভাই ঢাকায় প্রাইভেটকার চালান।

রিপন বলেন, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে খুনিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার পর থেকেই তাকে নানাভাবে হুমকি ধমকি, মারধর ও হয়রানি করা হচ্ছে। একপর্যায়ে তাকে অপহরণেরও চেষ্টা চালানো হয়। ভয়ে এক সময় ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন রিপন। কিন্তু সেখানেও কয়েকবার হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। নড়িয়া থানার তাজুল ও তার সঙ্গীরা কয়েকবার তার বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। পরে সেখান থেকে আবারো তিনি ভয়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং সদরঘাটে কুলিগিরি করে কয়েক মাস কাটিয়ে দেন। তিনি বলেন, আসামি শাকিল, এমদাদ ও টিপুসহ বেশ কয়েকজনের পরিবার তাকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিতে চেয়েছে। কিন্তু তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ৫০ কোটি টাকা দিলেও কোনো কাজ হবে না। তিনি খুনিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবেনই।

এ দিকে সাক্ষী দেয়ার পর থেকেই রিপন প্রাণের ভয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সর্বশেষ রয়েছেন মুগদা এলাকায়। এ এলাকার অলিগলিতে রিকশা চালান। আর যে স্থানে পারেন রাতে ঘুমিয়ে পড়েন। ছেলে ও স্ত্রী থাকেন শরীয়তপুরে। ছেলেটি হাফেজি পড়ছে বলে জানান রিপন। সম্প্রতি মুগদা এলাকাতেও তার পিছু নিয়েছে কিছু দুর্বৃত্ত। টাইগার, চানজাদু, হৃদয়, রাকিব, শান্ত নামে ওই ছেলেগুলো প্রায়ই রিপনের টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়ে যায়। রিপন জানান, রিকশা চালিয়ে যে টাকা উপার্জন করেন, সেই টাকা প্রায়ই ওই ছেলেগুলো কেড়ে নিয়ে যায়। আর সেদিন তাকে না খেয়ে থাকতে হয়। বাড়তি উপার্জনের জন্য মাঝে মধ্যে কিছু জিনিসপত্র ফেরি করে বিক্রি করেন। এর মধ্যে তার তিন প্যাকেট সাবানের গুঁড়া আর চারটি কাঁঠাল কেড়ে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

রিপন জানান, তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আগে তিনি পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত। এখন থানায় গিয়ে বা পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে গিয়েও কোনো নিরাপত্তা পান না। তিনি কয়েকবার সাহায্যের জন্য মুগদা থানায় গিয়েছেন। কিন্তু থানা পুলিশ তাকে সহায়তা করেনি। থানার ওসি তাকে বের করে দিয়েছেন। সম্প্রতি পুলিশের এক কর্মকর্তার কাছেও গিয়েছিলেন সাহায্যের জন্য। কিন্তু কোনো সাহায্য পাননি। এখন তিনি মুগদা থেকে পালিয়ে অন্য কোথাও যাবেন ভাবছেন। তার আশঙ্কা দুর্বৃত্তরা তার মা-ভাই এবং স্ত্রী-সন্তানদের ক্ষতি করতে পারে।

সূত্র- নয়া দিগন্ত